Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিতর্কের শঙ্কায় অবস্থান থেকে সরল ইসি

ডিসি-এসপি দিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাছাই

Icon

কাজী জেবেল

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিতর্কের শঙ্কায় অবস্থান থেকে সরল ইসি

ফাইল ছবি

ডিসি-এসপিদের দিয়ে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাছাই ও প্যানেল তৈরির উদ্যোগ থেকে সরে এলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার নির্বাচন কমিশনের ২২তম সভায় ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং) প্যানেল প্রস্তুত ও নিয়োগ নীতিমালা’র খসড়া অনুমোদনের জন্য তোলা হয়। ওই নীতিমালা পাশ করতে রাজি হননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও একাধিক নির্বাচন কমিশনার।

নীতিমালাটি কার্যকর হলে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। এমন শঙ্কা এবং এটি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও)’র পরিপন্থি আখ্যায়িত করে কমিশন সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ফলে ডিসির নেতৃত্বে ছয়-সাত সদস্যের এবং ইউএনও’র নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি দিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল তৈরির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা হোঁচট খেল। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বৈঠকে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন এবং নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ বর্ষপুঞ্জি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে এজেন্ডার বাইরে প্রবাসীদের ভোটার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে অবস্থান করা বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভোটার করতে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।

কমিশন বৈঠকের পর সিদ্ধান্তের কথা জানান নির্বাচন কমিমন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, প্রবাসী নাগরিকদের এনআইডি করার পাইলট প্রকল্প সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলছে।

এর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও দুটি দেশ যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে প্রবাসীদের ভোটার করার কাজ শুরুর অনুরোধ জানিয়েছে। সে কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কবে এ কার্যক্রম শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই দেশে তথ্য সংগ্রহকারী টিম না যাওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। তবে আশা করি, আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে করতে পারব।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাছাইয়ে মাঠ পর্যায়ে কমিটি হচ্ছে না : জানা গেছে, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাছাই ও প্যানেল তৈরিতে এবার ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠনের বিধান রেখে ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও নিয়োগ নীতিমালা’র খসড়া তৈরি করে ইসি সচিবালয়।

গত বৃহস্পতিবার ইসির একটি কমিটি ওই নীতিমালা অনুমোদনও দেয়। গতকাল কমিশন সভায় ওই নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হয়। কমিশন সভায় এ নীতিমালা নিয়ে আপত্তি তোলেন একজন নির্বাচন কমিশনার। সভায় তিনি উল্লেখ করেন, এ নীতিমালা আরপিও পরিপন্থি। আরপিও’র ৯ ধারায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাছাই ও নিয়োগের বিধান স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।

সেখানে বলা আছে, তফশিল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা লিখিত নোটিশ দিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ, প্যানেল তৈরি, নিয়োগসহ অন্যান্য কার্যক্রম করবেন।

অথচ নীতিমালায় তফশিল ঘোষণার আগেই কমিটির মাধ্যমে যে প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাছাইয়ের কথা বলা আছে তা নিয়ে আইনি প্রশ্ন উঠবে এবং নির্বাচন কমিশনও বিতর্কিত হবে।

এ নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, এ নীতিমালা কার্যকর করা হলে কমিশনের ভাবমূর্তি নিয়ে বিতর্ক হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। যদিও ওই বৈঠকে নীতিমালা অনুমোদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বৈঠকের এক পর্যায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচন কমিশনারদের মতামতের ভিত্তিতে ওই নীতিমালা আপাতত অনুমোদন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে বিদ্যমান নিয়মই কার্যকর থাকবে।

এ বিষয়ে কমিশন সভার পর ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভোটগ্রহণ প্যানেল প্রস্তুতির বিষয়ে বৈঠকে বলা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে অনুমোদন দেওয়া হবে। তফশিল ঘোষণার পর এ কাজ শুরু হবে। তাই পরে উত্থাপিত হবে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হলফনামা বাধ্যতামূলক : সভা সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের হলফনামা দেওয়া বাধ্যতামূলক করে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তবে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদের প্রার্থীদের হলফনামা দিতে হবে। এছাড়া খসড়া সংশোধনীতে নির্বাচনে কোনো পদে একাধিক প্রার্থী সমানসংখ্যক ভোট পেলে তাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে একই পদে একাধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে সেখানে পুনরায় ভোটগ্রহণের বিধান রয়েছে।

সভায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধিমালা সংশোধনীও অনুমোদন দেওয়া হয়। এ সংশোধনীতে অফলাইন ও অনলাইন দুই পদ্ধতিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীকের ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়েছে। সম্প্রতি নিবন্ধন পাওয়া বিএনএম ও বিএসপির দলীয় প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে ইসির : সভায় ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ খসড়ায় ইসির সুবিধা ও প্রাধিকারের বিষয়ে বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ ও প্রযোজ্য আইনে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকরা যেসব ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, অনুরূপ ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররাও পাবেন।’

ভ্রমণভাতার ক্ষেত্রেও একই বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, এ আইন পাশ হলে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১’; ‘বাংলাদেশে সুপ্রিমকোর্টের বিচারক (ভ্রমণ ভাতা) আইন, ২০২১’ এবং ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের বিচারকরা (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৩’ এই তিনটি আইনে বিচারপতিরা পেনশনসহ যেসব সুবিধা পান, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররাও সেগুলো পাবেন।

যদিও বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিইসি ও ইসির বিদ্যমান সুবিধাদি একই থাকবে। সিইসি আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির সমান সুযোগ-সুবিধাই পাবেন; আর কমিশনাররা পাবেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমান সুযোগ-সুবিধা। তিনি বলেন, বৈঠকে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ক্যালেন্ডার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হবে। নির্বাচন পর্যন্ত ৯ লাখের বেশি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম