ঢাবির বিশেষ সমাবর্তনে প্রধানমন্ত্রী
জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চাই
বঙ্গবন্ধুকে ঢাবির ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান * আমরাও চাঁদে যাব * গবেষণায় যেন বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চাই](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2023/10/30/image-734313-1698611172.jpg)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তার সরকার বৈশ্বিক মান বজায় রেখে জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি একটা কথাই বলতে চাই-সারা বিশ্বে জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নত দেশ হিসাবে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই। রোববার ঢাবির বিশেষ সমাবর্তনে ‘সমাবর্তন বক্তা’র বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবর্তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক মরণোত্তর ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি দেওয়া হয়।
দুপুরে ঢাবি খেলার মাঠে আয়োজিত সমাবর্তনে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমারও বিশ্ববিদ্যালয়। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ববোধ করি। আমি চাই-গবেষণা যেন হয়। গবেষণার ওপর যেন বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তিনি বলেন, কৃষি গবেষণায় আমরা অনেক সাফল্য অর্জন করেছি। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। বিজ্ঞান গবেষণায়ও আমরা এগোচ্ছি। আমরা একটা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। দ্বিতীয়টাও করব। এরপর আমাদের চাঁদে যেতে হবে। এজন্য ইতোম্যধ্যে লালমনিরহাটের এভিয়েশন স্পেস ইউনিভার্সিটি করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষায়িতভাবে তৈরি করা হচ্ছে। যাতে করে সব ধরনের শিক্ষা ও গবেষণা আমরা করতে পারি।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশকে জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত করতে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ যেসব শিক্ষার্থীর বয়স ২০ বছর, তারাও উপলব্ধি করতে পারবে ২০ বছর আগের বাংলাদেশ কেমন ছিল। সেখানে ক্ষধা ছিল, দারিদ্র্য ছিল। দেশের চলমান উন্নয়ন যাতে কখনোই বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে তো আমরা প্রযুক্তি শিক্ষা, কম্পিউটার শিক্ষা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ করার পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। বর্তমানে আমরা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত করছি। শিক্ষার্থীদের কাছে আমার এটাই চাওয়া থাকবে-আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান সবকিছুর মধ্য দিয়ে এ দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আমার যতটুকু করার আমি করে যাচ্ছি। এরপর যেন বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা থেমে না যায়। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই ছয় দফা আন্দোলন এবং সত্তরের নির্বাচন। অনেকেই তখন বঙ্গবন্ধুকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, বাঙালির পক্ষে কে কথা বলবে, সেটা নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। তার প্রতিটি কর্মকাণ্ডের মধ্যেই ছিল এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, স্বাতন্ত্র্যবোধ ও উন্নতি। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তখন তার সঙ্গে অনেক ছাত্রনেতা বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তবে অনেকে মুচলেকা ও জরিমানা দিয়ে ছাত্রত্ব ফেরালেও বঙ্গবন্ধু তা করেননি। তিনি বলেছিলেন, মুচলেকা ও জরিমানা দেওয়া মানেই অন্যায় অপবাদ মেনে নেওয়া। বহিষ্কারের পর আমার দাদা তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) বলেছিলেন বিলেতে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়তে। কিন্তু তিনি এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বিলেতে পড়তে যাননি। আইন বিভাগের ছাত্র হয়েও এ জাতির জন্য তিনি আইন পড়া শেষ করতে পারেননি। মাঝেমধ্যে তিনি (বঙ্গবন্ধু) ঠাট্টা করে বলতেন, পাকিস্তানিরা তাঁর বিরুদ্ধে এত মামলা দিয়েছিল যে, সেই মামলা মোকাবিলা করতে করতেই তিনি সব আইন শিখে গিয়েছিলেন। ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়ায় এবং এ বছর ডক্টর অব লজ ডিগ্রি দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ধন্যবাদ জানান। বাবার মূল্যায়ন করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা দেশের মানুষকেই বেশি ভালোবেসেছেন। দেশের মানুষের জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা দিয়েই তিনি তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা গবেষণার দিকে বিশেষ নজর দেবেন। তাহলে এ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো আর অত বেশি লেখাপড়া করিনি। মাস্টার্স ডিগ্রিটাও শেষ করতে পারিনি। তাই এ বিশ্ববিদ্যালয় এসে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ আমার জন্য সৌভাগ্যের ও অনেক বড় পাওয়া। মাস্টার্স শেষ করতে না পারার আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আবার যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারতাম, মাস্টার্স ডিগ্রিটা শেষ করতে পারতাম, অনেক খুশি হতাম। পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক ডিগ্রি পেয়েছি। ওতে মন ভরে না। নিজের ইউনিভার্সিটির পেলাম না। অবশ্য আমাকে একটা অনারারি ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লেখাপড়া করতে পারলে তো আরও ভালো হতো।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদানের ঘোষণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তিনি ডিগ্রি তুলে দেন। প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ডিগ্রি প্রদানের সাইটেশন পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। ঢাবি রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, আমন্ত্রিত দেশের বিশিষ্ট নাগরিক এবং সমাবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলকে সম্পূর্ণরূপে চালু করুন : লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল পুরোপুরি চালু করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার ইউএনওপিএস (প্রকল্প পরিষেবার জন্য জাতিসংঘের অফিস) আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্ড এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জর্জ মরিয়েরা দ্য সিলভা রোববার গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি একথা বলেন।
লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য ঝুঁকি থেকে উদ্ভূত নেতিবাচক পরিণতি মোকাবিলা করার জন্য দরিদ্র দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া। ধনী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পালন না করায় প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ধনী দেশগুলো থেকে এখনো ক্ষয়ক্ষতির তহবিলের জন্য পর্যাপ্ত সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার বাংলাদেশকে একটি জলবায়ু সহনশীল দেশ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে নিজস্ব সম্পদ দিয়ে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।