জমকালো আয়োজনের প্রস্তুতি
উৎসবে মিলবে সারা দেশের মানুষ
হাসিবুল হাসান
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আর বাকি মাত্র ২২ দিন। আগামী ২৫ জুন চালু হতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী উদ্যোগের ফসল স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
এদিন পদ্মার দুই পারেই মূল আয়োজন থাকবে। সরকারি আয়োজনের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ীতে ১০ লক্ষাধিক লোকের জনসভা করবে দলটি। জনসভার পর ফানুস ওড়ানো থেকে শুরু করে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সেতুর পাশাপাশি সাজানো হবে দুপার। নদীতে থাকবে সুসজ্জিত নৌকা। জনসভার মঞ্চ এমনভাবে করা হবে যেন সেখান থেকে নদী ও পদ্মা সেতু দেখা যায়।
ক্ষমতাসীনদের প্রত্যাশা-শুধু পদ্মা সেতুর দুই পারের মানুষই নয়, উদ্বোধনের দিন সারা দেশের মানুষ এই উৎসবে অংশ নেবে। কেউ সমাবেশস্থলে এসে, আবার কেউ টেলিভিশনের মাধ্যমে। আবার কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উৎসবে মেতে উঠবে। পাশাপাশি দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে আনন্দ মিছিল, শোভাযাত্রা, আতশবাজিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনন্দ উৎসব করা হবে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও সারা দেশে নানা কর্মসূচির আয়োজন করবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম যুগান্তরকে বলেন, উদ্বোধনের দিন জনসভার আগে ওই পারেও একটা উদ্বোধন অনুষ্ঠান হবে। সেখানে ফলক উন্মোচনের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসবেন জনসভায়। জনসভার শুরুতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আবার শেষেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। জনসভা সফল করার লক্ষ্যে ৮ জুন বিকাল ৩টায় ঢাকায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পার্শ^বর্তী ৬ জেলার কেন্দ্রীয় নেতা, সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়রদের নিয়ে মতবিনিময় করবেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের স্বাক্ষর বহন করে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সক্ষমতা আরও একবার দেখল বিশ্ব। তিনি বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমরা সারা দেশের মানুষকে নিয়ে উৎসব করতে চাই। যেখানে জনসভার আয়োজন করা হবে, সেটা বিশাল জায়গা এবং নদীর খুব কাছে। এদিন পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ থাকবে। নদীতেও সুসজ্জিত নৌকা থাকবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারের মূল আয়োজনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও পদ্মার দুই পারেই থাকবে নানা আয়োজন।
২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দলটি এবার তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতেও পদ্মা সেতু যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারা দেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং পদ্মা সেতুর উদ্বোধন যুগপৎভাবে পালন করবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের ইতোমধ্যে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন। এছাড়া দলের সহযোগী সংগঠনগুলোকেও ইতোমধ্যে এ উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিতে বলা হয়েছে। এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে সেতু এলাকায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। এর পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক। সেতুর লাইটিংয়ের কাজও ১৫ তারিখের মধ্য শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার কাঁঠালবাড়ীতে সমাবেশস্থলের প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, চিফ হুইপ মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, এসএম কামাল হোসেন ও কার্যনির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। জেলা পরিষদের প্রশাসক মুনির চৌধুরী, জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন এবং পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল তাদের সঙ্গে ছিলেন।
এ সময় বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের কারণে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন হয়েছে। পদ্মার পারে আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জনসভা এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হবে। উৎসবের এই সভায় জাতির উদ্দেশে, বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশে উন্নয়ন অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই ঐতিহাসিক জনসভায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে। জনসভার পর ফানুস ওড়ানো থেকে শুরু করে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটবে। এর ফলে মোংলা নৌবন্দর, পায়রা নৌবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরে অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। পদ্মা সেতুর যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে রেললাইনও যুক্ত হওয়ায় কী ধরনের অর্থনৈতিক তৎপরতা বাড়বে, তা চিন্তাই করা যায় না। পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নের সেতু, এর জনসভাও ঐতিহাসিক হবে।