Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

দুর্যোগে ত্রাণ অপ্রতুল দুর্ভোগ ভয়াবহ

প্রত্যন্ত এলাকায় জীবন দুর্বিষহ * আট নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে * বানভাসিরা অর্ধাহারে-অনাহারে

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২২, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুর্যোগে ত্রাণ অপ্রতুল দুর্ভোগ ভয়াবহ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে মঙ্গলবার হেলিকপ্টার থেকে দেওয়া ত্রাণ সংগ্রহ করতে বন্যাদুর্গত মানুষের ভিড়। ছবি- হাবিব সরোয়ার আজাদ

টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত অধিকাংশ ঘর-বাড়ি ও রাস্তাঘাটে এখনো পানি।

মঙ্গলবার বৃষ্টি কম হওয়ায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে খুবই ধীরে ধীরে পানি নামতে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বন্যাকবলিত প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী না পৌঁছানোয় গরিব-অসহায় মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। কষ্টে তাদের দিন কাটছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে বানভাসিরা অর্ধাহারে-অনাহারে রয়েছেন। দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। এছাড়া বানভাসিদের মধ্যে রোগবালাইও ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে।

বৃষ্টি কিছুটা কম হওয়ায় সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় এসব স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এখনো দেশের প্রধান সব নদনদীর পানি বাড়ছে। এ কারণে কিশোরগঞ্জ, রংপুর, নীলফামারী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

এছাড়া নতুন করে প্লাবিত হতে পারে শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার নিম্নাঞ্চল। দেশের আটটি নদীর ১৮ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ২৩ গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভাঙনকবলিত মানুষ।

এ সম্পর্কে ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

সিলেট : সুরমা নদীর পানি ধীরগতিতে নামলেও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। ফলে বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ছে। সুবিধাজনক স্থানে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছলেও যাতায়াতের অসুবিধার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রসহ অনেক স্থানে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছছে না।

তবে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, সব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠনও পরিবহণ ভাড়া বেশি হওয়ায় দুর্গম এলাকায় ত্রাণ দিচ্ছে না। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে, বন্যার কারণে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন সিলেট-সুনামগঞ্জ জেলা পর্যায়ের উৎসব বাতিল করা হয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ১৩টি উপজেলা ও পাঁচটি পৌরসভার পুরোপুরি এবং সিটি করপোরেশনের ৮০ ভাগ এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে। পানিবন্দি প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। আড়াই লাখ মানুষ পাঁচ শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়েছে। জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান জানান, ৬১২ মেট্রিক টন চাল, ৭ হাজার ৯০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

৮ হাজার ১১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার আছে। সুনামগঞ্জে ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্গত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে ১৪০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। চারটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াটার প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আড়াই লাখ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগেও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও অন্য ইউনিটের সহায়তায় বন্যাকবলিত অর্ধ লাখ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫০ হাজার গবাদি পশু উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা মেজর হাসিব জানান, সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ড ইউনিটসহ ১৩টি ব্যাটালিয়নের ২৩ প্লাটুন সদস্য সিলেট ও সুনামগঞ্জে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

৬০টি নৌকার সাহায্যে উদ্ধার কাজ চলছে। এ ছাড়া খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সিলেটের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. জনমেজয় দত্ত জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে কিছুটা সর্দি-কাশি, ঠান্ডাজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ঘর-বাড়িতে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একইসঙ্গে পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

বালাগঞ্জ (সিলেট) : বালাগঞ্জ উপজেলার শতভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা বানভাসি মানুষের মধ্যে চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি লোকজন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েক হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িসহ বিভিন্ন উঁচু বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন।

সরকারি-বেসরকারিভাবে কোনো ধরনের ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না বলে তারা অভিযোগ করেন। উপজেলার কয়েক হাজার পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটে বিপাকে পড়েছেন মানুষ।

ছাতক (সুনামগঞ্জ) : ছাতক উপজেলায় বন্যার পানিতে শত শত ঘর-বাড়ি, ক্ষেতের ফসল ও পুকুর তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন ও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে।

এদিকে হাট-বাজার ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সব পণ্যের দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে মানুষের হয়রানি আরও বেড়েছে। সব গ্রাম অন্ধকারে নিমজ্জিত। বিদ্যুৎ নেই।

মানুষ মোমবাতিও জোগাড় করতে পারছে না। মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে চোর-ডাকাতদের উপদ্রবও বেড়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। নৌকা না পাওয়ার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ করা যাচ্ছে না।

মঙ্গলবার সকালে ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে বিভিন্ন গ্রামে দেড় হাজার বানভাসি মানুষের মধ্যে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে খাবারের পাশাপাশি চাল বিতরণ করা হয়। মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির উদ্যোগে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আবুল লেইছ মোহাম্মদ কাহারের নেতৃত্বে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

নেত্রকোনা : জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরী উপজেলাসহ ১০টি উপজেলার ৬৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বেশি খারাপ অবস্থা কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরী উপজেলা।

বন্যায় গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এবং বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ১২ লক্ষাধিক মানুষ। বানভাসি মানুষের অভিযোগ, তারা প্রয়োজনীয় ত্রাণ পাচ্ছেন না। বন্যায় মদন উপজেলার ৮ ইউনিয়নের ৪ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) : কলমাকান্দায় বন্যার পানি ধীরগতিতে কমতে শুরু করেছে। তবে উপজেলাজুড়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ জন ভর্তি হয়েছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীই ২৫ বছরের নিচে। এছাড়া বন্যায় সাপে কাটা তিন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

হবিগঞ্জ : সিলেট ও সুনাগঞ্জের বন্যার পানি কালনি-কুশিয়ারা নদী দিয়ে হবিগঞ্জে নামছে। অন্যদিকে জেলার ভাটি এলাকা দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা নদীর পানি বাড়ছে। এ কারণে উজান-ভাটি দুদিক থেকে হবিগঞ্জে পানি ঢুকছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন আড়াইশ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ। পানিবন্দি সব জায়গায় খাদ্য সহায়তা পৌঁছায়নি। অনাহারে দিন কাটছে বানভাসিদের।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, খোয়াই নদীর পানি ইতোমধ্যে বিপৎসীমার অনেক নিচে নেমে গেছে। তবে হাওড়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য জেলায় ৯৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে ৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানসংলগ্ন পল্লিবাসীর যোগাযোগের একমাত্র সেতু ভেঙে গেছে। এর আগে চলতি মৌসুমের শুরুতে সেতুটির একটি অংশ ভেঙে পড়লে কোনোরকম জোড়াতালি চালানো হয়। ত্রিপুরাপল্লির বাসিন্দা চিত্ত দেববর্মা জানান, গত বর্ষায় আমাদের ৫টি ঘর ছড়ায় বিলীন হয়েছে। এবার আমাদের চলাচলের একমাত্র সেতুটি বন্যা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে বাপদাদার ভিটের অস্তিত্ব থাকবে না।

শেরপুর : ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার মহরশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পুরনো ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৩ সেন্টিমিটার বাড়লেও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হতে পারে। এদিকে বন্যায় বাঁধ, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) : গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি না হলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওড় হাকালুকিতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলিয়ে ৪০ হাজারের বেশি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলা ছাড়াও হাকালুকি হাওড় তীরের জুড়ী উপজেলার তিন দিন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করতে স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বালুভর্তি বস্তা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারদিকে বাঁধ দিয়েছেন।

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) : উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর ভারি বৃষ্টির পানিতে কটিয়াদী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ২৩টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাড়িঘর, রাস্তা ও দোকানপাটে পানি উঠেছে। বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা। এদিকে, মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ-সদস্য নূর মোহাম্মদ বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি জানান, দুর্গতদের সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : নাসিরনগরে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলার প্রায় ৩০ কিলোমিটার আধাপাকা-পাকা সড়ক তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের সেতু ভেঙে গেছে। ৭০০টি পুকুর ও সাড়ে ৪ হাজার রোপা আমন ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোনাব্বর হোসেন জানান, বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উপজেলার ৭ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৬৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। পরিবারগুলোকে ১৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) : ভূঞাপুরে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাবসারাসহ নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। একই সঙ্গে চরাঞ্চলের অসংখ্য পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে গোবিন্দাসীর যমুনা বেড়ি বাঁধে (কালা সড়কে) আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা, নিকরাইল ও অর্জুনা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভাঙন কবলিত মানুষ।

পাউবো সূত্র জানায়, সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার, ঝিনাই নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম