বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি

উদ্বেগ জানিয়ে ইইউ পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাশ

 যুগান্তর ডেস্ক 
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে উত্থাপিত একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সাত পার্লামেন্টারি গ্রুপের উত্থাপিত পাশ করা প্রস্তাবটি পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিবৃতিতে জানা গেছে। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেনসেস (জিএসপি)-এর অংশ হিসাবে বাংলাদেশের ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ (ইবিএ) সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যৌথ প্রস্তাব সরকার আমলে নিয়েছে। সরকার একে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং চক্রান্ত হিসাবে বিবেচনা করছে।

ইইউ পার্লামেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ (ইবিএ) সুবিধা আরও বর্ধিত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এমন অবস্থায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা বলেন, অধিকারের সঙ্গে হওয়া এ বিষয়টি দুঃখজনকভাবে একটি পশ্চাদগামী পদক্ষেপ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইবিএ সুবিধা অব্যাহত রাখা উচিত কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যরা।

বিবৃতিতে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যরা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে সরকারের প্রতি এনজিও, মানবাধিকার সংস্থা এবং কর্মী, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানান। এতে বলা হয়, বাংলাদেশকে অবশ্যই তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, বিশেষ করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো মেনে চলতে হবে। সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো যেন বিদেশি অনুদান গ্রহণ করতে পারে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিবৃতিতে বিশেষভাবে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর দুই নেতা আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায়ের নিন্দা জানানো হয়। পাশাপাশি অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারকে তারা অনুরোধ জানিয়েছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যৌথ প্রস্তাব আমলে নেওয়ার ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, একদিক থেকে এটাকে আমলে নেব, কারণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। এ রকম কোনো কার্যক্রম হলে আমরা চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকতে পারি না। সেই আগ্রহটুকু থেকে, সেই হস্তক্ষেপ থেকে; আমলে অবশ্যই নেব।

একই ইস্যুতে অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন আমলে না নেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা যে আলোচনা করেছেন, এর লজিস্টিক কোনো অথরিটি নেই। ইট ইজ নট অ্যা মেন্ডাটরি। তিনি বলেন, উনাদের ৭৫৩ জন সদস্য, অনেকেই অনেক মন্তব্য করেন। তবে কেউ কেউ আবার ইনিশিয়েটিভ নেয় বক্তব্য দেওয়ানোর জন্য। প্ররোচনাও দেয়। দেশে আপনারা কথাবার্তা বলেন বলেই তারা বড় মজা পায়। আপনারা যদি ইগনোর করতেন, তাহলে তারা বক্তব্য দিতেন না।

বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক যৌথ প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, আটজন বক্তব্য দিয়েছেন। তার মধ্যে দুজনের কথা পরিষ্কারভাবে এসেছিল যে, তারা এটার পক্ষে নয়।

একজন এ রকমও বলেছেন, এ ধরনের আচরণ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে নতুন কলোনিউজমকে উসকে দিতে পারে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর এ রকম আচরণ ঠিক নয়। আরেকজন বক্তা বলেছেন, এ ধরনের উদ্যোগ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে নিলে এটা ব্যাকফায়ার করতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওনাদের একাধিক বক্তা যে লাইনে বলেছেন, আশা করি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অন্য এমপিরা এ বিষয়ে সামনে উদ্বুদ্ধ হবেন না। আমরা যেটা মনে করি, ইইউর সঙ্গে আমাদের একটা পরিপক্ব সম্পর্ক রয়েছে। সেই পরিপক্ব সম্পর্কের জায়গা থেকে আমাদের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে আশা করি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট হস্তক্ষেপ করবে না।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচার বা চক্রান্ত হলে আমরা অবশ্যই আমলে নেব।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন