Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সিপিডির সংলাপ

অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২২, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে

বর্তমানে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল অশোধিত তেলের দাম ৯৩ ডলার। কিন্তু দেশের বাজারে নতুন যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে ধরা হয়েছে ১১১ ডলার। অর্থাৎ চোখের সামনেই ১৮ ডলার বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে গত ৭ বছরে এ খাত থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ ছাড়াও খাতটিতে ব্যাপক দুর্নীতিও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে জ্বালানি তেলের নতুন দাম যে কোনো বিবেচনায় অন্যায় এবং অযৌক্তিক। বুধবার সিপিডি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে এসব মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। সংলাপের বিষয় ছিল ‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এড়ানো যেত কি না।’

তাদের মতে, সরকার এ খাতকে রাজস্ব আয়ের বড় মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করছে। উপরন্তু জ্বালানি তেলের রেকর্ড দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষি, রপ্তানি এবং মানুষের জীবনযাত্রার ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ইতোমধ্যে যাতায়াত ও পরিবহণ ভাড়াসহ সব ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তারা মনে করেন, কৃষি উৎপাদন ও শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিসহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

তারা বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতিব্যারেল তেল ১১০ ডলার হলেও দেশে সব মিলিয়ে প্রতিলিটারের খরচ ৮২ টাকার কাছাকাছি। সেটি ৮৫ টাকা বিক্রি করলেও কিছু টাকা লাভ হবে। অথচ সরকারের অদক্ষতায় উচ্চ মূল্যের দায় জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সংলাপে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা সরকারের কাছে তেলের দাম পুনঃনির্ধারণের জোর সুপারিশ করেছেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমই) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাপরিচালক মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাত থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। এক্ষেত্রে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৮০ টাকা থেকে ১১৪, অকটেনের দাম ৮৯ থেকে ১৩৫ এবং পেট্রোলের দাম ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিজেলে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ, অকটেনে ৫১ দশমিক ৬৯ এবং পেট্রোলের দাম ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনা চলছে।

সংলাপে মূল আলোচনা উপস্থাপন করেন ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, করোনার ধাক্কা মানুষ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। অপরদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন কমতে শুরু করেছে, ঠিক সে সময়ে দেশে তেলের দাম ৪২ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়েছে। অথচ ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪৬ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে বিপিসি। এই মুনাফা থেকে সরকার ১০ হাজার কোটি টাকাও নিয়েছে। তিনি বলেন, জ্বালানি তেল আমদানি থেকে সরকার কর ৩৪ শতাংশের মতো কর আদায় করে। এছাড়াও আদায়সহ অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে। আর দাম বাড়ানো নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যেদিন দাম বাড়ানো হলো, ওইদিনই বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৯৩ ডলার। অর্থাৎ দাম কমতে শুরু করেছে। তবে এর সঙ্গে ব্যাংকের খরচ, ব্যবস্থাপনা ব্যয় এবং বিমার খরচও রয়েছে। তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশের চেয়ে অন্যান্য দেশে তেলের দাম বেশি। কিন্তু এ তথ্য একেবারেই সঠিক নয়। কারণ, অকটেনের দাম নেপাল ও ভুটানে কিছুটা বেশি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে ডিজেলের দাম অনেক কম। নীতিনির্ধারকদের এটি মাথায় রাখা উচিত। আবার কেউ কেউ জার্মানি, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের সঙ্গে তুলনা করছেন। হংকংয়ের মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৫০ হাজার ডলার। একই রকম আয় জার্মানি ও সিঙ্গাপুরের। আর বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপি ২ হাজার ৫০৩ ডলার। সঙ্গত কারণে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা অযৌক্তিক। তাই শেষ পর্যন্ত এগুলো ধোপে টিকবে না। তিনি বলেন, সরকারি হিসাবেই বর্তমানে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। যদিও বাস্তবে তা আরও বেশি। এরপর তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দেবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সরাসরি প্রভাব পড়বে তিনটি খাতে। এর মধ্যে মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণ ব্যয় ইতোমধ্যে বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, উৎপাদন খরচ বাড়বে। খাত সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে কৃষির উৎপাদন খরচ অনেক বাড়বে। এমনিতেই এ বছর বৃষ্টি কম। জুলাইয়ে বৃষ্টিপাতের যে রেকর্ড করা হয়েছে, তা ৪০ বছরের মধ্যে কম। এ অবস্থায় সেচ বেশি লাগছে। এরপর ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেচের খরচ বেড়ে গেছে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চাষের খরচও বেড়ে যায়, যা বছর শেষে খাদ্য আমদানি বাড়িয়ে দেবে। অন্যদিকে শিল্প খাতের উৎপাদনে প্রভাব পড়বে। বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে। অন্যান্য খাতেও খরচ অনেক বেড়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে ব্যবসায় মুনাফা কমবে। তৃতীয়ত, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের টিকে থাকা কষ্টকর হবে। তার মতে, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে এখনো মানুষ স্বাভাবিক আয়ে ফিরে আসতে পারেনি। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। আবার সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। কারণ আমানতের সুদের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেশি। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়াও দাম বাড়ানোর আগে সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হয়নি। ফলে তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নিম্নআয়ের মানুষের জন্য রেশন কার্ড বাড়াতে হবে। আর এই কার্ড বণ্টনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ এখানে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রয়েছে। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত। এর আগে যেসব প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, তার বেশিরভাগই বড় ব্যবসায়ীরা পেয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিলসহ তাদের অনেক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুসারে ছোট ব্যবসায়ীদের সুবিধা কম। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার সময় এসেছে। তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলোতে তেলের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তা সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। এর বড় যুক্তি হলো এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এখনো সময় এসেছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। মূল্য নির্ধারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কীভাবে তেলের দাম নির্ধারণ হয়, তা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। কারণ দাম নির্ধারণের বিষয়টি সাধারণ মানুষকে একেবারেই জানানো হয় না। যারা এ খাতের অংশীজন, তাদের বাদ দিয়ে একক সিদ্ধান্তে দাম বাড়ানো হলো। বিপিসি একচেটিয়া ব্যবসার দিকে চলে গেছে। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনায় সংস্কার জরুরি। কারণ এখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। অন্যদিকে জ্বালানির জন্য বাংলাদেশে গ্যাস খাতে সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো হয়নি। বাংলাদেশে তিনটি কূপ খনন করলে অন্তত একটিতে গ্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে বিনিয়োগ নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতেও বিনিয়োগ দরকার। তার মতে, সরকার বিভিন্ন খাতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে পারেনি। আর সরকারের এই অদক্ষতায় উচ্চ মূল্য জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, যে তথ্যের ওপর নির্ভর করে সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে, তা ভ্রমাত্মক ও ত্রুটিপূর্ণ। কারণ ৭ বছরে বিপিসি ৪৬ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সেখান থেকে সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। বাকি ৩৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে বলা হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এই অর্থ কোথায় বিনিয়োগ হয়েছে, মানুষের সামনে তা পরিষ্কার করতে হবে। বিভিন্ন ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির ২৫ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা আমানত রাখার তথ্য পাওয়া গেছে। এই অঙ্কের টাকা থাকার পরও কেন তেলের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হলো তা পরিষ্কার করতে হবে। তার মতে, বর্তমানে প্রতি ব্যারেল তেল ৯৩ ডলারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ১১১ ডলার ধরে দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ব্যাখ্যা জানা জরুরি। তিনি বলেন, এভাবে মূল্য না বাড়িয়েও পরিস্থিতি এড়ানো যেত।

ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘জ্বালানির ক্ষেত্রে আমরা ভতুর্কি কমানোর পক্ষে, কিন্তু তার মানে এই নয়, একসঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। এটি ধাপে ধাপে বাড়ানো যেত। একসঙ্গে এভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো। সরকার এত সাহস কীভাবে করল তা আমার বুঝে আসে না।’ তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, উন্নয়নশীল দেশে ডিজেলে ভর্তুকি অনেক আগে থেকে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু উন্নত দেশে দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল এবং গ্যাসসহ সবকিছুর দাম বাড়ছে। এই সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। আমরা এর যুক্তি খুঁজে পাইনি। এর ফলে কৃষি, রপ্তানি এবং মানুষের জীবনযাত্রার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তার মতে, বাংলাদেশ এক সময়ে ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। ১৯৭৫ সালে পুরো দেশ সরিষার তেলে চলত। বর্তমানে পুরো চাহিদাই আমদানিনির্ভর সয়াবিন তেলে মেটানো হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম প্রসঙ্গে বুয়েটের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হলো। তখন ব্যাখ্যা ছিল বিশ্ববাজারে তেলের ব্যারেল ৮০ ডলার। তাই দেশের বাজারে প্রতি লিটারের দাম ৮০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববাজারে যেখানে প্রতি ব্যারেলের দাম ৯৩ ডলার, সেখানে দেশে ১১৪ টাকা করল হলো কিসের ভিত্তিতে।

এর কোনো ব্যাখ্যা কোথা থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মতে, বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল তেল ১১০ ডলার হলেও দেশে সব মিলিয়ে প্রতি লিটারের খরচ ৮২ টাকার কাছাকাছি। তিনি মনে করেন, ৮৫ টাকা বিক্রি করলেও সরকারের লোকসান হওয়ার কথা নয়। এ অবস্থায় কীভাবে কার পরামর্শে এই দাম বাড়ানো হলো তা বুঝে আসে না। মনে হচ্ছে, সরকার তেল খাতকে রাজস্ব আয়ের উৎস হিসাবে ব্যবহার করছে। তবে সরকার ভীষণ সমস্যায় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডলারের মূল্য কোথায় গিয়ে থামবে, তা কেউ জানে না।

অন্যদিকে ভারতে তেল পাচারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটিও যৌক্তিক নয়।

ফজলে শামীম এহসান বলেন, সরকারি এ সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা দুভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রথমত পণ্য উৎপাদনে খরচ বাড়িয়ে দেবে। এমনতিই বিশ্ব সংকটের কারণে পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষির সুযোগ নেই। তাহলে তারা অন্য দেশে চলে যাবে। বর্তমানে অর্ডার ধরে রাখাই কঠিন। অন্যদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে হবে। সবকিছু মিলে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় কতদিন টিকে থাকা যাবে তা বলা অনিশ্চিত। দুই-এক মাস পর পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বাজারে কিছু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সুযোগ নিচ্ছে। আগে থেকে পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানো হলে এ পরিস্থিতি এড়ানো যেত।

আনোয়ার ফারুক বলেন, ভাড়া না বাড়িয়ে পরিস্থিতি এড়ানো যেত। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম কমছে, তখন দেশে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়ানো হলো। এটি অন্যায় এবং অযৌক্তিক। তার মতে, বাংলাদেশে ৯৭ শতাংশ চাষাবাদ মেশিন দিয়ে চাষ করা হয়। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তের ফলে কৃষকের সেচে খরচ বাড়বে ৪ হাজার ৮শ কোটি টাকা। তার মতে, কৃষক সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেকে চাষাবাদ বন্ধ করে দেবে। ফসল উৎপাদনের পর অনেকেই ন্যায্যমূল্য পাবে না। মোজাম্মেল চৌধুরী বলেন, দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ শ্রমিককে যাতায়াত ভাতা দেওয়া হয় না। তারা শুধু বেতন পায়। বেতনের টাকা থেকেই যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু সিদ্ধান্তের ফলে ঢাকায় প্রতিজনের যাতায়াত খরচ ৭০ থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত বাড়বে। প্রতি মাসে বাড়বে ২ হাজার ১শ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া খুবই কঠিন হবে। তবে এর ফলে কিছু মানুষ গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া আড়াই টাকা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, পরিবহণ মালিকরা তা ৭ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম