Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

উৎপাদন খরচ ১২০০, বিক্রি ৯০০ টাকা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন ও সাঁথিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২২, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উৎপাদন খরচ ১২০০, বিক্রি ৯০০ টাকা

পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হওয়ায় পাবনার সাঁথিয়ার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। ইতোমধ্যে মৌসুমের এই সময় কৃষকরা মাঠ থেকে পেঁয়াজ ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। তবে বাজারে দাম কম থাকায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

তারা বলছেন-প্রতি মন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ১২০০-১৩০০ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রয় মূল্য মাত্র ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা। ফলে ভালো উৎপাদনেও কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষকের স্বার্থরক্ষায় শিগগির পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হবে। বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল কথা বলেছি। তিনি কয়েক দিন পর্যবেক্ষণ করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন।

কৃষকের স্বার্থরক্ষায় শিগগির পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হবে। ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম কম থাকায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার দাবি উঠেছে। কিন্তু রোজার এই সময় আমদানি বন্ধ করলে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই সব দিকে চিন্তা করতে হচ্ছে।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষক সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চলতি বছর এ উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ ৭৫০ হেক্টর বেশি হয়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিল ও মাঠে ব্যাপক পেঁয়াজের আবাদ করেছেন কৃষকরা।

অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যায় পেঁয়াজের ভালো উৎপাদন হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা তীব্র গরম উপেক্ষা করে পেঁয়াজ তুলতে শ্রমিক নিয়ে ভোর থেকে মাঠে উপস্থিত হচ্ছেন। শ্রমিক ও পরিবারের মহিলা, শিশুদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জমি থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহে। মহিলারা রাত গভীর পর্যন্ত পেঁয়াজের অগ্রভাগ কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

উপজেলার সাতানিরচর গ্রামের রওশন মন্ডল জানান, এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করতে পেঁয়াজের বীজ কিনতে খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা। জমি চাষ করতে খরচ হয়েছে দুই হাজার টাকা। সার প্রয়োগ করতে খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা। পাশাপাশি কীটনাশক ছেটাতে ব্যয় হয়েছে তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া জমিতে চারা লাগানোতে পাঁচ হাজার, সেচ দিতে ১২০০, জমি থেকে আগাছা ও গোড়া আলগা করা বাবদ পাঁচ হাজার, জমি থেকে পেঁয়াজ তোলা বাবদ সাড়ে তিন হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।

সঙ্গে এক বিঘা জমির লিজ বাবদ মালিককে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এতে প্রতি বিঘায় প্রায় ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সে তুলনায় পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় আছি।

বৃহস্পতিবার উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট কাশিনাথপুর সাপ্তাহিক পেঁয়াজের হাট ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে পেঁয়াজ ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা দামে বিক্রয় হচ্ছে। উপজেলার বিষ্ণুবাড়িয়া গ্রামের বাবলু জানান, উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম দামে পেঁয়াজ বিক্রয় করতে হচ্ছে যা শ্রমিকদের মজুরি দিতেই শেষ হচ্ছে।

গৌরীগ্রামের পেঁয়াজ রোপণকারী কৃষক আজম আলী জানান, এত খরচের পরও পেঁয়াজের বাজার এ বছর কম থাকায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার পেঁয়াজের বাজার আমাদের অনুকূলে না রাখলে কৃষকরা এ আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। বোয়াইলমারী গ্রামের আমজাদ ক্ষোভের সঙ্গে জানান, হাটে পাঁচ মন পেঁয়াজ এনেছিলাম। প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ৭৫০ টাকা মন দরে বিক্রি করেছি।

এক মন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। ঋণের টাকা দিতে জায়গাজমি বিক্রি করতে হবে।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশে যারা পেঁয়াজ উৎপাদন করে তাদের কথা আগে ভাবতে হবে। তারা যাতে উৎপাদন খরচ মিটিয়ে কিছু লাভের মুখ দেখতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এতে কৃষকরা আরও বেশি উৎপাদনে ঝুঁকবে। আর মৌসুমে যাতে সব সময় দাম পায় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের লক্ষ রাখতে হবে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জানান, চলতি বছর জমিতে পেঁয়াজের ভালোই উৎপাদন হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সাধ্যমতো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হাটের ইজাদাররা বলেন, মৌসুমের সময় দেশের বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় বাজারগুলোতে দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম কম।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম