ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা
কূটনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০১৮, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে বহনকারী অফিসিয়াল গাড়িতে শনিবার রাতে একদল সশস্ত্র যুবক হামলা চালিয়েছে। তবে ওই ঘটনায় রাষ্ট্রদূত, তার সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মী ও চালক কেউই আহত হননি। রোববার ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, শনিবার রাতে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বাসায় নৈশভোজে অংশ নেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এ হামলা হয়।
দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একদল সশস্ত্র লোক শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বহনকারী দূতাবাসের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। হামলাকারীদের অনেকেই মোটরসাইকেলে এসেছিলেন। রাষ্ট্রদূত ও তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত দল অক্ষত অবস্থায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তবে রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দলের দুটি গাড়ির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় দ্রুত সাড়া দেয়া ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দীন মীর যুগান্তরকে বলেন, এ ব্যাপারে বদিউল আলম জিডি করেছেন। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করা গেছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, জিডিতে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। তদন্ত করে অপরাধী শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে বদিউল আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতের বিদায় উপলক্ষে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলাম। পরে তিনি বেরিয়ে যাওয়ার সময় ৩০-৪০ জন সশস্ত্র যুবক উনার গাড়িতে হামলা চালায়। গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। শুধু তাই নয়, তারা আমার বাসভবনেও হামলা চালিয়েছে। দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেছে। আমার ভবনের জানালার গ্লাস ভাংচুর করেছে। ঘরে ঢুকতে না পারায় আমি প্রাণে বেঁচে গেছি।’ তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’
এক প্রশ্নের উত্তরে বদিউল আলম বলেন, ‘বিষয়টি একান্তই পারিবারিক এবং ঘরোয়া। একজনের বাসায় আরেকজনকে কি দাওয়াত দেয়া যাবে না? দাওয়াত দেয়াটা কি অন্যায়? মার্শা বার্নিকাট চলে যাচ্ছেন। তার সম্মানে এ নৈশভোজ। এটাকে গোপন বৈঠক বলে অভিহিত করা অন্যায়।’
তিনি বলেন, ‘খাওয়া-দাওয়া হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, রাত ১১টার দিকে বার্নিকাট বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় একদল লোক হামলা করে। হামলাকারীরা গাড়িটি আটকাতে চেয়েছিল, কিন্তু এটি দ্রুত বেরিয়ে যায়। পরে হামলাকারীরা গাড়ির পেছনে ধাওয়া করে ঢিল ছোড়ে। এরপর হামলাকারীরা আমার বাসার ফটক ভাংচুরের চেষ্টা চালায়।’ সুজন সম্পাদক জানান, হামলাকারীরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে না পেরে ইট-পাটকেল ছোড়ে, এতে বাসার জানালার কাচ ভেঙে যায়। ঘটনার পরপরই জরুরি হেল্পলাইন ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চেয়েছি। রোববার দুপুরে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করি। বদিউল আলমের বাসার অনুষ্ঠানে মার্শা বার্নিকাট ছাড়াও বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং তার স্ত্রী ড. হামিদা হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদসহ কয়েকজন অংশ নেন।
নৈশভোজে অংশ নেয়ার কথা স্বীকার করে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘এটি স্রেফ দাওয়াতের অনুষ্ঠান। আর কিছু না। এদেশে কি কেউ কারও বাসায় দাওয়াত খেতেও যেতে পারবে না? এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এক টেবিলে বসলে নানা আলোচনা হয়, আমরাও করেছি। এটা তো অন্যায় নয়।’