দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
ফের আলোচনায় ‘সংলাপ’
হাবিবুর রহমান খান ও হাসিবুল হাসান
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে অনড় অবস্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। কেউ ছাড় দিতে রাজি নয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ‘সংলাপ’র বিকল্প নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সংলাপ ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমুর ইতিবাচক বক্তব্যে রাজনীতিতে নতুন মাত্রা পায়। গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধির মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে-তার এমন বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় সব মহল। সরকারের প্রভাবশালী এক মন্ত্রীও সংলাপ নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের আলোচনায় আসে সংলাপ। শিগগিরই তারা এক টেবিলে বসবেন বলে অনেকেই আশবাদী হয়ে উঠেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমু তার আগের অবস্থান থেকে সরে যান। বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, কৌশলগত কারণে তারা সংলাপ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ওই নেতারাও মনে করেন বর্তমান সংকট নিরসনে সংলাপের বিকল্প নেই। সংলাপ ইস্যুকে রাজনীতির মাঠে ছেড়ে দিয়ে তারা বিএনপিসহ সব মহলের মনোভাব জানার চেষ্টা করছেন। সবকিছু ইতিবাচক হলে সংলাপ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্যোগ নিতে পারে ক্ষমতাসীনরা। এক্ষেত্রে বিএনপিকে আলোচনায় বসাতে পর্দার অন্তরালে তৃতীয় কোনো পক্ষের সহযোগিতাও নেওয়া হতে পারে। তবে হঠাৎ করে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে সংলাপ ইস্যু সামনে আনাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বিএনপি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে মতানৈক্য
২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমুর ইউটার্ন * আলোচনার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি -ওবায়দুল কাদের * সংলাপের কোনো বিকল্প নেই -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
হাসিবুল হাসান
নানা গুরুত্বপূর্ণ অভিন্ন ইস্যুতে দুই মেরুতে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও দুদলের অবস্থান বিপরীতমুখী। সংকট নিরসনে হঠাৎ করেই সামনে এসেছে দুদলের আলোচনা। সংলাপ নিয়ে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমুর দেওয়া বক্তব্যে রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। এর মধ্য দিয়ে সংকট নিরসনে দুদলের এক টেবিলে বসার সম্ভাবনা দেখছিলেন অনেকে। তবে ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়। এ ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা-মন্ত্রীদের মধ্যে দেখা দেয় মতানৈক্য। প্রভাবশালী দুই নেতা আমুর বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রভাবশালী এক মন্ত্রী সংলাপের পক্ষে মত দেন। আর আমির হোসেন আমু নিজেও তার অবস্থান থেকে সরে আসেন। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিনিয়র নেতাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে যখন বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন, সেখানে তাদের এমন বক্তব্যে দলের ভেতরে-বাইরে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হতে পারে। তাই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলা উচিত।
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ১৪ দলের সমাবেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধির মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলে জানান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধি আসুক আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই, কীভাবে সবাই মিলে একটি অংগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। সেটা আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা হতে পারে, অন্য কোনো পথে নয়।
নিজের এমন বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থান পরিবর্তন করেন আমির হোসেন আমু। বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ইস্যুতে কাউকে আলোচনার জন্য আহ্বান করা হয়নি। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কাউকে আহ্বান করা হয়নি। কাউকে আহ্বান করার সুযোগ নেই। এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত নয় যে দাওয়াত করে এনে খাওয়াব।’ ১৪ দলের মুখপাত্র আরও বলেন, জোটনেত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সেটা তিনি করবেন। নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। সবাইকে সে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আগামীতে ক্ষমতা কার হাতে থাকবে সেটা জনগণ নির্ধারণ করবে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে বলা যায়, কিন্তু আলোচনার জন্য নয়।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে বারবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। সেই নির্বাচনে জাতিসংঘ থেকে তারানকোকে (জাতিসংঘের সাবেক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো) পাঠানো হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা তাদের সামনে প্রমাণ করেছিলাম নির্বাচন না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। একটি দেশের জন্য সাংবিধানিক শূন্যতা কাম্য হতে পারে না। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আমু বলেন, সেদিনও তোমরা আলোচনায় পরাজিত হয়েছিলে। তার মাধ্যমে আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছিল। ধারাবাহিকভাবে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আজকেও নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এর আগে একাধিকবার বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা নাকচ করেছেন। আমির হোসেন আমুর মঙ্গলবারের বক্তব্যের পরদিন বুধবার সকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের সমস্যা আমরা আলোচনা করব, প্রয়োজন হলে নিজেরাই সমাধান করব। জাতিসংঘের মধ্যস্থতার কথাও উড়িয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, এখন বাইরের বিষয়টা কেন বারবার আসে? জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি।
এদিকে সচিবালয়ে সাংবাদিকরা আমির হোসেন আমুর বক্তব্য নিয়ে অবস্থান জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমির হোসেন আমু আমাদের দলের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তার এ বক্তব্য নিয়ে আমাদের দলের মধ্যে, সরকারের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি ১৪ দলের মধ্যেও কোনো আলোচনা হয়নি। এটি সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, তিনি বলেছেন আসলে গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে তিনি ঠিক সেভাবে বলেননি। যেভাবেই আসুক এটি তার ব্যক্তিগত অভিমত, দল, সরকার কিংবা ১৪ দলের কোথাও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
এদিকে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংলাপ চলমান থাকবে। সংলাপের বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সবকিছুই সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। আসাদুজ্জামান খান কামাল আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একটি জনপ্রিয় দল। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় জনগণকে নিয়েই চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নেই।
এজেন্ডাহীন সংলাপে বিএনপির ‘না’
সরকার যদি বলে পদত্যাগ করব তখন আলোচনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত -মির্জা ফখরুল * আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে সরাতে পারবে না -ড. মোশাররফ
হাবিবুর রহমান খান
এজেন্ডাবিহীন কোনো সংলাপেই সাড়া দেবে না মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ইস্যুতে কোনো ছাড় দেবে না দলটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংলাপ নিয়ে নানামুখী আলোচনা হলেও তা আমলেই নিচ্ছে না। দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না তারা। সরকারকে বিদায় করেই সংকটের সমাধান করা হবে। তাই কিসের সংলাপ আর কিসের আলোচনা তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তাছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের কথার কী দাম আছে। এক নেতা সংলাপের কথা বলছে আরেকজন তা নাকচ করে দিচ্ছে। আসলে সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সরকার নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। সংলাপ ইস্যুতে সামনে আনা সেই কৌশলের অংশ বলেই তারা মনে করেন। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তৃতায় কী বললেন, তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তারা হঠকারী ও হাস্যকর কথা বলেন। আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে শুধু নিরপেক্ষ সরকার বিষয়ে। অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নেই।
বিএনপির দুজন নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে নিতে শুধু সংলাপ নয়, আরও নানা কৌশলের আশ্রয় নিতে পারে ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যুতে ছাড়ের প্রস্তাবও দেওয়া হতে পারে। কিন্তু এবার অতীতের মতো আর ভুল করবে না তারা। রাজপথেই দাবি আদায় করা হবে। আমরা সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছি।
সংলাপ নিয়ে আমির হোসেন আমুর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, আমির হোসেন আমুর বক্তব্য আওয়ামী লীগের কিনা সেটা আমরা জানি না। তাছাড়া এখন তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামেও নেই। সেক্ষেত্রে প্রথম কথা হচ্ছে, তার কথাকে আমরা আওয়ামী লীগের বক্তব্য মনে করব কিনা? দ্বিতীয়ত, ১৪ দল তো সিদ্ধান্ত নেয় না, নেয় আওয়ামী লীগ। এটা আদৌ আওয়ামী লীগের প্রস্তাব কিনা, সেটা না জেনে বিস্তারিত মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এজেন্ডা ছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। অতীতে এজেন্ডাবিহীন সংলাপে তারা নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও তার কোনোটাই রক্ষা করেনি। ওইসব বৈঠকে আমির হোসেন আমুও ছিলেন। তাই আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখার কোনো সুযোগ নেই। সেজন্য আমরা পরিষ্কার বলছি যে, অন্য কোনো বিষয়ের ওপর আলোচনার কোনো সুযোগই নেই। একমাত্র নিরপেক্ষ সরকার কীভাবে হতে পারে, তারা যদি রাজি হয় যে, হ্যাঁ নিরপেক্ষ সরকার করব, সরকার যদি বলে আমরা পদত্যাগ করব, আমরা নিরপেক্ষ সরকারের ব্যাপারে আলোচনা করব কিনা, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই মুহূর্তে দাবি আদায়ে আমরা রাজপথকেই বেছে নিয়েছি। আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি চলছে, এটা আরও জোরদার হবে। দাবি আদায়ে আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী। মানুষের যে সাড়া আমরা পাচ্ছি, মানুষ যেভাবে এগিয়ে আসছে, আমরা বিশ্বাস করি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করতে পারব এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবে না তারা। এক্ষেত্রে এজেন্ডাবিহীন সংলাপে বসাতে তৃতীয় কোনো পক্ষ সমঝোতার চেষ্টা করলেও তাতে সায় দেবে না তারা। কারণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ নিয়ে অতীতে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০১৮ সালের কথা সবাই জানে। সেই সময় তারা প্রকাশ্যেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রাখেনি। আওয়ামী লীগ ভয়ংকর বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। সেই সময় জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসাবে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে সমঝোতার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। তার উপস্থিতিতে দুদলের আলোচনা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পর অল্প সময়ের মধ্যে আরেকটি ভোট করা হবে। তারানকোর উপস্থিতিতে যে প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগ দিয়েছিল, পরে তা রাখেনি। তাই আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সংকট সমাধান নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে নেতা-মন্ত্রীরা ‘এলোমেলো’ বক্তব্য দিচ্ছেন। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বিএনপি হলো একটি সন্ত্রাসী দল, এরা সন্ত্রাস করে এদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না। আর মঙ্গলবার আমির হোসেন আমু বললেন, জাতিসংঘের সমঝোতার মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত আছে। আবার আজকে (বুধবার) শুনলাম ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) বলেছেন, না এটা সঠিক নয়। সংলাপের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওদের কথার কী দাম আছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা কী বলছেন সেটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। তা আমলেই নিচ্ছি না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলনে আছি। এর মধ্যে সরকার সংলাপসহ যেসব কথাবার্তা বলছে তাতে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে সরাতে পারবে না।