প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা
তথ্য ফাঁসে বিপদে পড়তে পারেন যে কেউ

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতীকী ছবি
সরকারি ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ত্রুটির কারণে ফাঁস হয়েছে নাগরিকদের নাম, জন্ম তারিখ, ই-মেইল এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের মতো সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য। দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান বিটক্র্যাক সাইবার সিকিউরিটির গবেষক ভিক্টর মারকোপাওলোস এমনটাই দাবি করেছেন।
সার্টের নির্দেশনা না মানা এবং টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে এমনটা ঘটেছে বলে জানিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, হ্যাক নয়, সিস্টেম দুর্বলতার কারণে একটি সরকারি ওয়েবসাইটে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য উন্মোচন হয়েছে। দেশের নাগরিকদের তথ্য এভাবে অবাধে ছড়িয়ে পড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা।
ইন্টারনেট পলিসি প্রণয়ন, সাইবার নিরাপত্তা, ইন্টারনেট গভর্নেন্সসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন সুমন আহমেদ সাবির। তিনি বলেন, জনসাধারণ যেকোন ডিজিটাল সেবা পেতে পরিচয়পত্র ব্যবহার করে থাকেন। এই ডেটা ফাঁস হওয়ায় এখন আমার আইডি কার্ড ব্যবহার করে যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে। এর মাধ্যমে আমার ক্রেডিট কার্ড থেকে ভার্চুয়ালি টাকা চুরি করতে পারে যে কোনো হ্যাকার। তিনি বলেন, সাধারণ নাগরিকের এসব তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ায় কে কখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেউ জানে না। একজন নাগরিকের তথ্য ফাঁসের কারণে তার জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। শিকার হতে পারেন ব্ল্যাকমেইলের। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকেও কেউ অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে। তার ব্যবসা-বাণিজ্যের নথিপত্র হাতিয়ে নিতে পারে, দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ পারিবারিকভাবে অশান্তির সৃষ্টি করতে পারে, জায়গা জমি কাগজপত্র হাতিয়ে নিতে পারে।
তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, এসব তথ্য উন্মুক্ত হওয়ায় যে কেউ বিপদে পড়তে পারেন। অবশ্যই এটি চরম ঝুঁকির ব্যাপার। কারণ, এটি আমাদের সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য। এই তথ্য বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন ধরুন, আমি ডার্ক ওয়েব থেকে একটি অস্ত্র বা ড্রাগস কিনতে চাই। সেক্ষেত্রে আমার একটি বিটকয়েনের আইডি লাগবে সে আইডিটা আমি আপনার পরিচয় পত্র ব্যবহার করলাম। আপনার আইডি কার্ড ব্যবহার করে আমি অস্ত্র কিনলাম অথচ আপনি কিছু জানেনই না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে আপনাকে ধরবে।
বাংলাদেশ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, বাংলাদেশে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি প্রত্যেক নাগরিককে সরকারের দেওয়া প্রতিটি পরিচয়পত্রই অনন্য (ইউনিক)। এই পরিচয়পত্র দিয়ে নাগরিকরা ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, জমি কেনাবেচা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং অন্যান্য পরিষেবাগুলো পেয়ে থাকেন। এখন যখন এই পরিচয়পত্র উন্মুক্ত হয়ে যায় তাহলে নাগরিকের নিরাপত্তা কোথায়? যে কেউ চাইলেই উন্মুক্ত সেই পরিচয়পত্র কাজে লাগিয়ে অবৈধ যে কোনো কাজ করতে পারবে। আপনার যে কোনো ক্ষতি করতে পারবে। আপনার পরিচয় পত্র ব্যবহার করে কোন হোটেলে গিয়ে থাকল। সেখানে একজনকে কেউ হত্যা করে চলে গেল। যেহেতু হোটেল রিজার্ভেশনে আপনার এনআইডি দেওয়া সেক্ষেত্রে পুলিশ কিন্তু আপনাকেই গ্রেফতার করবে। এই ধরনের তথ্য ফাঁস হলে মানুষ যে কেবল ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয়। বরং এসব ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এছাড়াও সরকারি ওয়েবসাইট বিদেশি কোম্পানি দিয়ে নির্মাণ করালে তাদের কাছে খুব সহজে আমাদের দেশের ডেটা চলে যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে বিদেশি ওই কোম্পানি আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী, সুতরাং তার কাছে আমাদের তথ্য থেকে যাওয়াটা অবশ্যই বড় রকমের আশঙ্কার জায়গা তৈরি করে।