স্থানীয় সরকার নির্বাচন
নৌকা প্রতীক থাকবে না আওয়ামী লীগের
আবদুল্লাহ আল মামুন ও হাসিবুল হাসান
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আসন্ন উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা থাকবে না। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এ কারণে উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রয়োজন হবে না আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।
নেতাকর্মীরা যার যার ইচ্ছেমতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবেন। উৎসবমুখর হবে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। এমনকি আগামীতে অনুষ্ঠেয় সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচনে দলের প্রতীক নৌকা না রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভায় উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান এবং মেয়র পদে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী সংসদের এ সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধানত সারা দেশে দলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার পক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার পর্বে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জাতীয় নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং উৎসবমুখর করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা নৌকা না দিয়ে উন্মুক্ত রাখার পক্ষে যুক্তি দেন। দলীয় নেতাদের এই প্রস্তাবে সম্মতি দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারের শুরুতে ২০১৫ সালে দেশে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়। তার আগে সব সময় স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন (উপজেলা পরিষদ) নির্দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে দলে বিভক্তি এবং বিভিন্ন স্থানে নৌকা ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুসারী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত সংঘাত-সহিংসতার বর্ণনা দেন দলের নেতারা। তারা তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকায় একটি বিশেষ বর্ধিত সভা করার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেন। নেতাদের এ মতামতের সঙ্গেও একমত পোষণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি সারা দেশে দলের মধ্যকার এই বিরোধ দ্রুত নিরসন করার জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশ দেন এবং কোথায় কোথায় সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করতে বলেন। সমস্যা সমাধানে সভায় দেওয়া নেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী শিগগির ঢাকায় (গণভবনে) বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নেতাদের মতামত জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কয়েকজন নেতা উপজেলাসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে নৌকা না রাখার বিষয়ে মত দেন এবং যুক্তি তুলে ধরেন। তাদের এই মতামত ও যুক্তির সঙ্গে একমত পোষণ করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
সভায় সংসদ নির্বাচনে নিজের পরাজয়ের কারণ তুলে ধরে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের অসহযোগিতার কারণে তিনি পরাজিত হয়েছেন। অন্য নেতারা দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় বিরোধের চিত্র তুলে ধরেন। তখন শেখ হাসিনা সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেন।
সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
তিনি জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে যে মনোমালিন্য হয়েছে তার রেশ এখনো রয়ে গেছে। এই বিরোধ দূর করতে দলের আট বিভাগের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঢাকায় ডেকে এনে তা সমাধানের জন্য বলা হয়েছে।