১৪ দল ছাড়াও একাধিক ফ্রন্ট গঠন
সমমনাদের নিয়ে মাঠে থাকবে আ.লীগ
৬ আগস্ট গণভবনের বর্ধিত সভায় দেওয়া হবে বার্তা
আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বড় ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ১৪ দল ছাড়াও সমমনাদের নিয়ে একাধিক ফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচন পর্যন্ত যুগপৎ কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন শাসক দলের নীতিনির্ধারকরা।
বুধবার গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের বৈঠকে নতুন জোট মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত হয়। শিগগির নতুন ও পুরোনো কয়েকটি রাজনৈতিক দল মিলিয়ে একটি এবং ইসলামিক দলগুলোকে নিয়ে আরও একটি ফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করতে পারে। তারা বিএনপিকে মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের সমর্থনে রাজপথে কর্মসূচি পালন করবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বলেছেন, আমাদের নির্বাচন হবে আমাদের নিয়মে, সংবিধানে যেভাবে লেখা আছে। এর বাইরে কারও চক্রান্তমূলক অভিলাষ বাস্তবায়ন হতে দেব না।
এ সময় তিনি বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন মোকাবিলার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ৩০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা ও ২ আগস্ট রংপুরে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তবে রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন- গণভবনের বর্ধিত সভার তারিখ পরিবর্তন করে ৬ আগস্ট করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় ১৪ দল দলগতভাবে রাজপথে কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। আমরা ১৪ দলকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করব। সমমনাদের নিয়ে নতুন ফ্রন্ট গঠন করার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা যুগান্তরকে বলেন, শুধু ঢাকাতেই নয়, আমরা ১৪ দল জেলা পর্যায়েও যুগপৎ কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করছি। শিগগির রাজধানীতে সমাবেশ-গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপর জেলা পর্যায়ের কর্মসূচি পালন করা হবে।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার যুগান্তরকে বলেন, আমরা দলগতভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কর্মসূচি পালন করব। সেই ধরনের আলোচনা হয়েছে।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া যুগান্তরকে বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সব কর্মসূচিতে একসঙ্গে থাকতে চাই।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির পাশাপাশি ১৪ দলের কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে। ১৪ দল এবং সমমনা নতুন দুই ফ্রন্টকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় ও জেলা শহরে জোটগত কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। বিএনপির কর্মসূচির ধরন বুঝে কর্মসূচি দেবে ১৪ দল ও নতুন রাজনৈতিক ফ্রন্ট। বিএনপির সহিংস রাজনীতি ও একদফার আন্দোলনের প্রতিবাদে আজ শনিবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে নতুন নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) সমাবেশ করার কথা রয়েছে।
গণভবনে ৬ আগস্ট অনুষ্ঠেয় বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় সাংগঠনিক জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই সভায় নির্বাচন ও বিএনপির একদফার আন্দোলনকে সামনে রেখে দলীয় নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে দলটির উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগের সব সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়ররাও বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকবেন। সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এই সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। বর্ধিত সভায় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত থাকার জন্য জরুরি সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, ৬ আগস্ট অনুষ্ঠেয় গণভবনের সভায় ঢাকাসহ জেলায় জেলায় সরকার পতনে বিএনপি যে একদফা আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে, তা রুখে দিতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একই সঙ্গে এই সভায় বার্তা দেওয়া হবে আগামীতে ১৪ দলসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎভাবে কর্মসূচি পালনের। সংসদ নির্বাচন যেহেতু আসন্ন তাই চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনাও থাকবে এই সভায়। বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চাইলে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা দেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলীয় সূত্র আরও জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রংপুরে ২ আগস্ট জনসভা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার সারা দেশে জনসংযোগ কর্মসূচি শুরু করছেন। এই কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলার পাশাপাশি নির্বাচনি প্রচারণা। সংসদ নির্বাচনের আগে সারা দেশ ঘুরে শেখ হাসিনা তার তিন মেয়াদের সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি প্রচার করতে চান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য যুগান্তরকে জানান, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, মওলানা ভাসানীর দৌহিত্র পরশ ভাসানীর নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল ন্যাপ, নতুন নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনসহ (বিএনএম) কয়েকটি রাজনৈতিক দল মিলে নতুন রাজনৈতিক ফ্রন্ট হতে পারে। এছাড়া মিসবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটকে আরও সক্রিয় এবং সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট, নতুন নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এই জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে অথবা আরও একটি রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠন করা হতে পারে। এসব রাজনৈতিক ফ্রন্ট বিএনপির একদফা আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে মাঠে থাকবে।
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিসবাহুর রহমান চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমরা মনে করি দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমরা সরকার ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি। আমাদের জোটকে আরও শক্তিশালী করে আগামী দিনগুলোতে উন্নয়নের ধারার রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই লড়াই চলবে।