Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন

ব্যাংক খাতে প্রধান চ্যালেঞ্জ পাঁচটি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংক খাতে প্রধান চ্যালেঞ্জ পাঁচটি

করোনার প্রভাব, বৈশ্বিক মন্দা ও দেশীয় পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকিং খাতে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ সম্ভাব্য অস্থিরতা মোকাবিলার ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, সুদের হারে স্থিরতা, ডলার সংকট, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও ঋণ আদায়ে স্থবিরতা এই পাঁচটিই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদন থেকে এসব তখ্য পাওয়া গেছে। প্রতি ৩ মাস পরপর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এবার জুন পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাতে সমস্যা আগে থেকেই ছিল। বৈশ্বিক মন্দায় ডলারের সংকট প্রকট আকারে প্রকাশ করে দিয়েছে। ঋণ আদায় কমে যাওয়াটা এখন বড় শঙ্কার। গত ৩ বছর ধরে ঋণ আদায় হচ্ছে না। বিশেষ করে বড় গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ করছেন না। তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক শুধু ঋণ দিয়েই যাচ্ছে। এটি হতে পারে না। ঋণ আদায় বাড়াতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় ধাক্কা আসবে। বড় সংকট তো এখন প্রকাশ্যে। রিজার্ভ সংকটও প্রকট। এখন বড় আতঙ্কের কারণ মূল্যস্ফীতির হার। এটি বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের টাকা কমে যাচ্ছে। ব্যাংকেরও আয় কমছে। এমন হলে আমানতকারীরা ব্যাংকে টাকা রাখবে না। আবার সুদের হার বাড়ালে উদ্যোক্তাদের শিল্পের খরচ বেড়ে যাবে। তখন তারা মুখ ফিরিয়ে নেবে। এতে কর্মসংস্থান কমে যাবে। অর্থনীতি আরও মন্দায় আক্রান্ত হবে।

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সতর্কতার সঙ্গে সব খাতের লোকজনের সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রতিবেদনে দেখা দেখা যায়, মূল্যস্ফীতির চেয়ে ব্যাংকে আমানত ঋণের সুদের হার অনেক কম। বর্তমানে ঋণের গড় সুদের হার ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ। আমানতের গড় সুদের হার ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। জুনে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সময়েই আমানতের সুদের হারের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় দ্বিগুণ বেশি ছিল। সেপ্টেম্বরে এ হার প্রায় ৯ শতাংশের বেশি। অথচ ওই সময়ে আমানত ও ঋণের সুদের হার বাড়েনি। ফলে ব্যাংকে আমানত রাখলে এখন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি বাবদ টাকায় ক্ষয় ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন কর ও ব্যাংক নানা ধরনের ফি কেটে নিচ্ছে। ফলে নিট হিসাবে আসানতের টাকা গ্রাহক যা জমা রাখছে তার চেয়ে কমে যাচ্ছে। এতে গ্রাহকরা সঞ্চয়ে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ফলে ব্যাংকে সঞ্চয়ের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। এছাড়া বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণেও গ্রাহকরা এখন ব্যাংকে সঞ্চয় করতে পারছেন না। কেননা যে টাকা সঞ্চয় করতেন তা দিয়ে বাজার সামাল দিতেই এখন ব্যতিব্যস্ত। একই কারণে সরকারি খাতের সঞ্চয়পত্র বিক্রিও কমে গেছে। সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে পরিশোধ করা হয়েছে বেশি। আগে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হতো। পরিশোধ করা হতো কম।

ঋণের সুদের হারের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি হওয়ায় ব্যাংকের প্রকৃত আয় কমে গেছে। ঋণের সুদ থেকে মূল্যস্ফীতির হার বাদ দিলে ব্যাংকের আয় তেমন থাকে না। ফলে ব্যাংকগুলো এখন সুদ বহির্ভূত আয়ের দিকে বেশি নজর দিয়েছে। এতে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা ধরনের ফি আদায়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ ব্যাংকের ৯০ শতাংশের বেশি আয় হওয়ার কথা সুদ থেকে।

করোনার কারণে গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে ব্যাপক ছাড় দেওয়া হয়েছিল। যা এখনও সীমিত আকারে চালু আছে। ফলে এখন বড় অঙ্কের ঋণ থেকে আদায় কমে গেছে। খেলাপি ঋণে ছাড় দিয়ে কমিয়ে রাখা হয়েছে। তারপরও এটি বাড়ছে। ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয় কমে গেছে। যেগুলো আদায় হচ্ছে তার বেশিরভাগই কাগুজে মুনাফা। অর্থাৎ ঋণকে নিয়মিত দেখিয়ে সুদকে আয় খাতে নিয়ে মুনাফা দেখাচ্ছে। বাস্তবে ঋণের সুদ আদায় হচ্ছে না। এটি ব্যাংক খাতের জন্য আগামীতে বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। তারা এই ধরনের ছাড় তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, মার্চে ৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছিল। জুনে বেড়েছে ৭টি ব্যাংকে। অর্থাৎ আরও একটি ব্যাংক খেলাপি ঋণে আক্রান্ত হলো। শীর্ষ খেলাপিদের ঋণ মার্চে ১৫টি ব্যাংকে বেড়েছিল, জুনে বেড়েছে ১৬টি ব্যাংকে। ঋণের বিপরীতে একটি ব্যাংকে জামানত কমেছে। ২টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ২টি ব্যাংক সুদের হারের ঝুঁকিতে রয়েছে। খেলাপি ঋণ বাড়ায় মূলধন ও প্রভিশন কমেছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে। ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি মোকাবিলায় মূলধন পর্যাপ্ততা কমে গেছে। মার্চে মূলধন পর্যাপ্ততা ছিল ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ। জুনে তা কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততা ছিল ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে মূলধন পর্যাপ্ততা কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে মূলধন কমেছে। মূলধন বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। তবে কয়েকটি ব্যাংকে এ সংকট। তাদের তদারকির আওতায় আনা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক কারণে ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট প্রকট হয়েছে। এটি ধীরে ধীরে কমে যাবে। আমদানি ব্যয় ও ডলারের দাম বাড়ার কারণে এমনটি হয়েছে। বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে আমদানি ব্যয়কে বাড়িয়ে দিয়েছে।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম