Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ব্যাংকে তীব্র তারল্য সংকট, ছাপানো টাকার ঋণ বন্ধ

পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজে আসছে না সরকারের নানামুখী উদ্যোগ

Icon

হামিদ বিশ্বাস

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংকে তীব্র তারল্য সংকট, ছাপানো টাকার ঋণ বন্ধ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ তেমন একটা কাজে আসছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে ডলার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা উত্তোলন, সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ প্রদান বন্ধ, সুদের হার বৃদ্ধি, ভুয়া ঋণ তদারকি ও খেলাপি ঋণ আদায়ে গুরুত্বারোপ ছাড়াও বিলাসী পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকে নগদ তারল্যের হাহাকার কমছে না। অনেক ব্যাংক নগদ টাকার চাপ সামলাতে ধার করে চলছে। এমনটি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র যুগান্তরকে জানায়, সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। গত আগস্ট মাসের পর থেকে সরকারকে টাকা ছাপিয়ে একটা টাকাও ঋণ দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক, যা তারল্য সংকটে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। যদিও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুরুর দুই মাসে মাত্র ১৯ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। যা পুরো ৭ মাসের হিসাব বলা যায়। এর আগে গত অর্থবছরে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া হয়।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে পণ্যমূল্য কমছে না। তার মানে হয় নীতি কাজ করছে না, নতুবা বাজারে যে পরিমাণ পণ্য দরকার সেই পরিমাণ উৎপাদন হচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানা গেছে, সরকার চলতি অর্থবছরে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে বাজার থেকে নগদ টাকা তুলে নিয়েছে। কিন্তু সেই পরিমাণ নতুন টাকা বাজারের জন্য ইস্যু করেনি। আবার পণ্যমূল্য বেশি হওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই পরিমাণ টাকার ব্যবস্থা করতে পারছে না। অনেকে ব্যাংকের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। এতে ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো টাকার হাহাকার মেটাতে উচ্চসুদে ধার করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, ভুয়া ও বেনামি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের ঋণ আদায় কমে গেছে। এজন্য ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায়ে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ঋণ আদায় বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে অধিকাংশ ব্যাংক। অন্তত ১২টি ব্যাংকের সিআরআর ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। নগদ টাকার হাহাকার কমাতে ঋণের সুদ হারের চেয়ে বেশি হারে আমানত সংগ্রহ করছে কয়েকটি ব্যাংক, যা ব্যাংক খাতের জন্য বিপজ্জনক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংক খাতের গড় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ শতাংশ দেখালেও অনাদায়ী ঋণ ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। কেননা খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা দেখালেও অবলোপন, আদালতে আটকা ঋণ এবং পুনঃতফশিল করা ঋণের পরিমাণ যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি প্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এত টাকা আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের তারল্য সংকটের অতীত রেকর্ড ভেঙেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, দেশে ডলার সংকট কাটেনি। তবুও নিত্যপণ্যের আমদানি স্বাভাবিক রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে ২৫ বিলিয়নের বেশি রিজার্ভ রয়েছে। আইএমএফ’র হিসাবে তা ২০ বিলিয়নের ওপরে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে তা কার্যকর হচ্ছে। এজন্য তারল্যে টান পড়েছে। তবে একটা সময় পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে সরকারি ট্রেজারি বিলবন্ডে বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। একই অর্থবছর সরকারি ট্রেজারি বিলবন্ডের ১ লাখ ৪৬৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিনিয়োগের ৭৭ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। মূলত সরকারের ঋণ চাহিদা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মেটাতে পারেনি। কারণ ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনার কারণে টাকা বাজার থেকে উঠে গেছে। তাই বিলবন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনে নিয়ে সরকারকে ঋণ দিয়েছে। গেল অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছে, তার পুরোটাই ছাপিয়ে দেওয়া হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম