Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বাজার তদারকিতে শুধুই হাঁকডাক

একাধিক সংস্থা থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই

Icon

ইয়াসিন রহমান

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একাধিক সংস্থা থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাট-বাজারে সব ধরনের পণ্য বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজিতে প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ঠকাচ্ছে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে নাজেহাল করা হচ্ছে। আবার চাল নিয়ে করা হচ্ছে চালবাজি। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজি, আদা-রসুন, মাছ-মাংস, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে জিম্মি করা হচ্ছে। এমনকি ধর্মীয় উৎসবের আগে নির্দিষ্ট পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। বছরের পর বছর এমন অবস্থা চললেও সরকারের একাধিক সংস্থা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। শুধু হাঁকডাকের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছে।

এদিকে গত মার্চে খামার পর্যায়ে ১৩০ ব্রয়লার মুরগি খুচরা বাজারে ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রোজার ঈদে প্রতিকেজি গরুর মাংসের দাম কেজিতে ১৫০-২০০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হয়েছে। এখনো একই দামে বিক্রি হচ্ছে। ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ বাজারে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। আমদানি পর্যায়ে ১৩০ টাকার আদা খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ৪০০ টাকার ওপরে বিক্রি করা হয়েছে। কুরবানির ঈদের আগে ৩৫০ টাকায় আমদানি করা জিরা খুচরা বাজারে ভোক্তার হাজার টাকার ওপরে কিনতে হয়েছে। সম্প্রতি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ১০০০ টাকায় ঠেকেছিল। পাশাপাশি চিনির দাম বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে হু হু করে বাড়ানো হচ্ছে। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণ করা হলেও সেই দর কোম্পানিগুলো মানছে না।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া মূল্যে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করছেন না। সরকারি সংস্থাগুলো পণ্যের যে মূল্য প্রকাশ করে তার সঙ্গেও বাজারে মিল নেই। চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যেও রয়েছে গরমিল। পণ্যমূল্যের তালিকা প্রতিটি বাজারে প্রতিদিন হালনাগাদ করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। কেনাবেচায় লিখিত রসিদ থাকার কথা থাকলেও তার হদিস মিলছে না। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী আমদানি পণ্যের এলসি খোলা বা দেশে আনার বিষয়টিতেও নেই যথাযথভাবে তদারকি। বাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে নেই সমন্বয়। এসব মিলে বাজার ব্যবস্থাপনায় চলছে বিশৃঙ্খলা। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভোক্তাদের। পণ্য কিনতে হচ্ছে চড়া দামে।

সূত্র জানায়, এসব পরিস্থিতি থেকে ভোক্তাকে রক্ষা করতে সরকারের একাধিক বাজার তদারকি সংস্থা কাজ করছে। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি সেল, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কৃষি মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বিএসটিআই, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, র‌্যাবসহ সরকারের অন্যসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। এছাড়া এসব সংস্থা নিজস্ব আইনে বাজার তদারকি করছে। তারপরও বাজারে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে বছরের পর বছর ভোক্তারা ঠকছেন। সংস্থাগুলো জানে কে বা কারা পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি করছে। একাধিক বার তারা সেটা চিহ্নিত করেছে। কিন্তু অসাধুদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

দীর্ঘদিন সরকারের একটি সংস্থায় বাজার তদারকিতে কাজ করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক ম্যাজিস্ট্রেট যুগান্তরকে বলেন, পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পণ্যের সঠিক চাহিদা জানতে হবে। সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। তা না হলে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে দাম বাড়বে। ব্যবসায়ীরা লাভ করবে, তবে ডাকাতি করতে পারবে না। আমাদের দেশে সুযোগ পেলেই ডাকাতি করে ভোক্তাকে নাজেহাল করে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, অধিদপ্তর তার সক্ষমতা অনুযায়ী বাজারে তদারকি অভিযান পরিচালনা করছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দফায় দফায় সভা করছেন। ব্যবসায়ীদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। কোন অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাজারে দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (বাজার সংযোগ ১) প্রণব কুমার সাহা যুগান্তরকে বলেন, অধিদপ্তর থেকে পণ্যের যৌক্তিক মূল্য বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। সেই দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কি না তা দেখতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ টিম নিয়ে বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি পণ্য বিপণন ব্যবস্থায় কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে তা রোধ করা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে কৃষি বিপণন আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার বিএসটিআই সূত্র জানায়, পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণসহ বাজারে সঠিক পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে কি না তা দেখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সঙ্গে ভেজাল খাদ্য রোধে মনিটরিং করা হচ্ছে। বিএসটিআই অনুমোদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কখনো জরিমানার সঙ্গে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম