Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

অপহরণের ১৮ ঘণ্টা পর মুক্ত এনবিআর’র নারী যুগ্মকমিশনার

মুক্তিপণ দাবিতে নির্যাতন

দেড় লাখ টাকা আদায়ের পরও ভেঙে দেওয়া হয় বাঁ পা; মাথা ও চোখে করা হয় মারাত্মক আঘাত

Icon

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মুক্তিপণ দাবিতে নির্যাতন

প্রতীকী ছবি

পঞ্চাশ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক নারী যুগ্মকমিশনারকে অপহরণ করে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর তিনি কৌশলে মুক্তি পান। শুক্রবার রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। পরদিন শনিবার এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, নির্যাতনে তার বাঁ পা ভেঙে যায়। চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাথা ফেটে যায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরও মন গলেনি অপরাধীচক্রের। মুক্তিপণের পুরো টাকা আদায়ের জন্য চলে শারীরিক নির্যাতন। দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। ভাগ্যগুণে বেঁচে যান তিনি। ভুক্তভোগী ওই যুগ্মকমিশনারের (ট্যাক্স) নাম মাসুমা খাতুন। তিনি এনবিআর-এর কর অঞ্চল-২-এ কর্মরত। তিনি এখন রাজধানীর গ্রিন রোডে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আরও জানা যায়, ১৮ আগস্ট রাত ৮টার দিকে মাসুমা খাতুন বড় মগবাজার থেকে নিজের গাড়িতে করে সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় ফিরছিলেন। সোয়া ৮টার দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় গাড়িটি পৌঁছালে একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। চালক গাড়িটি থামালে অপহরণকারীচক্রের সদস্যরা জোরপূর্বক গাড়িচালকের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নেয়। এরপর তারা মাসুমা খাতুন ও গাড়িচালক আনোয়ারকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আনোয়ারকে গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে মাসুমাকে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় তারা। ওই রাতে সবুজবাগের একটি বাসার গ্যারেজে গাড়িটি ঢোকানো হয়। ওই গাড়িতেই আটকে রেখে তার ওপর রাতভর চলে নির্যাতন।

নির্যাতনের সময় মাসুমা খাতুনের চিৎকার যাতে বাইরে না যায়, সেজন্য তার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। পরে পানি চাইলে স্কচটেপ খুলে দেওয়া হয়। এভাবে পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন। এ সময় তার কাছে থাকা দেড় লাখ টাকা ও একটি দামি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা। কিন্তু এই টাকা নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি। মাসুমা খাতুনের স্বামী ইলিয়াস খানের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ১৮ আগস্ট রাতে স্ত্রীর সন্ধান না পেয়ে রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ১৯ আগস্ট বেলা ২টা পর্যন্ত তিনি স্ত্রীর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না। ২টার পর দুর্বৃত্তরা তাদের চক্রের দুই-তিনজনকে গাড়ির পাহারায় রেখে অন্যরা দুপুরের খাবার কিনতে যান। এই সুযোগে মাসুমা খাতুন গাড়ি থেকে নেমে বাঁচাও-বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। এরপর মাসুমা খাতুনের স্বামী পুরো ঘটনা পুলিশকে জানায়।

পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে শুরু করে। তদন্তে জানা যায়, মাসুমার সাবেক গাড়িচালক মো. মাসুদ একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য। মাসুদই পরিকল্পনা করে তাদের বাহিনীর সদস্যদের তথ্য দেয়, মাসুমা খাতুনকে অপহরণ করা গেলে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা সম্ভব। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগীদের নিয়ে মাসুদ এ ঘটনা ঘটায়।

জানা যায়, এরই মধ্যে মাসুদের তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন সাইফুল ইসলাম, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে সাব্বির ও ইয়াছিন আরাফাত রাজু। তবে মাসুদকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া তার অন্য সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে শান্ত, পনু, শাহীনসহ আরও ৫-৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। এদিকে একদিনের রিমান্ড শেষে গ্রেফতার তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া তিনজনই পুলিশের রিমান্ডে অপহরণের দায় স্বীকার করেছে। মাসুদসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় পুলিশ। ইতোমধ্যে মাসুদের বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে।

রমনা মডেল থানার ওসি আবুল হাসান যুগান্তরকে জানান, ভিকটিমকে উদ্ধার এবং তিন আসামি গ্রেফতারের পর তাদের বিরুদ্ধে ১৯ আগস্ট একটি মামলা হয়। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে এসআই সহিদুল ওসমান মাসুমকে।

গ্রেফতার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ওসি আবুল হাসান বলেন, মাসুদ তার সহযোগীদের জানিয়েছিল, যুগ্মকমিশনার মাসুমাকে অপহরণ করতে পারলেই মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা যাবে। টাকার লোভেই এই অপহরণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। চক্রে একাধিক পেশাদার সদস্য রয়েছে। ভিকটিম এবং গ্রেফতার ব্যক্তিদের বর্ণনা অনুযায়ী মাসুদের অভয়বের একটি চিত্র তৈরি করেছি। তার মুখে দাড়ি আছে। আমরা তার বাসা খুঁজে বের করেছি। দ্রুতই তাকে ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা যাবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ভিকটিম খুবই অসুস্থ। এ কারণে তার কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে পারিনি। তিনি সুস্থ হলে মাসুদ সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম