Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফ

জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হিসাবে গরমিল

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ দুই সূচকের হিসাব পদ্ধতিতে ব্যাপক সংস্কার আনতে হবে * জিডিপির হিসাব ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশের প্রস্তাব * আগস্টের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশে দেরির কারণ জানতে চায় আইএমএফ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হিসাবে গরমিল

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও মূল্যস্ফীতির হিসাব পদ্ধতিতে গরমিল আছে। ফলে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ হচ্ছে, সেগুলোয়ও বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না।

হিসাব পদ্ধতির ত্রুটির কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বেশি দেখানো হচ্ছে। একই কারণে মূল্যস্ফীতির হার দেখানো হচ্ছে কম। অর্থনীতির প্রধান এ দুটি সূচকেরই হিসাব পদ্ধতিতে ব্যাপক সংস্কার আনার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে প্রতি তিন মাস পর জিডিপির হিসাব প্রকাশের সুপারিশ করেছে। এছাড়া গত আগস্টের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশে কেন দেরি হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে কথা বলেছে আইএমএফ। ঢাকা সফররত আইএমএফ মিশনের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে মিশনের অন্য সদস্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর পক্ষে সংস্থার মহাপরিচালক মতিয়র রহমানের নেতৃত্বে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং উইং পরিচালক জিয়াউদ্দিনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা বৈঠকে অংশ নেন।

এ প্রসঙ্গে বিবিএসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিষয়। এ বিষয়ে কিছু করতে হলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আইএমএফ মিশনকে জানান।

বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আইএমএফের একটি মিশন বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছে। তারা ৯ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে। ২৬ অক্টোবর থেকে তারা মিশন শুরু করেছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, আইএমএফ বিভিন্ন সূচকে হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এগুলোর গ্রহণযোগ্যতার কথাও বলেছে। সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার বিষয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলেছে, তথ্য যদি সঠিক না থাকে, তাহলে অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন নির্ভুল হবে না। যে কারণে সরকারের পলিসি অনুযায়ী কোনো খাতেই সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

আইএমএফ মনে করে, যে প্রক্রিয়ায় জিডিপির হিসাব করা হয়, তা ত্রুটিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে এর মিল নেই। ফলে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি দেখানো সম্ভব হচ্ছে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হিসাবেও শুভংকরের ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। কেননা এ হার বেড়ে গেলেই ফাঁকির প্রবণতাও বেড়ে যাবে। এসব তথ্য আড়াল করার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না। সব সূচকে উন্নয়ন দেখানো হলেও সামান্য একটু আঘাতেই সব এলোমেলো হয়ে পড়ছে।

বৈঠকে আইএমএফ জিডিপির হিসাব ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশের প্রস্তাব করেছে। তারা বলেছে, বিশ্বের অনেক দেশ ত্রৈমাসিক, এমনকি মাসিক ভিত্তিতেও জিডিপির হিসাব প্রকাশ করছে। বাংলাদেশকেও এটি করা উচিত। একই সঙ্গে তারা মূল্যস্ফীতির তথ্য সঠিক সময়ে প্রকাশের কথা বলেছে।

এ প্রসঙ্গে বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে পরিসংখ্যান ব্যুরো সারা বছরের সাময়িক জিডিপির হিসাব করে। অর্থবছর শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত হিসাব। তবে প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির হিসাব করতে এ সংক্রান্ত পদ্ধতির আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এতে কারিগরিক সহায়তা দিচ্ছে আইএমএফ।

তিনি আরও বলেন, প্রতিনিধিদলটি এই কাজের অগ্রগতির তথ্য জানতে চেয়েছে। সরকারের সঙ্গে ঋণ নিয়ে সংস্থাটির যে আলোচনা চলছে, এর সঙ্গে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই সভার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও তিনি জানান। বৈঠকে বিবিএস জানায়, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ভিত্তি বছর পরিবর্তন করতে তারা চার বছর ধরে চেষ্টা করছে। এটি এখনো সম্পন্ন হয়নি। এটি সম্পন্ন হলেই তারা তিন মাস পরপর জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য দিতে পারবে বলে আইএমএফকে জানানো হয়।

বিবিএস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি পরিমাপ করা হয় ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি ধরে। এটি পরিবর্তন করে ২০১৫-১৬ অর্থবছর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও ভিত্তি বছর পরিবর্তন করতে পারেনি সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, প্রতি প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশে কিছু সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এখন বছরে একবার উৎপাদনের তথ্য সংগ্রহ করা হলেও তখন চারবার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এ কারণে অন্যান্য সংস্থার প্রস্তুতির বিষয়টিও থাকতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে সবাইকে প্রস্তুত করছি। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব প্রকাশ হচ্ছে। বাংলাদেশকেও এটি করতে হবে। তবে এতে কতটা সময় লাগবে, তা বলা যাচ্ছে না। এসব বিষয় আইএমএফকে জানানো হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগস্টে মূল্যস্ফীতির তথ্য দিতে দেরি হয়েছে কেন, এটার কারণ জানতে চেয়েছে প্রতিনিধিদল। এ প্রসঙ্গে আইএমএফকে জানানো হয়েছে, তথ্য প্রকাশ করতে বিবিএসকে উচ্চপর্যায় থেকে অনুমতি লাগে, এটা পেতে দেরি হয়েছে। এ কারণেই মূলত তথ্য প্রকাশে দেরি হয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো কারণ নেই।

প্রতিমাসের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদন তৈরি এবং পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহে তা প্রকাশের রীতি থাকলেও আগস্টের মূল্যস্ফীতির তথ্য সেপ্টেম্বরেও প্রকাশ হয়নি। যদিও সেপ্টেম্বরের তথ্য অক্টোবরে প্রকাশ করা হয়েছে। আগস্টে এ হার বেশি বেড়ে গিয়েছিল। সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমেছে। যে কারণে আগস্টের তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি। কিন্তু সেপ্টেম্বরের তথ্য প্রকাশ করেছে। গত বুধবার আইএমএফ পরিকল্পনা বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে আরও গভীরভাবে সমীক্ষা করার কথা বলেছে। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের মান বাড়ানো, দ্রুত বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে। একই সঙ্গে জনসংশ্লিষ্টতা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা বলেছে।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম