নয় মাসে বেড়েছে ৪৫৬ অ্যাকাউন্ট
শেয়ারবাজারে কোটিপতি বিনিয়োগকারী ১৪ হাজার
১০ লাখ টাকার ওপরে অ্যাকাউন্ট ১ লাখ ১২ হাজার ১২৫ * তারল্য সংকটে শেয়ার লেনদেন নেমেছে ৫শ কোটি টাকার নিচে
মনির হোসেন
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মন্দার মধ্যেও শেয়ারবাজারে কোটিপতি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে দেশের শেয়ারবাজারে কোটিপতি বিও (বেনিফিশারি ওনার) অ্যাকাউন্ট ১৪ হাজার ১৫টি, যা ৯ মাসে বেড়েছে ৪৫৬টি।
এর মধ্যে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও উদ্যোক্তা, ব্রোকারেজ হাউস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকসহ সব ধরনের বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আর ১০ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ১২৫, যা ৯ মাসে বেড়েছে ৮ হাজার ৩২৬টি।
ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন কারণে কোটিপতি বাড়ছে। প্রথমত, নতুন কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। ফলে তাদের উদ্যোক্তাদের পোর্টফোলিও যোগ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। তৃতীয়ত, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেও কিছু মানুষ কোটিপতি হয়েছেন। তবে এই বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, বাজারে কোটিপতি বিও অ্যাকাউন্ট বাড়ছে। এর কারণ হলো বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। এজন্য বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে আসতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা বাজারের জন্য ইতিবাচক। কারণ এর ফলে বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়ছে। এছাড়া বড় বিনিয়োগকারীরা বাজার সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আসে। সাধারণত তারা অনেক চিন্তাভাবনা করে বিনিয়োগ করে থাকেন। এতে বাজারের গভীরতা বাড়ে।
প্রসঙ্গত, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিও অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক। কোনো ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকে এসব অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। আর ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সিডিবিএল এই অ্যাকাউন্টের তথ্য সংরক্ষণ করে।
সিডিবিএল সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৫৫টি। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি টাকা ও তার ওপর বিনিয়োগ ছিল-এ ধরনের বিও অ্যাকাউন্ট ১৪ হাজার ১৫টি। এর ৯ মাস আগে যা ছিল ১৩ হাজার ৫৫৯টি। অর্থাৎ বর্তমানে মোট সক্রিয় বিনিয়োগকারীর ১ শতাংশ কোটিপতি। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ১০ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ১২৫টি। এর মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকার ওপরে বিও অ্যাকাউন্ট ৪১টি, ১০০ কোটি থেকে ১ হাজার কোটির মধ্যে ৩৩০টি, ১০ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ২ হাজার ৬৫১টি, ১ থেকে ১০ কোটি টাকার মধ্যে ১০ হাজার ৯৯৩টি এবং ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৯৮ হাজার ১১০টি।
সূত্র জানায়, ৯ মাসে ১০ লাখ টাকার ওপরে বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৮ হাজার ৩২৬টি। গত বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকার ওপরে বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৭৯৯টি। এর তিন মাস পর অর্থাৎ ৩০ জুন পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৪ হাজার ৬১৫। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর তা আরও বেড়ে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৭২টি। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে বাজারে বড় পোর্টফোলিও বাড়ছে।
সিডিবিএল সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মোট বিও অ্যাকাউন্ট ১৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮২৩টি। এসব অ্যাকাউন্টে ৯ হাজার ৩৯৩ কোটি ৩০ লাখ শেয়ার রয়েছে। যার বাজারমূল্য ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট বা ডিপি অ্যাকাউন্ট ৫৪২টি, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ডসহ মোট তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৭৮৭টি।
অন্যদিকে মোট বিও অ্যাকাউন্টের মধ্যে বর্তমানে সক্রিয় ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৫৫টি। বাকিগুলো নিষ্ক্রিয়। এর মধ্যে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৩টি অ্যাকাউন্টে কোনো শেয়ার নেই। এছাড়া ৭৭ হাজার ৭৫টি বিও অ্যাকাউন্ট কখনো ব্যবহারই হয়নি। আর সিডিবিএলের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৭৭ লাখ ৯৯ হাজার ২১৩টি। কিন্তু নবায়ন ফি না দেওয়ায় প্রতিবছরই বিনিয়োগ লক্ষাধিক বিনিয়োগ অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়।
এদিকে বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজারে মন্দা চলছে। তারল্য সংকটের কারণে স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার লেনদেন ৫শ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। কমছে মূল্যসূচক।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার সম্ভাবনাময়। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানো সম্ভব হলে বিনিয়োগ বাড়বে। এক্ষেত্রে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তি জরুরি।