মহাকাশ প্রযুক্তির নতুন পর্যবেক্ষণ
সন্দ্বীপে মিশে যাচ্ছে আরও দুই দ্বীপ
হক ফারুক আহমেদ
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নদীবিধৌত পলি জমছে বঙ্গোপসাগরে। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে জাহাইজ্যারচর, ভাসানচর, উরিরচর নামের দ্বীপ। এ চরগুলোর মধ্যে জাহাইজ্যারচর ও ভাসানচর দিনে দিনে বিস্তৃত হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এ দুই চর সন্দ্বীপের সঙ্গে মিশে সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল এক দ্বীপাঞ্চল। ইতোমধ্যে ভাসানচর ও জাহাইজ্যারচর সন্দ্বীপের সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রবণতা প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। মহাকাশ প্রযুক্তির প্রয়োগে এক গবেষণায় এমনই নতুন পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) সম্প্রতি এ গবেষণা পরিচালনা করে।
স্পারসোর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাহমুদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা স্যাটেলাইট ছবি থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করি। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। জাহাইজ্যারচর ২০ বছরে অনেক বড় হয়ে গেছে। এটি আগে অনেক ছোট ছিল। ২০০০ সালের ছবিতে ভাসানচর দেখাই যায় না। অথচ পরবর্র্তী সময়ে এটি সৃষ্টি হয়ে দিনে দিনে বড় হচ্ছে এবং একসময় এগুলো আলাদা আলাদাভাবে ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে জাহাইজ্যারচর, ভাসানচর সন্দ্বীপের সঙ্গে মিশে একটা বড় দ্বীপের অংশ হয়ে যাচ্ছে। আমরা জোয়ারের সময়েরও ছবি নিয়েছি। সেখানেও এগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তিনটি দ্বীপই এখন মোটামুটিভাবে মিশে গেছে। এগুলোর মাঝে ছোট ছোট কিছু চ্যানেল আছে; কিন্তু সেগুলো বেশ নগণ্য। স্যাটেলাইট ছবি বা মানচিত্র দেখলেও বোঝা যায়, এগুলো এখন একীভূত হয়ে গেছে।
এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকার দ্বীপগুলোর বিষয়ে আরও পরিকল্পনা করতে পারে। এগুলোকে কীভাবে আরও স্থায়ী রূপ দিয়ে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তার জন্য যদি কেনো কৃত্রিম স্থাপনা তৈরিরও প্রয়োজন হয়, সে বিষয়গুলো ভেবে তিনটি দ্বীপকে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা হতে পারে। কারণ, এখানে জায়গার পরিমাণ অনেক।
এ গবেষণায় দেখা যায়, তিনটি চর মিলে ২০২২ সালে এলাকাটির মোট আয়তন প্রায় ৭২১ বর্গকিলোমিটার। যার মধ্যে সন্দ্বীপ ২৬৭, ভাসানচর ৮০, জাহাইজ্যার চর ২৩১ এবং জেগে ওঠা ভূমি ১৪২ বর্গকিলোমিটার। গবেষণায় আরও বলা হয়, মেঘনা মোহনার মুখে চরগুলো গঠনের পর থেকে প্রাকৃতিকভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব ভূমির আয়তন। বঙ্গোগসাগরের এই অঞ্চলগুলোর ২০০০, ২০১০, ২০২০ এবং ২০২২ সালের স্যাটেলাইট ছবি পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট হয়, দ্বীপগুলোয় পলি জমে জমে নানাভাবে পরিবর্তীত হয়ে বর্তমানে বড় ভূখণ্ড সৃষ্টি হচ্ছে। গবেষণায় আরও বলা হয়, দ্বীপগুলো স্থিতিশীল।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সাধারণত দুভাবে উপকূলীয় এলাকায় ভূমি জেগে ওঠে। একটি হলো বাঁধ দিয়ে প্রবাহিত পলিকে আঁটকে ভূমি সৃষ্টি করা। এটাকে বলে হিউমেন ইন্টারভেনশন। আরেকটি হলো প্রাকৃতিক উপায়ে বিভিন্ন জায়গায় চর জেগে ওঠা। হিউম্যান ইন্টারভেনশনের বিরূপ প্রভাব থাকতে পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে পলি জমে চর সৃষ্টি হলে সেটি ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিবছর দুই থেকে তিন বিলিয়ন টন পলি আসে। গড়ে যার তিনভাগের একভাগ আমাদের নদীনালা, খালবিলে পড়ে যায়। আরেক ভাগ সমুদ্রে পুরোপুরি হারিয়ে যায়। আর বাকি একভাগ সমুদ্রতীরাক্রান্ত এলাকায় জমা হয়। এই জমার পরিমাণ এখন অনেক বেশি। এটি অব্যাহত থাকলে ছোট ছোট মগ্নচড়া জেগে উঠবে। আর যে চড়াগুলো আছে, সেগুলো একটার সঙ্গে আরেকটি যুক্ত হতে থাকবে। ভবিষ্যতে তাই অনেক চর বা ভূমি জেগে উঠতে পারে। এর ইতিবাচক দিক হলো, আমাদের আরও অনেক ভূমি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এর পাশাপাশি অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। যেহেতু প্রাকৃতিক নানা কারণে এগুলো ক্ষয় হয়, সেহেতু এগুলোকে টিকেও থাকতে হবে।