টিআইবির বক্তব্য জনমতের প্রতিফলন: ড. মঈন খান
জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী পালিত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘একপাক্ষিক ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ অ্যাখ্যা দিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি বলেছে, এই নির্বাচন ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। নির্বাচন ‘অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হয়নি। সংস্থাটির এমন বক্তব্য জনমতের প্রতিফলন বলে দাবি করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘শুধু টিআইবি কেন? দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম এমন প্রতিবেদন তুলে ধরেছে। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোও একই বক্তব্য দিয়েছে।’
শুক্রবার সকালে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিন সারা দেশে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, শীতবস্ত্রসহ গরিব ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। রাজধানীর নয়াপল্টনে ছাত্রদলের র্যালি করার কথা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি পায়নি। এর প্রতিবাদে কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে সংগঠটির নেতাকর্মীরা। দলের পক্ষ থেকে বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
মঈন খান বলেন, ‘জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী পালন করছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। আজকে সেই গণতন্ত্র মৃত। এটা শুধু আমাদের এবং বাংলাদেশের মানুষের কথা নয়। সারা বিশ্বে যারা গণতন্ত্রকামী মানুষ, দেশ এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, তারা সবাই এক বাক্যে একটি কথা বলেছেন, বাংলাদেশ আজকে একদলীয় শাসনে পরিণত হয়েছে। এখানে মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, মৌলিক অধিকার ও ভোটের অধিকার নেই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো লগি-বৈঠার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমাদের যেসব চলমান কর্মসূচি রয়েছে, তা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে অব্যাহত রাখব। এই প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব।’
দেশে উন্নয়নের নামে ‘তেভাগা আন্দোলন’ হয়েছে বলে মন্তব্য করে মঈন খান আরও বলেন, ‘একটি উন্নয়ন প্রকল্পে যদি ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, তার মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়, আর ১০ হাজার কোটি টাকা এই সরকারের আশীর্বাদপুষ্টরা ভাগাভাগি করে নেন। আর এক-তৃতীয়াংশ যারা বিদেশ থেকে প্রকল্প এনে দেন, তারা লোপাট করে নেন। আজকের সরকার দেশের অর্থনীতিকে লুটপাট করে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ, তিনি দেশকে পুনর্গঠন, অর্থনীতিকে উন্নত করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সূচনা করেছেন। আজকে সেটা ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। তিনি যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই গণতন্ত্রকে আবার মেরে ফেলা হয়েছে। সেটাকে পুনরুজ্জীবিত করার লড়াই চলছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা এই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারব। জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তার জন্মবার্ষিকীতে আমাদের আজকে প্রতিশ্রুতি হলো, যত দ্রুত সম্ভব লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণের সহায়তায় আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করব।’
টিআইবি প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘টিআইবি যা বলেছে, সেটা জনমতের প্রতিফলন। আমরা যা বলেছি, সেটাও জনমতের প্রতিফলন। ফলে আমাদের কথা যদি মিলে সেটা একজন আরেকজনকে পছন্দ করার জন্য নয়, সত্য বলার জন্য।’
জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য সেলিম রেজা হাবিব, খান রবিউল ইসলাম রবি, আমিনুল ইসলাম, ওলামা দলের শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ফখরুল ইসলাম রবিন, সরদার নূরুজ্জামান, ফরহাদ হোসেন, জহির উদ্দিন তুহিন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, মৎস্যজীবী দলের মো. আবদুর রহিম, ছাত্রদলের তানজিল হাসান আবু সালেহ আদনান, ওলামা দলের সুলতানা আহমেদ প্রমুখ। এছাড়া পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। বৃহস্পতিবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।