Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

ব্যস্ত কাউন্সিলর প্রার্থীরা

Icon

গাজীপুর, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট ব্যুরো

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যস্ত কাউন্সিলর প্রার্থীরা

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যস্ত কাউন্সিলর প্রার্থীরা

আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ধীরে ধীরে জমে উঠছে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থী মেয়র পদে দলীয় প্রতীক নিয়ে এখনো মাঠে নামছেন না। তবে স্বতন্ত্র হিসাবে মাঠে নামার সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও বিএনপির হাইকমান্ড নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। মেয়র প্রার্থীরা সেভাবে প্রচারে নামেননি। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা অনেকটা নির্ভার। সেদিক থেকে এবারের সিটি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মেয়রের চেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীরাই বেশি ব্যস্ত। তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, ভোট চাইছেন। কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীক না থাকায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা মাঠে আছেন। ১৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা, বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী সিলেটে ভোট হবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন
মাসহ মেয়র প্রার্থী হলেন জাহাঙ্গীর
আজমতসহ মেয়র প্রার্থী ১২, কাউন্সিলর ৩৭১ * আইনি ঝুঁকিতে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র, গুমের শঙ্কা সত্ত্বেও মাঠে থাকার প্রত্যয়

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, বরখাস্ত মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনও মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা প্রার্থী হলেন। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার পরপরই নগরীর বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে জাহাঙ্গীর আলম তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যদিও জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিলের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, মেয়র পদ থেকে তিনি বুধবার পদত্যাগ করেছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে তার পদত্যাগপত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছে কি না তা জানা যায়নি। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৯ এর উপধারা (২) (ঙ) অনুযায়ী, ‘মেয়র পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। উক্ত ব্যক্তি নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক হলে তাকে ওই পদ হতে পদত্যাগ করতে হবে।’ এ বিধান অনুযায়ী যদি তার পদত্যাগ গৃহীত না হয়, সে ক্ষেত্রে তার পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।
জাহাঙ্গীরের আগে আজমত উল্লা খান বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যদিও আচরণ বিধিমালায় সর্বোচ্চ ৫ জন নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল। নির্বাচন ঘিরে সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও কাউন্সিলর পদে দলটির অনেক পদধারী নেতা প্রার্থী হয়েছেন বলে জানা গেছে। 
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন কিনা-তা নিয়ে নগরজুড়ে ছিল আলোচনা ও ব্যাপক কৌতূহল। যদিও তিনি মনোনয়নপত্র দাখিলের পর শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকার কথা সাংবাদিকদের জানান। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে থাকবেন না বলে মনে করেন আজমত উল্লা খান। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শেষ পর্যন্ত তিনি (জাহাঙ্গীর আলম) প্রার্থী হিসাবে থাকবেন কিনা তা দেখার অপেক্ষায় আছি। আগামী ৮ মের (মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন) পরেই তা দেখা যাবে।
এ নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ নেয়নি। মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন দলটি মহানগর কার্যালয়ও বন্ধ ছিল। তবে কাউন্সিলর পদে দলটির অন্তত ২০ জন পদধারী নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় জানিয়েছে, এ নির্বাচনে ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৮৯ জন, ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মেয়রসহ তিন পদে মোট ৩৮৩ জন প্রার্থী হয়েছেন। রোববার মনোনয়নপত্র বাছাই হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৮ মে। ভোটগ্রহণ হবে ২৫ মে। 
এ নির্বাচনে বাকি মেয়র প্রার্থীরা হলেন-জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির মো. রাজু আহেম্মদ ও গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা হলেন-আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. হারুন অর রশীদ, সরকার শাহনুর ইসলাম, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও মো. আবুল হোসেন। এর মধ্যে সরকার শাহনুর ইসলাম বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসানউদ্দিন সরকারের ভাতিজা। তবে বিএনপিতে তার দলীয় পদ নেই। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় মৃতুদণ্ড পাওয়া আসামি বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর তৃতীয়বারের মতো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪৮০টি। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে বিএনপির অধ্যাপক এমএ মান্নান মেয়র নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর আলম। মেয়র থাকাবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির দায়ে ২০২১ সালের শেষের দিকে মেয়র থেকে বরখাস্ত হন অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মেরও অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগে তাকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। যদিও পরে তাকে সাধারণ ক্ষমা করা হলেও মেয়র পদে আর বসতে পারেননি। এ নির্বাচনে পাননি দলীয় মনোনয়নও। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকার কথাও জানান তিনি। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর তিনি বলেন, আমি এখান থেকে যাওয়ার পর আমার পায়ে শিকল পড়তে পারে, আমি অ্যারেস্ট হতে পারি, আমাকে গুম করা হতে পারে। আমি আমার দেশবাসী ও নগরবাসীকে বলে যাই, এখান থেকে যাওয়ার পর যদি আমার মৃত্যু হয়, আপনারা বিশ্বাস করবেন আমি আমার শহরকে রক্ষার জন্য যা যা ভালো কাজ আছে আমি সবকিছুই করেছি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য অনেক কিছু হতে পারে।
নিজের মনোনয়নপত্র বাতিল বা প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়ার আতঙ্ক থেকে মাকে প্রার্থী করেছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অন্যায় করে যে কেউ যে কোনো কিছু করতে পারে। আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারে, আবার সঠিকও রাখতে পারে। এটা তাদের ব্যাপার। আমার জায়গা থেকে আমি সঠিক আছি। তাই আমি দাঁড়িয়েছি। শেষ পর্যন্ত আপনি ও আপনার মা দুজনেই কী মেয়র প্রার্থী হিসাবে থাকবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মাঠে থাকার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। পরীক্ষা দিতে চাই। 
আজমত উল্লা খান জানিয়েছেন আপনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন না-এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাকে কেউ যদি সরিয়ে দেয় তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আমাকে এই শহরের মানুষ পাঁচ বছরের জন্য মেয়র নির্বাচিত করেছিল। এ নির্বাচনে আমি আবার পরীক্ষা দিতে চাই যে আমি কী সঠিক কাজ করেছি, নাকি ভুল করেছিলাম। চেষ্টা করব শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার জন্য। ভয়ভীতি বা চাপ আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার পথ নেই। যদি আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয় উপরে আল্লাহ আছেন, নিচে আমার অভিভাবকরা আছেন। তারা বুঝবেন। আমি মায়ের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। মায়ের জন্য আমি শেষ পর্যন্ত লড়তে চাই। তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তি দাঁড়িয়েছি। তাহলে কেন ষড়যন্ত্র, কেন আমার সঙ্গে এত শত্রুতা। যরা নির্বাচন করতে চান, তারা আমার সঙ্গে ওপেনলি নির্বাচন করেন। আমি তো বলেছি, যে কোনো প্রার্থী আসেন, আমিও প্রার্থী হই। যেহেতু নির্বাচন জনগণের, জনগণের প্রতি সম্মান রাখেন। এখানে জোরজুলুম করবেন না, অত্যাচার করবেন না। তিনি বলেন,‘ আমি ব্যক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। যে ব্যক্তি এ শহরটা ধ্বংস করবে তার বিরুদ্ধে আমি দাঁড়িয়েছি।’ 
