Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সিপিডির বাজেট মূল্যায়ন

আইএমএফ’র শর্তের প্রতিফলন রয়েছে

বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয় * সবার জন্য দুই হাজার টাকা কর অন্যায় * মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি বিনিয়োগ এবং রাজস্ব আদায়সহ কোনোটিই অর্জন সম্ভব নয়

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আইএমএফ’র শর্তের প্রতিফলন রয়েছে

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ভঙ্গুর অবস্থায়। ক্রমান্বয়ে এটি আরও ব্যাপকভাবে দুর্বল হচ্ছে। বৈশ্বিক এবং অভ্যন্তরীণ দুই খাতেই ব্যাপক চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ এবং রাজস্ব আদায়সহ কোনোটিই অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

শুক্রবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট বিশ্লেষণে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এবারের বাজেটে নির্দিষ্ট কিছু সেবার বিপরীতে সবার জন্য দুই হাজার কর আদায়ের কথা বলা হয়েছে। এটি একেবারেই অযৌক্তিক এবং অন্যায়। কিন্তু কর ফাঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। এই পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হলে বছরে ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা আদায় সম্ভব। এছাড়া বাজেটে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়নের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যাপারেও উদ্যোগ নেই। বর্তমান সরকারের মেয়াদে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এটা নিয়ে কারও কোনো দুশ্চিন্তা নেই। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। সিপিডি বলছে, ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও ব্যয়ের সক্ষমতা ও গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। ফলে এই বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত বছরের বাজেটের আগেও দেশে আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বৈশ্বিক অবস্থাসহ সামগ্রিক কাঠামো আমাদের কাছে স্পষ্ট ছিল। অধিকাংশই ছিল নেতিবাচক। কিন্তু এরপরও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকবে ৪৬ বিলিয়ন ডলার, মুদ্রার বিনিময়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি ডলারের দাম ৮৬ টাকাই থাকবে। কিন্তু বাস্তবে কী হলো? প্রবৃদ্ধি নেমে এলো ৬ শতাংশে এবং রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারে। ডলারের দাম ১০৮ টাকায় উন্নীত হলো। মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াল সাড়ে ৮ শতাংশে। এ কারণে আমরা বছরের পর বছর বলে আসছি, অর্থনীতির অনুমিতিগুলো সঠিক হয় না। বাস্তবতার সঙ্গে এর মিল কম। আর এই অনুমিতির ওপর ধারণা করে বাজেট ঘোষণা করলে ফলাফল এভাবেই হবে। অর্থাৎ বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে যদি আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তাহলে এ ধরনের খারাপ অবস্থা তৈরি হবে। আর সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমরা বলছি, এবারের বাজেটের লক্ষ্যগুলো বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই।

তিনি বলেন, চলমান অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধির চাপ রয়েছে। এসব চাপ মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ। এই খাতে জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো ছিল। গত কয়েক বছরে প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ৬, পরবর্তীকালে তা সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। এরপর অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সমস্যা সৃষ্টি হলো। কিন্তু সেই সমস্যা বিবেচনা না নিয়ে, আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে বাজেট ঘোষণা করা হলো। এর ফলে আজকের এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। এই হারে রাজস্ব আদায় সম্ভব নয়। আর এভাবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে এর অভিঘাত অন্যান্য সব জায়গায় পড়বে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে ২১ শতাংশ। সেখানে আগামী অর্থবছরের জন্য ২৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত এই ৬ শতাংশ বিনিয়োগ কীভাবে বাড়বে। এ কারণেই আমরা বলছি অবাস্তব কল্পনার ওপর নির্ভর করে বাজেট তৈরি করা হয়েছে। অবশ্যই এর প্রভাব অন্য সব জায়গায় পড়বে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কারের কোনো জায়গাতেই শক্তভাবে হাত দেওয়া হয়নি। যেমন ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম চলছে। আমরা সিপিডি থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত একটি ব্যাংকিং কমিশন করার জন্য বলে আসছি। কিন্তু তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন ঋণখেলাপি ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। আর বর্তমানে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এটা কারও কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কারও ঘুমও হারাম হচ্ছে না। ঋণ এভাবে কেন খেলাপি হচ্ছে, কারা করছে, এই টাকা কোথায় যাচ্ছে, কীভাবে ব্যাংকিং খাত পরিচালনা হচ্ছে, এগুলো দেখার কেউ নেই। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের কারণে করদাতাদের ওপর চাপ পড়ছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি জরুরি। প্রয়োজনে ইচ্ছাকৃত খেলাপি এবং যৌক্তিক কারণে খেলাপিকে আলাদা করতে হবে।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ক্রমান্বয়ে ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই দুর্বলতার জন্য বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণ রয়েছে। বৈশ্বিক দুর্বলতা মোকাবিলায় আমরা আইএমএফের কাছে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের জন্য আবেদন করেছি। ইতোমধ্যে প্রথম কিস্তি ছাড় হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা কঠিন সময় পার করছি। এই কঠিন সময়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বাজেটে সে রকম কোনো উদ্যোগ আসেনি। সামষ্টিক অর্থনীতিতে ১৫টির মতো চাপ রয়েছে। সরকারি ব্যয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন কম এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ অন্যতম। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের জীবনের চাহিদা মেটাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী এবং ব্যাংকিং খাতে ঋণ খেলাপির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বৈশ্বিক খাতের দিকে তাকালে দেখা যাবে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স নিম্নমুখী। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সংকট রয়েছে। এর ফলে আমদানির পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ঘাটতি রয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ডলারের দাম ক্রমেই বাড়ছে। এতগুলোর চাপের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছে।

তার মতে, অর্থনীতির এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে এবারের বাজেট ঘোষিত হয়েছে। এক্ষেত্রে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, চলমান অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলা অনেকাংশেই সম্ভব হবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মূল্যস্ফীতির লাগাম ধরে রাখা। বাজেটে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে আসবে। এটি বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেজিং। মূল্যস্ফীতির জন্য আমদানিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি সত্য জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে আমরা অনেক পণ্য আমদানি করি। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম এখন নিম্নমুখী। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ সম্পূর্ণভাবে বৈদেশিক উৎসের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যৌক্তিক নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ অনেক দুর্বলতা রয়েছে। এর মধ্যে কর কাঠামোতে দুর্বলতা, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং সিন্ডিকেটের মূল্য কারসাজি অন্যতম। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় জরুরি। সামগ্রিকভাবে বললে সামষ্টিক অর্থনীতির চলমান চ্যালেঞ্জ পুরোপুরি অনুধাবন এবং সেই অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে এবারের বাজেট অপর্যাপ্ত। ঘোষিত পদক্ষেপের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। এগুলোকে অলীক মনে হয়েছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে একদিকে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি ৩৮ সেবা নিতে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এ সিদ্ধান্ত আয়কর আইনের মূলনীতির পরিপন্থি এবং বৈষম্যমূলক নীতি। এই কর নৈতিকভাবে অন্যায় এবং অযৌক্তিক। তিনি আরও বলেন, সারচার্জের ন্যূনতম সীমা ৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করে ধনীদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যারা করমুক্ত আয়সীমা নিচে রয়েছে তাদের ওপর ২ হাজার টাকা করারোপ ন্যায্য কর ব্যবস্থার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়, আকাঙ্ক্ষিত নয়।

ড. ফাহমিদা আরও বলেন, একাধিক গাড়িতে পরিবেশ সারচার্জের কথা বলা হয়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ। রাজস্ব আয় বাড়াতে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে এ উদ্যোগ সাহায্য করবে। তবে ভ্রমণ কর বাড়ানোয় হয়তো রাজস্ব আয় বাড়তে পারে। কিন্তু বিদেশগামী কর্মীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ বিষয় বিবেচনা করা উচিত। জমি-প্লট রেজিস্ট্রেশনে উৎসে কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। এটিও রাজস্ব আয় বাড়াতে ভালো উদ্যোগ।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, কর এজেন্ট মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি তৈরি করতে পারে। এই শ্রেণি করদাতাদের স্বস্তির বদলে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। বেশি কমিশন পাওয়ার জন্য করদাতার অতিরিক্ত কর নির্ধারণ করতে পারে, আবার আয়কর কম নির্ধারণের বিনিময়ে অর্থ আদান-প্রদান হতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেটা অমূলক নয়। কর এজেন্ট বাস্তবায়নে আগে পাইলটভিত্তিতে পদ্ধতির দুর্বলতা, সমস্যা চিহ্নিত করা যেতে পারে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমার কাছে এবারের বাজেটে সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো মূল্যস্ফীতির ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, কিছু উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। তবে এই উদ্যোগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে না। এর অভিঘাত থেকে মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাজেটে ৫০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। এই টাকা দিয়ে মাত্র এক কেজি চাল হবে। এই টাকা কোনো মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়। আমরা এর আগে বলেছিলাম, সামাজিক নিরাপত্তায় ভাতার পরিমাণ অবশ্যই ২ থেকে ৩ হাজার টাকায় নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেনম বয়স্ক ও বিধবাভাতা থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ অনিয়ম হচ্ছে। এই অনিয়ম বন্ধ হলে নতুন করে আরও ৪২ শতাংশকে এই সেবা দেওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, বছরে কর ফাঁকি ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এই ফাঁকি বন্ধ করলে সবার জন্য সামাজিক নিরাপত্তার দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাজেট কমাতে হয় না। আরও সহজ করে বললে সরাসরি প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর ক্ষেত্রে এখনো আমাদের চরম অনীহা রয়েছে। এর সুবিধাভোগী হলো বড় বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং বেশি আয় করে এমন শ্রেণির মানুষ। তাদের আমরা স্পর্শ করতে চাচ্ছি না। এ কারণে আমি বলছি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এই মুহূর্তে মানুষের যে প্রত্যাশা, সেটি পূরণে এই বাজেট ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রশ্ন এসেছে এবারের বাজেট নির্বাচনি বাজেট কিনা। কিন্তু বাস্তবতা হলো বরাদ্দ দেওয়ার জন্য এবার সরকারের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ নেই। কিন্তু সরকার যা করেছে, তা হলো আইএমএফের শর্ত অনুসারে যে সুবিধাগুলো কমানোর কথা ছিল, বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে সেখানে হাত দেয়নি। এর মধ্যে রয়েছে কর কাঠামো হাত না দেওয়া এবং রপ্তানি প্রণোদনায় হাত না দেওয়া অন্যতম। আমরা ধারণা করছি নির্বাচনের পর সরকার সেই বিষয়গুলোতে হাত দেবে। তিনি বলেন অর্থমন্ত্রীর পুরো বাজেট বক্তৃতায় আইএমএফ শব্দটি মাত্র তিনবার এসেছে। এই তিনবার সরকারের প্রশংসা করে সংস্থাটি যা বলেছে, সেটিই উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সংস্কারের কথা বলা হয়নি। তবে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে আইএমএফের সংস্কারের বিষয়টি দেখা যায়। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে স্মার্ট সংস্কার দরকার। কারণ সরকারি অনুদানে চললে, এই বাজার দিয়ে খুব বেশি আশা করা যায় না। তিনি বলেন, বিও অ্যাকাউন্ট, সেকেন্ডারি মার্কেট, তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং অডিট ফার্মসহ সবকিছু নিয়ে আপত্তি রয়েছে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত আইএমএফের সংস্কার কাঠামোতে পুঁজিবাজার নিয়ে কিছু বলা হয়নি। আইএমএফের শর্তের মধ্যে থাকলে এখানে সংস্কার হতো। তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, আইএমএফের শর্ত অনুসারে জুনে বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রাখার কথা ছিল, বর্তমানে তা নেই। ফলে রিজার্ভ আরও বাড়াতে হবে। এর ফলে বাজার থেকে ডলার কিনে বিপরীতে টাকা ছাড়তে হবে। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকে টাকা কমে যাবে। এরপর বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ঋণ নিতে হলে কোনো বেসরকারি ব্যাংকে নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ছাপিয়ে নিতে হবে। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির কাঠামোতে ওনারা ৯টি অনুমিতির কথা বলেছেন। এর সবগুলোই ইতিবাচক। তবে সত্যিকার অর্থে অনেক জায়গাতেই অনেক কিছু পরিষ্কার করা হয়নি। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল, অর্থ পাচার এবং আয় বৈষম্য নিয়ে কোনো কথা নেই। ফলে বাজেটের ভেতরে চিন্তার গভীরতা আছে বলে মনে হয়নি। সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো এবং আর্থিক কাঠামো খুবই গতানুগতিক।

Jamuna Electronics

Document
Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম