ইসি’তে সাবেক কমিশনার ও সচিবদের বৈঠক
প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ ও দূরত্ব কমানোর সুপারিশ
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ ও দূরত্ব কমানোর সুপারিশ](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2022/10/20/image-607258-1666215890.jpg)
মাঠ প্রশাসনের ওপর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ ও তাদের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর সুপারিশ করেছেন কয়েকজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও ইসির সচিব। তারা ইসি ও মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের ওপরও জোর দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা সতর্ক করে বলেছেন, রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অনেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও নির্বাচন কর্মকর্তা সরকারের কথাই শুনবে। যারা ইসির কথা শুনবে না ও নির্বাচনে অনিয়ম করবে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ইসির হাতে রাখতে হবে। এরই অংশ হিসাবে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে যারা অনিয়ম করেছে তাদের শাস্তির আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপনের সুপারিশও করেন তারা। জাতীয় নির্বাচনে ডিসির পাশাপাশি ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের কথা বলেন। নির্বাচন ভবনে বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তারা এসব সুপারিশ করেন। ওই বৈঠকে সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনার ও ইসির সচিবসহ ১৪ জন অংশ নেন। ওই বৈঠকে প্রায় সব বক্তাই অনিয়মের কারণে গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচন বন্ধ করে ইসির দেওয়া সিদ্ধান্তকে সঠিক ছিল বলে মন্তব্য করেন। এ ধারা অব্যাহত রেখে নির্বাচনে অনিয়ম হলে প্রয়োজনে বারবার ভোট বন্ধ করার সুপারিশ করেন। তবে ইসির সাবেক একজন সচিব ওই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন। এছাড়া বেশিরভাগ বক্তা জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের হাতেই থাকার ওপর জোর দেন। তারা বলেন, এনআইডির সঙ্গে ভোটার তালিকা ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া জড়িত। এটি সরকারের হাতে গেলে গণ্ডগোল সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বৈঠকে ইভিএম ও সিসি ক্যামেরা নিয়েও আলোচনা হয়। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে ভিন্ন মত উঠে আসে। তবে ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের ওপর জোর দেন তারা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে ৩ ঘণ্টা এ বৈঠক চলে। বৈঠকে সাবেক তিনজন সিইসি, চারজন নির্বাচন কমিশনার ও সাতজন ইসির সাবেক সচিব ও অতিরিক্ত সচিব মিলিয়ে ১৪ জন অংশ নেন। যদিও নির্বাচন কমিশন ২৯ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সূচনা বক্তব্যে সিইসি গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচন বন্ধে ইসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাবেকদের মতামত জানতে চান। একইসঙ্গে জাতীয় নির্বাচনে সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ, সব দলের অংশগ্রহণ এবং এসব ক্ষেত্রে আইন সংস্কারের প্রয়োজন আছে কীনা-সে বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান।
বৈঠক শেষে আলোচনার বিষয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনে আমরা যে অ্যাকশনটা নিয়েছি (পুরো আসনের ভোট বন্ধ করা), এ বিষয়ে উনারা বলেছেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সঠিক হয়েছে। আইনগতভাবে ও সাংবিধানিকভাবে ঠিক হয়েছে। উনারা আমাদের মুরব্বিজন, গুরুজন হিসাবে পরামর্শ দিয়েছেন-সততার সঙ্গে, সাহসিকতার সঙ্গে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, উনাদের কাছে যে গাইডেন্স, পরামর্শ পেয়েছি, বক্তব্য শুনেছি; আমাদের এডুকেটেড করেছেন, ইন্সপায়ার করেছেন।
দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ইসির উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ হবে- সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনারের এমন পরামর্শের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, অপেক্ষা করেন। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি; রিপোর্টটা আসুক। তারপরে আপনারা দেখেন আমরা কোনো পদক্ষেপ নেই কিনা। ওয়েট অ্যান্ড সি। কাজেই একটু অপেক্ষা করতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আলোচনার বিষয়ে সিইসি বলেন, এনআইডিটা ইসির কাছে থাকা প্রয়োজন-একবাক্যে সবাই এ কথাটা বলেছেন। উনাদের যে নলেজ রয়েছে আমার সেটা নেই। ইভিএম নিয়ে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে কথা হয়েছে। অধিকাংশই পক্ষে বলেছেন। এটা নিয়ে জনমনে একটা নেগেটিভ পারসেপশন রয়েছে। এ পারসেপশনটা দূর করতে হবে।
বৈঠকে সাবেক সিইসি বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ, কেএম নূরুল হুদা ও কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, মো. শাহনেওয়াজ অংশ নেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন-সাবেক ইসি সচিব ড. মোহাম্মাদ সাদিক, মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ, সিরাজুল ইসলাম, হেলালুদ্দীন আহমদ, এমএম রেজা এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ও মোখলেছুর রহমান।