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এক বিশেষ পরিপত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে সতর্ক থাকতে বলেছে। পরিপত্রে বলা হয়, সিটি করপোরেশন একটি সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বিধায় সিটি করপোরেশনের মেয়র পদটি রিট পিটিশন ৯১২৪/২০০৮ এ মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক লাভজনক পদ সাব্যস্ত করা হয়েছে। কাজেই স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৯-এর উপধারা (২) (ঙ) অনুযায়ী, মেয়র পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে উক্ত ব্যক্তি নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক হলে তাকে উক্ত পদ হতে পদত্যাগ করে প্রার্থী হতে হবে। কাউন্সিলর পদধারীরা লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত নন বিধায় তাদেরকে পদত্যাগ না করে নির্বাচনে প্রার্থী হতে আইনগত কোনো বাধা থাকবে না।
এতে আরও বলা হয়, কোনো ব্যক্তি মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য এবং মেয়র বা কাউন্সিলর পদে থাকবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি (ঘ) কোনো ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে; (ঙ) প্রজাতন্ত্রের বা সিটি করপোরেশনের বা কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের বা অন্য কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত থাকেন। বিশেষ নির্দেশনায় আরও বলা হয়, কোনো প্রার্থী ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন ২ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে ও উক্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল হলে এবং আপিল আদালত নিম্ন আদালতের রায় বা সাজা স্থগিত না করলে অযোগ্য বলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালত আপিল গ্রহণ করলেও তিনি অযোগ্য হবেন বা সংশ্লিষ্ট প্রার্থী জামিন পেলেও অযোগ্য হবেন অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সাজা স্থগিত বা মওকুফ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।
জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাকে অপসারণ বা স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়নি। এই হিসাবে জাহাঙ্গীর আলম এখনো মেয়র রয়েছেন। যদিও ওই বরখাস্ত আদেশ নিয়ে আইনি লড়াই চলছে। মেয়র পদে থেকে নির্বাচনের সুযোগ নেই।
এবার জয়ের আশা আজমত উল্লা খানের : নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ আর জয় নিয়ে কোনো সংশয় নেই বলে জানান আজমত উল্লা খান। তিনি বলেন, নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ হবে এবং জনগণের অংশগ্রহণটা নির্বাচনে নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বার বার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা। নির্বাচন কমিশন সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ হবে। সুতরাং আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি যে, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।
জনগণ নৌকার পক্ষে আছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। তিনি বলেন, আমার শক্তি জনগণ। আমি কাউকে প্রতিপক্ষ মনে করি না। নৌকার পক্ষে জনতা আছে, তাই আমি নৌকার প্রতিপক্ষ কাউকে মনে করি না। জনগণ নির্বাচনের দিনটার জন্য অপেক্ষা করছেন। 
উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র দাখিল-রিটার্নিং কর্মকর্তা : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, প্রার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থীরা যাতে নির্বাচনি আচরণবিধি মান্য করেন এজন্য আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি, মাইকিং করেছি। ঈদের শুভেচ্ছা ও দোয়া চেয়ে বিলবোর্ড, ফেস্টুন, পোস্টার, ব্যানার লাগিয়েছে আমরা তা উচ্ছেদ করেছি। জেলা প্রশাসন ও মহানগর পুলিশের সহযোগিতায় আমাদের ৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩ জন মেয়র প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে।

বরিশাল সিটি নির্বাচন
নৌকার সঙ্গে লড়বে লাঙ্গল হাতপাখা

ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র। শেষ পর্যন্ত এখানে নৌকা, লাঙ্গল আর হাতপাখার ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছে সবাই। বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপন মেয়র পদে ভোটে নামার কথা বললেও নির্বাচনে দলের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। এটা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি। এমনকি কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন করতে নিষেধ করা হয়েছে দলের পদ-পদবিধারী নেতাদের। ভোটের মাঠের শক্ত পাল্লা হিসাবে বিবেচিত বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তীও সরে দাঁড়িয়েছেন। সব মিলিয়েই ১২ জুনের নির্বাচনে এখানে নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার পথে লাঙ্গল-হাতপাখা।
নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার পর থেকেই বরিশালে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল নৌকার মনোনয়ন। বর্তমান মেয়র সাদিক নাকি অন্য কেউ পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের টিকিট সেটা নিয়ে আগ্রহ ছিল নগরবাসীর। শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে মেয়র সাদিকের চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে ২ দিন চুপ থাকার পর ভার্চুয়াল বক্তব্যে দলের সব নেতাকর্মীকে চাচা খোকনের পক্ষে নির্বাচনি মাঠে নামার জন্য বলেন মেয়র সাদিক। নিজেও ঘোষণা দেন নৌকার পক্ষে কাজ করার। তারপরও অবশ্য পালটায়নি পরিস্থিতি। সাদিকবিরোধীদের নিয়েই মাঠে আছেন খোকন। মাঠে নামেনি সাদিক সমর্থকরা। এ নিয়ে অবশ্য কোনো উদ্বেগ নেই বলে জানিয়েছেন নৌকার মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত। বরিশালের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের মাঠে লড়বেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের এমন পরিস্থিতির বিপরীতে ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচনি মাঠে আছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার বহু আগেই তাকে দলের মেয়র প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। আগেভাগেই প্রার্থী মনোনয়নের এই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, ৭-৮ বছর ধরেই বরিশালের নির্বাচনি মাঠে আছেন তাপস। মেয়র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পাওয়ার পর আরও শক্তভাবে নামেন প্রচার-প্রচারণায়। বিগত বছরগুলোতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ নানাভাবে শক্ত করেছেন ভোটের মাঠের অবস্থান। লাঙ্গল নিয়ে তিনিও এখন ভোটযুদ্ধের শক্ত পাল্লা। যুগান্তরকে ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ‘শওকত হোসেন হিরনের পর এই নগরীতে উন্নয়ন বলতে আর কিছুই হয়নি। বঞ্চিত বরিশালকে জনগণের পছন্দের নগরী করতে মাঠে নেমেছি। বরিশালের মানুষ এবার বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের দাঁতভাঙা জবাব দেবে।’ বৃহস্পতিবার সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে নির্বাচনি প্রতীক হাতপাখার মালিক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে পীর সাহেবের ছোট ভাই দলের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমকে। দলের সবাই যাকে ডাকে শায়েখে চরমোনাই নামে। চরমোনাই দরবার শরিফে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় তার নাম। ফয়জুল করিমের প্রার্থিতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে এটি এখন পরিষ্কার যে, বেশ আটঘাট বেঁধেই বরিশাল সিটির নির্বাচনে নামছে দলটি। ধানের শীষবিহীন এই নির্বাচনে জয়ের সমূহ সম্ভাবনা দেখছে দলের নেতাকর্মীরা। তাছাড়া এবারের এই মেয়র নির্বাচনের মাধ্যমে নিজ এলাকায় ইসলামী আন্দোলনের জনপ্রিয়তারও যাচাই হবে। 
সারা দেশের মতো বরিশালেও নির্বাচন প্রশ্নে অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়াই কেবল নয়, কাউকে প্রচ্ছন্ন কিংবা পরোক্ষ সমর্থনও দেবে না বলছেন বিএনপির নেতারা। এমনকি কাউন্সিলর পদেও প্রার্থী হতে নিষেধ করা হয়েছে দলের পদ-পদবিধারী নেতাদের। এমন পরিস্থিতিতে বরিশালে সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের পুত্র কামরুল আহসান রুপন। এক সময়ের ছাত্রদল নেতা রুপন বর্তমানে নেই দলের কোনো পদ-পদবিতে। তবু তার মধ্যে বিএনপির ছায়া খুঁজছেন দলের কেউ কেউ। রুপনের ভাষায়, ‘নির্বাচনের ৩-৪ দিন আগে অন্য রকম এক খেলা হবে বরিশালে। তা নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাইছি না। কেবল এটুকু জেনে রাখুন যে, মেয়র পদে আমার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাতেই নড়েচড়ে বসেছে ক্ষমতাসীনরা। যে কারণে আমাকে দেওয়া হয়েছে দুদকের নোটিশ। সময়ই বলে দেবে যে, কোন দিকে ঘুরবে নির্বাচনি মোড়।’ রুপনের এই বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এখন কেউ যদি বিএনপির কথা বলে নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে চায় সেটা তার ব্যাপার।’
মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি নগরের ৩০ ওয়ার্ডে ভোটের মাঠে নেমেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। তবে বিএনপির বর্তমান কাউন্সিলরদের অনেকেই এবার আর নির্বাচনে আসছেন না। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির বলেন, ‘হাইকমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী কেবল আমি নয়, দলের কেউই নির্বাচন করবে না। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে গেলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থানে থাকব আমরা।’ এদিকে আওয়ামী লীগে কাউন্সিলর প্রার্থী প্রশ্নে চলছে ভিন্ন জটিলতা। বর্তমানে ৩০ ওয়ার্ডে যারা কাউন্সিলর রয়েছেন তাদের বড় একটি অংশ বর্তমান মেয়র সাদিকের অনুসারী। তারা যেমন ভাবছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা, তেমনি মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়া খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী সাদিকবিরোধী অংশ থেকেও অনেকেই এর মধ্যে ঘোষণা করেছেন তাদের প্রার্থিতা। এমন পরিস্থিতিতে দুপক্ষের দ্বন্দ্বে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন এমন শঙ্কাও আছে। তবে দিনশেষে নির্বাচনে না আসা বিএনপির ভোটাররাই এখানে জয়-পরাজয়ের নিয়ামক হয়ে উঠবে এমনটাই ধারণা সবার। কেননা সুষ্ঠু নির্বাচনের যত ইতিহাস তাতে এটা প্রমাণিত যে, বরিশালে বিএনপির ভোটব্যাংক আওয়ামী লীগের তুলনায় অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে এবং বিএনপির ভোটাররা কেন্দ্রে গেলে মেয়র নির্বাচনে তারাই হবে সবচেয়ে বড় শক্তি এমনটাই ধারণা সবার।

রাজশাহী সিটি নির্বাচন
কাউন্সিলর পদে ভাগ চায় শরিকরা

ভোট এলেই জোটের কদর বাড়ে, তাদের ডাক পড়ে। স্বাভাবিক সময়ে আওয়ামী লীগ জোট শরিকদের তেমন খোঁজখবরও রাখে না। রাজশাহীতে এমন অভিমানের সুর প্রায়ই শোনা যায় জোটের শরিক ১৪ দলের নেতাকর্মীদের কণ্ঠে। এবারও ব্যতিক্রম নয়। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে শরিকদের মান ভাঙানোর চেষ্টা চলছে। তাদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। উদ্দেশ্য দলীয় মেয়র প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করা। ২ মে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বসার দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। এদিকে সিটির ৩০ ওয়ার্ডের অন্তত ২০টিতে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট করতে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছেন। ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ চাইছে আসন্ন সিটি নির্বাচনে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ থাকুক। তবে শরিকরা আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে সমর্থনের বিনিময়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদগুলোতে ভাগ বসিয়ে ক্ষমতার স্বাদ পেতে চায়। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বিষয়টি জানান। 
এদিকে বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর পুরোদমে গণসংযোগ করছেন। তার মেয়াদে গত সাড়ে ৪ বছরে রাজশাহীতে যে উন্নয়ন হয়েছে তার ফিরিস্তি দিয়ে লিফলেট বিতরণ করছে আওয়ামী লীগ। পাড়া-মহল্লায় নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করছেন। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর তারা আরও জোরেশোরে প্রচারে নামবেন। এজন্য প্রাক-প্রস্তুতি হিসাবে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় নির্বাচন প্রচার কমিটি গঠন শুরু হয়েছে। শিগগির হবে ১৪ দলের নির্বাচন পরিচালনায় স্টিয়ারিং কমিটিও। সেখানে শরিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ভোটের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমরা সব সময় জোট শরিকদের মূল্যায়ন করেছি। আসন্ন ভোটেও তারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। কারও কোনো অভিমান থাকলে আমরা সমন্বয় সভায় সেগুলো শুনব। 
এদিকে বিএনপি এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়ে রাখলেও রাজশাহী সিটির ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ২০টিতে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোট করতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন। কাউন্সিলর পদে ভোট করতে আগ্রহী বিএনপির এসব নেতাকর্মীর অনেকেই বলছেন, মেয়র পদে দলীয় ভোট হলেও কাউন্সিলর পদে হয় না। স্থানীয় জনগণের সমর্থন ও দাবির বিষয় আছে। এক্ষেত্রে তারা ভোট না করলে স্থানীয় জনসমর্থন যেমন হারাবেন, তেমনি দলীয় নেতাকর্মীদেরও ধরে রাখা কঠিন হবে। এ কারণে কাউন্সিলর পদে ভোট করতে মাঠে নেমেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আমরা বলেছি বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। মহানগর বিএনপি অথবা কোনো ওয়ার্ডের দলীয় পদধারী কেউ যদি সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হন সেক্ষেত্রে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে না।   
অন্যদিকে হেভিওয়েট প্রার্থী লিটনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে এখন পর্যন্ত কোনো দলীয় বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। মনোনয়ন দাখিলের পরই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তবে আসন্ন নির্বাচনে লিটনের বিরুদ্ধে কেউ প্রার্থী হলেও সরকারি দলের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিতে কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। এ কারণে নেতারা জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন। 
দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় পার্টির আলাদা ভোট রয়েছে। এর বাইরে রাজশাহীতে জাসদের দুই শাখা, ন্যাপ, গণআজাদী লীগ, সাম্যবাদী দলসহ অন্য দলগুলোর বিশেষ কোনো অবস্থান নেই। সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ রাজশাহী সদর (রাজশাহী-২) আসনটি ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাকে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বাদশা এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনবার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ কারণে আসন্ন সিটি নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির নিরঙ্কুশ সমর্থনও আওয়ামী লীগ প্রত্যাশা করে। জানা গেছে, ওয়ার্কার্স পার্টি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অন্তত ৫টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিতে আগ্রহী। ২ মে জোট শরিকদের বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টি এই দাবি তুলবে। রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু এ প্রসঙ্গে বলেন, তারা ১৪ দলের শরিক হিসাবে রাজশাহীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। তবে সরকারের ‘মন্দ কাজ’র সমালোচনা করেন। আসন্ন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে সমর্থনের বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই তাদের। জোটের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ার্কার্স পার্টি মেয়র লিটনকে সমর্থন জানাবে। 
এদিকে ১৪ দলের শরিক জাসদ রাজশাহীতে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয়। নগরীতে বিশেষ ভোট না থাকলেও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে জাসদের নেতাকর্মীরা বরাবরই সম্মানজনক আচরণ পেয়েছেন। তারপরও রাজশাহীতে জাসদ নেতাকর্মীদের মাঝে সুপ্ত অভিমান রয়েছে। রাজশাহী মহানগর জাসদের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী বলেন, ‘মেয়র লিটনের মেয়াদে রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জাসদ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত। তবে অন্তত তিনটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ তাদের ছেড়ে দিতে হবে। শরিক দলগুলোর দাবি ও অবস্থান প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, ‘রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে আছে। তারপরও আমরা শরিকদের সঙ্গে নিয়ে আসন্ন সিটি নির্বাচনে বড় জয় পেতে চাই। শরিকদের আমরা অবহেলা করি না। এজন্য ২ মে মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জোট শরিকদের ডাকা হয়েছে। ওই দিন ১৪ দলের সমন্বয় সভা হবে। সেখানেই ভোটের কৌশল ও শরিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

কেসিসি নির্বাচন
নির্ভার আ.লীগ মেয়র প্রার্থী খালেক

বিএনপিহীন খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে অনেকটা নির্ভার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং স্বতন্ত্রসহ ৫ প্রার্থীর নাম ঘুরছে। তবে কেউ শাসক দলের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে না। এছাড়া তারা এখনো সেভাবে কেউ প্রচারে নামেননি। তবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বিএনপির পদ-পদবি নেই এমন অনেকেই কাউন্সিলর পদে ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাজ করছে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে খুলনা সিটি করপোরেশেন নির্বাচন।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় মেয়র পদ নিয়ে তাপ-উত্তাপ নেই ভোটারদের মধ্যে। এখন পর্যন্ত মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থীর নাম ঘুরেফিরে আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ বাদে বড় দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী দেবে। জাতীয় পার্টি এখনো প্রার্থী ঘোষণা দেয়নি। দলের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়ালকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম মুশফিকুর রহমান ও আগুয়ান ৭১ নামে সামাজিক সংগঠনের আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ চৌধুরীর নাম রয়েছে আলোচনায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে। ফলে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের জন্য পথ অনেকটা সুগম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেসিসির বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক দুবারের মেয়র ও চারবারের এমপি। একবার দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এমন হেভিওয়েট প্রার্থীর বিপক্ষে ছোট কোনো দলের প্রার্থী ধোপে টিকবে না বলেই মনে করছেন ভোটাররা। ফলে এবারের সিটি নির্বাচন অনেকটাই একপেশে হবে বলে মনে করছেন তারা। 
প্রতিদ্বন্দ্বী শক্ত হলে নির্বাচনে জয়ের যে আনন্দ সেটি থেকে বঞ্চিত হবো বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে না আসা বিএনপির দেউলিয়াত্বের পরিচয়। আন্দোলন-নির্বাচন একটি রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্য। বিএনপি সেই লক্ষ্য থেকে সরে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তালুকদার আব্দুল খালেকের মতো যোগ্য লোকের প্রতি জনগণের আস্থা আছে। বিএনপি এলেও মানুষ আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করত বলে তিনি জানান। 
নির্বাচনের বিষয় নিয়ে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে করার কিছু নেই। খুলনা সিটিতে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে তাতে জনগণ আমাদের পাশে আছে এবং থাকবে। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে ভোটারদের কাছে টানতে ব্যস্ত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর ও জেলা শাখা। তারা এ নির্বাচনকে মানুষের মাঝে দলের দাওয়াত পৌঁছানো ও নিজেদের অবস্থান শক্ত করার কৌশল হিসাবে বেছে নিয়েছে। 
নির্বাচনের বিষয় নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নগর সহসভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা সাড়ে ১৪ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। সে নির্বাচনকেও আমরা কৌশল হিসাবে নিয়েছিলাম। এবার দুটি বিষয়কে আমরা সামনে নিয়েছি-এক. মানুষের মাঝে দাওয়াত পৌঁছানো আর দুই. নির্বাচনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা। এই সরকার এবং এই কমিশনের অধীনে নির্বাচন কেমন হবে তা সামনে এনে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করা। সেজন্য আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। নির্বাচনে প্রার্থীর বিষয় নিয়ে খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, প্রার্থী নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। আগামী ৩-৪ মে মিটিংয়ের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। 
ভোটারদের দ্বারে কাউন্সিলর প্রার্থীরা : খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মানুষের আগ্রহের জায়গা তৈরি না হলেও কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা গণসংযোগ শুরু করেছেন। মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন তারা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় সমর্থন পেতেও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। ওয়ার্ডগুলোতে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের তৎপরতা। নগরীর ১৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আনিছুর রহমান বিশ্বাস স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দোয়া নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগ শুরু করেছেন। ফেসবুকে আবার সেটি নিয়ে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন তিনি। 
একই ওয়ার্ডের প্রার্থী শেখ হাসান ইফতেখার চালু। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এবারের নির্বাচনে তিনিও প্রার্থী হতে চান। তিনি বলেন, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছি। যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আগের প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিলেও ওয়ার্ড গড়ার কাজে কোনো পদক্ষেপ রাখেনি। ইনশাআল্লাহ বিজয়ী হলে মডেল ওয়ার্ড গড়ে তুলব। 
নগরীর ১নং ওয়ার্ড থেকে ৩১নং ওয়ার্ড পর্যন্ত সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা মাঠ চষে ফিরছেন। প্রার্থীরা কেউ কেউ তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, আবার কেউ কেউ এলাকার সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। সকাল থেকেই চলছে গণসংযোগ। 
প্রার্থীদের তৎপরতার মাঝেও থেমে নেই ভোটারদের হিসাব-নিকাশ। গেল নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, কতটুকু হয়নি তাই নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। 
নগরীর ২৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা চা দোকানি মমতাজ বেগম বলেন, টিসিবি কার্ড, বিধবা কার্ডসহ কোনো সুবিধা পাইনি গত ৫ বছরে। নেতাদের কাছে বারবার গিয়েও কোনো উপকার পাইনি। এবার ভোট নিতে এলে তাদের কাছে কৈফিয়ত চাইব।


সিলেট সিটি নির্বাচন
বিএনপি-জামায়াতসহ চার শতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী
মেয়র পদে আরিফকে আনোয়ারের চ্যালেঞ্জ

বর্তমান মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থিতা ঘোষণার ওপর নির্ভর করছে সিলেট সিটি নির্বাচনের তাপ-উত্তাপ। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি। নির্বাচন করবেন না এমন ঘোষণা দেননি। তিনি ভোট করলে এক ধরনের অবস্থা হবে, না করলে ভিন্ন চিত্র থাকবে। দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের কারণে আরিফুল হক প্রার্থিতা ঘোষণা করছেন না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি আরিফুল হককে প্রার্থী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনি নির্বাচনে আসুন। দেখুন জনগণ আপনাকে চায় কি না।’ এছড়া এই নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী দিয়েছে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে। দলীয় প্রার্থী হতে প্রচারণায় আছেন জাতীয় পার্টির মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম বাবুল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদর। মেয়র আরিফ নির্বাচন না করলে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফয়জুল আনোয়ার ও যুগ্ম সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রসারিত সিটি করপোরেশনের ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হতে সব মিলিয়ে চার শতাধিক প্রার্থী নির্বাচনি মাঠ এখন চষে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের দেড় শতাধিক প্রার্থী আছেন। বাকিরা আওয়ামী লীগসহ অন্য দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয়ভাবে বিএনপি ও জামায়াত বর্জন করলেও নির্বাচনি মাঠে আছেন উভয় দলের দেড় শতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী। দলের হাইকমান্ড এ ব্যাপারে কঠোর হলেও নির্বাচনি মাঠ ছাড়তে নারাজ তৃণমূলের এসব নেতাকর্মী। তাদের দাবি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয় না। তাই তাদের নির্বাচন করতে বাধা নেই। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে একই মত পোষণ করলেন স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতারাও। 
গত মধ্য মার্চে অনুষ্ঠিত সিলেট সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র ভোট করে বিজয়ী হয়েছেন, যা এবার কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক দলের নেতাকর্মী। ফলে এ পদে প্রার্থীর সংখ্যা থাকে অনেক। বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে মাঠে আছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিক্রম কর সম্রাট, আবুল কালাম আজাদ লায়েক, আফতাব হোসেন খান, মো. ইলিয়াছুর রহমান, মো. মোখলেছুর রহমান কামরান, মো. তারেক উদ্দিন তাজ, রকিবুল ইসলাম ঝলক, শান্তনু দত্ত (সনতু), রাশেদ আহমদ, মো. আজাদুর রহমান আজাদ, ছালেহ আহমদ সেলিম, মোস্তাক আহমদ, তাকবির ইসলাম পিন্টু, মোহাম্মদ তৌফিক বক্স, মো. আজম খান, সালমা সুলতানা, শাহানারা বেগম, সাবেক কাউন্সিলর এস.এম আবজাদ হোসেন, আব্দুর রকিব বাবলু, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আছমা বেগমসহ শতাধিক প্রার্থী। 
বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক জনের মধ্যে আছেন বর্তমান ওয়ার্ডে কাউন্সিলর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান লোদী কয়েস, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ফরহাদ চৌধুরী শামীম ও সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে রোকসানা বেগম শাহনাজ। এছাড়া ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুর রকিব তুহিন, সংরক্ষি ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শাহানা বেগম শানু, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিনসহ বিএনপিপন্থি শতাধিক প্রার্থী রয়েছেন। জামায়াত প্রার্থীদের মধ্যে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেল আহমদ রিপন, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রাজিক মিয়া, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল জলিল নজরুলসহ অর্ধশত প্রার্থী।
নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লায় তাদের পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ও বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। রমজান মাসব্যাপী তারা ইফতার মাহফিল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রার্থিতার জানান দিয়েছেন ও দোয়া চেয়েছেন ভোটারদের কাছে। প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচারণা চালাচ্ছেন। 
সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিটি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী কয়েস, ফরহাদ চৌধুরী শামীম ও রোকসানা বেগম শাহনাজ বলেন, তারা কেউ দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন না। স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়, কাউন্সিলর পদে নয়। তাই তাদের নির্বাচন করতে বাধা নেই। তাদের মতে কাউন্সিলর পদের নির্বাচনটি দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, কেবল মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়। কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় এ পদটি দলীয়ভাবে দেখা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের তফশিল অনুযায়ী, ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনি এলাকায় লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণের নির্দেশ দিলেও কেউ বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হলেও প্রথম দিন কেউ মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেননি।
আরিফকে প্রার্থী হওয়ার আহ্বান : সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের জরুরি সভা বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় নগরীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। নগর কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুলের পরিচালনায় সভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, নগর কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মফুর আলী, আসাদ উদ্দিন আহমদ, আব্দুল খালিক, ফয়জুল আনোয়ার আলাওর প্রমুখ।
আরিফুল হক চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সভায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে আসুন। দেখুন জনগণ আপনাকে চায় কি না। এবার পরিবর্তনের জোয়ার উঠেছে। নির্বাচনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রয়োজন। তিনি বলেন, একটু আগে শুনেছি আরিফুল হক চৌধুরী সাহেব বিবৃতি দিয়েছেন যে, উনি নির্বাচন করবেন। অনেকেই আমাকে ভয় দেখায় যে, আরিফুল হক চৌধুরী সাহেব নির্বাচন করলে এখানে কঠিন হবে। নির্বাচনটাই তো একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়, এটা কঠিন বিষয়। জনগণই তো সিদ্ধান্ত নেবে কে জিতবে আর কে হারবে। আমি অভিনন্দন জানাই, উনি যাতে নির্বাচন করেন এবং একটি ফলপ্রসূ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়। আমি বিশ্বাস করি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে আরিফুল হক চৌধুরী সাহেব আমার সঙ্গে জিততে পারবেন না।
 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম