Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

অর্থবছরের প্রথম তিন মাস

রাজস্ব হ্রাস ৫৫১৯ কোটি টাকা

বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব রাজস্ব খাতে * তিন মাসে প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২২, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজস্ব হ্রাস ৫৫১৯ কোটি টাকা

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বড় ধরনের আঘাত আসছে আমদানি ও রপ্তানি খাতে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিরাজ করছে ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি। পরিস্থিতি সামলে নিতে ভোজ্যতেলসহ কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস করা হয়।

এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর। বৈশ্বিক আর্থিক সংকটে পর্যটকদের আনাগোনাও কমছে। মূল্যস্ফীতির কারণে কমেছে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। এ ধরনের নানাবিধ সংকটের মুখে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আয় কমেছে ৫৫১৯ কোটি টাকা। তবে এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা ।এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৬৫ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) একই সময়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব আসে ৫৮ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সরকার অর্থনীতি সুরক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে অর্থ ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধন, সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তিন ধরনের ক্যাটাগরি নির্ধারণ, আমদানি পর্যায়ে বেশ কিছু পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। ফলে আগামীতে দেশের অর্থনীতির গতি সংকুচিত হবে, প্রবৃদ্ধিও কমবে। আর অর্থনীতির সূচক রাজস্ব, বাজেট বাস্তবায়ন, উন্নয়ন প্রকল্পের গতিসহ সবকিছুতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর ধারাবাহিকতায় রাজস্ব আয়ে প্রথম তিন মাসে ধাক্কায় পড়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ডলার সংকট মোকাবিলায় আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এছাড়া এলসি মার্জিন আরোপ করা হয়। ফলে আমদানি অনেক কম হচ্ছে। এ খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব কমেছে। তবে প্রতিবছরই রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হয়। এটি অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এখান থেকে বের হতে হলে এ খাতে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। প্রয়োজনে একটি ‘কর কমিশন’ গঠন করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় জিডিপির অনুপাতে কর আয় বাংলাদেশে কম। তিনি আরও বলেন, আয় কম হওয়ায় আমাদের ব্যয় ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হচ্ছে। বাজেটের আকার বড় করা যাচ্ছে না। ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে এটি ভারসাম্যহীনতায় গিয়ে দাঁড়াবে।

মূলত তিনটি খাত থেকে রাজস্ব আহরণ করা হয়। এর মধ্যে আছে আমদানি ও রপ্তানি খাত, স্থানীয় পর্যায়ে মূসক বা ভ্যাট থেকে আয় এবং ভ্রমণ কর। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাময়িক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে উল্লিখিত তিনটি খাতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রকৃত আয় কমেছে।

আমদানি ও রপ্তানি খাত : চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে ২৫ হাজার ১২১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর বিপরীতে আয় হয় প্রায় ২২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। এ সময় রাজস্ব আহরণ কমছে ২৬৮৭ কোটি টাকা। তবে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, ডলার সংকট ও রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে পণ্য আমদানি নিরুসাহিত, এলসিতে মার্জিন আরোপ, অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি হ্রাস করা হয়। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চাল ও ভোজ্যতেল আমদানি শুঙ্ক কমানো হয়। চাল আমদানি শুল্ক ও করভার ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে আনা হয়। ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয় ভোজ্যতেলের ওপর থেকে। এসব উদ্যোগের ফলে আমদানি থেকে রাজস্ব আহরণ কমছে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে জুলাই-আগস দুই মাসে আমদানি ব্যয় হয়েছে ১৩৩৫ কোটি মার্কিন ডলার। একই সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ৮৫৮ কোটি ডলার।

স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি : করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী। যে কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কমছে। এর প্রভাব পড়েছে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর। যে কারণে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট খাতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৪ হাজার ৬৪২ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৩ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। ওই হিসাবে আদায় কমছে ১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। তবে আদায় কমলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ০৬ শতাংশ।

আয়কর ও ভ্রমণ করে বিরূপ প্রভাব : চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ হলেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৪০৫ কোটি টাকা। ডলারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিসহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে পর্যটন খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। ফলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রত্যাশা করা হয়েছিল আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ২১ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা আদায় করা যাবে। কিন্তু আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৮৭ কোটি টাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম