Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

কাটছে না গ্রেফতার আতঙ্ক ঢাকামুখী নেতাকর্মীরা

তফশিলের পর গ্রেফতার ৩৫৮৫ জনের বেশি-রিজভী

Icon

নূরে আলম জিকু 

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কাটছে না গ্রেফতার আতঙ্ক ঢাকামুখী নেতাকর্মীরা

তফশিল ঘোষণার পর দেশজুড়ে বইছে নির্বাচনি হাওয়া। পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সমমনা দলগুলো নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করে চলছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি।

একদফার আন্দোলন আরও জোরদার করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। তবে তৃণমূলের সক্রিয় নেতাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি গ্রেফতার এখনো চলছে। যে কারণে গ্রেফতার আতঙ্ক কাটছে না নেতাকর্মীদের। অনেকে গ্রামে থাকতে না পেরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ পরিস্থিতিতে শীর্ষ নেতাদের অনেকেই আত্মগোপনে থেকে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তাবায়নে জোর দিচ্ছেন। বেশ কয়েকজন রাজপথে সক্রিয়ও হয়েছেন। 

পরিস্থিতি বুঝে ‘অলআউট’ কর্মসূচি দিয়ে দাবি আদায়ের পরিকল্পনা বিএনপির। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। এদিকে আজ ভোর ৬টায় শেষ হচ্ছে ষষ্ঠ ধাপের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অরবোধ। সপ্তম ধাপে ফের রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর সরকার রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া কিছু করতে পারবে না। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাজে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে নির্বাচন কমিশন। তারা ভেবেছিলেন তফশিলের পর নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতারের মনোভাব থেকে সরে আসবে সরকার। কিন্তু তফশিলের আগে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, এখনো তাই হচ্ছে। এ থেকেই আরও স্পষ্ট ইসির আচরণও সরকারের মতোই। তারা আরওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ করছে। একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচনের একতরফা তফশিল ঘোষণার পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৫৮৫ জনের অধিক নেতাকর্মী। মোট মামলা ১১৫টি, আসামি ১৩ হাজার ৪৪০ জন।

গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। গ্রেফতার করে ভাঙচুর করা হচ্ছে বাড়িঘরে। একাত্তরের যুদ্ধকালীন সময়ের মতো দেশের প্রতিটি জনপদ, গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বন্দরে গ্রেফতার আতঙ্কের ভয়ার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। সরকার পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি হেলমেট বাহিনী নামিয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতাকর্মীদের বেছে বেছে তাদের বাড়িতে হেলমেট বাহিনী হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থিদের ধরে নির্যাতন করে পুলিশে দিচ্ছে। আবার আটক বাণিজ্য করছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ, সরকার একতরফা নির্বাচন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ‘ক্র্যাকডাউন’ চালাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে দিনরাত অভিযান চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের না পেলে পরিবারের নিকট-আত্মীয়দের গ্রেফতার করা হচ্ছে। নতুন ও পুরাতন মামলায় আসামি দেখানো হচ্ছে। গ্রেফতার ও হামলা থেকে বাঁচতে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র জীবনযাপন করছেন। গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষ সদস্যরা এলাকাছাড়া। দিন যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে গ্রেফতার ও মামলা আতঙ্ক। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান যুগান্তরকে বলেন, ‘এই আন্দোলন হচ্ছে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূলের মানুষের প্রাণের আন্দোলন। অন্যদিকে সব রাইফেল, বুলেট, টিয়ারগ্যাস, গ্রেনেড নিয়ে সরকারের মারমুখী প্রশাসন যাকে সহায়তা দিচ্ছে সরকারি দলের সন্ত্রাসী বাহিনী। এই সত্যের আলোকেই আজকের বিরোধী দলের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে বিশ্লেষণ করতে হবে। এবং সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আজকের আন্দোলনের প্রকৃত স্বরূপ উদ্ভাসিত হবে। কাজেই পূর্ণ ধৈর্য বজায় রেখে আমাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। এই নৈতিক শক্তির কাছে একদলীয় সরকার যথাসময়ে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হবে। এটা ইতিহাসের প্রমাণিত সত্য।’ 

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, সরকারবিরোধী দলের ওপর অমানবিকভাবে দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। গ্রেফতার ও হামলা করছে, সাজা দিচ্ছে। তারপরও নেতাকর্মীরা মনোবল হারায়নি। আত্মগোপনের মধ্যেও কাজ করছেন তারা। এখন অনেকেই প্রকাশ্যে এসে কর্মসূচি পালন করছে। প্রথম থেকেই বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের উৎসাহ দিচ্ছেন। যে যেখানে, যেভাবে পারে কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার বার্তাও দিয়েছেন। আন্দোলন চালিয়ে নিতে শীর্ষ নেতাদের কেউ আত্মগোপনে যাওয়া খারাপ কিছু নয়।

দলীয় সূত্র জানায়, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি চলমান থাকলেও সামনের দিনগুলোতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা আসবে। এখন মাঠের নেতাদের সাংগঠনিক শক্তির সক্ষমতা যাচাই করা হচ্ছে। আন্দোলন সফল করতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাদের সক্রিয় করতে জোর দিচ্ছে বিএনপি। আত্মগোপনে থাকা দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীসহ অনেকেই দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে গত ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচিতে মাঠে ছিলেন। সুসংগঠিতভাবে আন্দোলন জোরদার করার জন্য নানাভাবে কাজ করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। 

কয়েকটি জেলার তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা জানান, গ্রেফতার আতঙ্কের মধ্যেই কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করছেন তারা। জেলার ও থানা পর্যায়ের পদধারী শীর্ষ নেতারা কর্মসূচি বাস্তাবয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা কৌশলে এলাকা ও স্থান পরিবর্তন করে মিছিল ও পিকেটিং করছেন। আগে বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল বা রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ করলেও এখন দৃশ্যমান কার্যক্রম বেড়েছে। গ্রেফতার আতঙ্ক কেটে গেলে কর্মসূচি পালনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি আরও বাড়বে। 

বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু যুগান্তরকে বলেন, আন্দোলনের কৌশল হিসাবেই বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন দলের নেতাকর্মীরা। সরকারের এমন দমন-নিপীড়নের মধ্যেও সবাই সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে নিচ্ছেন। শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। দল যখন যে কর্মসূচি দিচ্ছে নেতারা তা নানা কৌশলে বাস্তবায়ন করছেন। চলমান আন্দোলনে ঢাকাসহ সারা দেশে শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। আগামী দিনে রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি আরও বাড়বে বলেও আশা করেন তিনি। 

একই কর্মসূচি সমমনা ও জামায়াতেরও : রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা দল, এলডিপি, গণফোরাম (মন্টু), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, লেবার পার্টিসহ বিএনপির সমমনা দলগুলো। যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও একই কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, রোববার থেকে সারা দেশে টানা ৪৮ ঘণ্টা শান্তিপূর্ণ সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে। ঘোষিত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করে আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম