Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

খোঁড়াখুঁড়ি-যানজট-ধুলা দূষণ-মশার উপদ্রব

হাঁসফাঁস অবস্থায় নগরবাসী

টেকসই মশা নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী গবেষণা ও এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা জরুরি-কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার * আন্তঃসংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে-ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান

Icon

মতিন আব্দুল্লাহ

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হাঁসফাঁস অবস্থায় নগরবাসী

ফাইল ছবি

খোঁড়াখুঁড়ি, যানজট, মশার উপদ্রব ও ধুলা দূষণে ঢাকায় বসবাস করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। চৈত্রের গরমে কর্মব্যস্ত মানুষ বাইরে বের হয়ে যানজট ও ধুলো দূষণে নাকাল হচ্ছেন। ঘরে বসেও মশা ও ধুলা দূষণ থেকে মুক্তি মিলছে না। সবমিলিয়ে রীতিমতো হাঁসফাঁস অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে নগরবাসীর। 

স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া, রাজধানীজুড়ে অসমন্বিত উন্নয়ন খোঁড়াখুঁড়ি এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে যানজট ভয়াবহরূপ ধারণ করেছে। উন্নয়ন কাজের কারণে ধুলো তৈরি হলেও তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। 

ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া, অসমন্বিত উন্নয়ন কাজ ও সঠিক উপায়ে দায়িত্ব পালন না করায় যানজট, খোঁড়াখুঁড়ি, মশা ও ধুলা দূষণ থেকে মুক্তি মিলছে না। রাজধানীবাসীর জীবনমানের উন্নয়ন ও দুর্ভোগ লাঘব করতে হলে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সঠিক পরিকল্পনার আলোকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

মশার উপদ্রব : কিউলেক্স মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। মশা নিয়ন্ত্রণে বছরজুড়ে গবেষণা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার। এ সময়ে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে শীতের মধ্যে নর্দমা, জলাশয় ও আবর্জনা পরিষ্কার করার দরকার ছিল। কিন্তু, সেটা না করায় মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদরা। 

তাদের মতে, ৩২-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কিউলেক্স মশার বংশ বিস্তারের সহায়ক। এখন ঢাকার তাপমাত্রা কিউলেক্স মশার বংশ বিস্তারের উপযোগী অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের খুব বেশি কিছু করণীয় নেই।

মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের কাজটি বছরজুড়ে করা দরকার। আর এ কাজটি একটি নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় করা দরকার। যে কাজটি সিটি করপোরেশনের করার কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। 

জানা যায়, ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট ও কার্ভাড ড্রেন রয়েছে। যেগুলোতে দুই সিটি মশার ওষুধ ছিটাতে পারে না। পাশাপাশি প্লাস্টিক দ্রব্য সামগ্রী, পলিথিন, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আবর্জনায় ওই ড্রেনগুলো ভরাট থাকে। যে কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না।

জমাটবদ্ধ এসব পানিতে কিউলেক্স ভয়াবহরূপে বংশ বিস্তার করছেন। এসব স্থানে মশার প্রজনন ধ্বংস করতে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না। এছাড়াও জলাশয়, খাল, নর্দমা ও যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক দ্রব্য সামগ্রী ও ডাবের খোসার পানিতে ভয়াবহরূপে মশার বংশ বিস্তার ঘটাচ্ছে। মশক নিধনে দুই সিটির পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে।

তারপরও নগরবাসীকে মশার ধকল সইতে হবে কেন-এমন প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ৮৫ কোটি টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বরাদ্দ ২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। 

জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকায় কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেড়েছে। রাজধানীতে বর্তমানে যেসব মশা দেখা যাচ্ছে এরমধ্যে ৯৮ ভাগই কিউলেক্স মশা। পানি শুকিয়ে ঘন হচ্ছে।

এমন পরিবেশ কিউলেক্স মশার বংশ বিস্তারের জন্য সহায়ক। এখন ঢাকার জলাশয়গুলোতে সার্ভে করে দেখা গেছে মশার ঘনত্ব প্রায় ৬০ ভাগ। ঢাকার টেকসই মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বছরব্যাপী গবেষণা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। 

যানজট : স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, শপিংমলসহ সবকিছু এখন স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। সব শ্রেণির পাঠদান স্কুলে করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর যানজটের মাত্রা অনেকাংশে বেড়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা কেন্দ্রীয়করণের প্রভাবেও যানজটের মাত্রা বাড়ছে।

যত্রতত্র অসমন্বিত খোঁড়াখুঁড়ি ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে ঢাকার যানজটের তীব্রতা বাড়ছে। চলতি সপ্তাহের যানজট ঢাকার জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বলা চলে যানজটের তীব্রতায় থমকে যাচ্ছে ঢাকার চাকা। 

গত দুই সপ্তাহ ধরে দিনভর যানজট থমকে থাকছে রাজধানী। কর্মজীবী মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে রীতিমতো নাজেহাল হতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ প্রয়োজনে কোথাও রওয়ানা হয়ে দীর্ঘসময় যানজটে আটকে থেকে অনেকে আবার বাসায় ফিরে এসেছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে। 

সরেজমিন দেখা গেছে-বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঢাকার মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, মিরপুর, উত্তরা, মতিঝিল, পল্টন, নিউমার্কেট, পুরান ঢাকা, খিলগাঁও, সবুজবাগ, মগবাজার, গুলশান, বনানী, বারিধারা, কুড়িল, বসুন্ধরাসহ অন্যান্য এলাকায়ও যানজটে নাকাল মানুষ। রিকশা, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন প্রচণ্ড রৌদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান এ বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘসময় পর পুরোদমে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে।

যে কারণে সড়কে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের চাপ পড়েছে। দুই বছর পর এ ধরনের চাপ পড়ায় ট্রাফিক বিভাগকে সেটা ‘ম্যানেজ’ করতে বেগ পেতে হয়েছে। এটা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

এর বাইরে রাজধানীতে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার উন্নয়ন কাজের কারণে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। যেটা শহরের যানজট সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা পালন করছে। সার্বিক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে ট্রাফিক বিভাগ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে ঢাকার যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনতে আন্তঃসংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

খোঁড়াখুঁড়ি : কর্মব্যস্ত ঢাকাবাসীর দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বড় সময় কেটে যাচ্ছে সড়কে। সকাল থেকে শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্ত সড়কে যানজটের ধকল সইতে হচ্ছে। অসমন্বিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

মিরপুরের রূপনগর এলাকার প্রধান সড়কে বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্য সড়ক খোঁড়া হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে ওই সড়কের অচলাবস্থা। বৈদ্যুতিক সেবা সংযোগের কাজের জন্য তারা ইচ্ছেমতো খোঁড়াখুঁড়ি করছে।

তাদের কাজের ধরন এমন যে, ঢিমেতালে যেভাবে হোক তারা তাদের কাজ করছে। তাদের কাজের জন্য নগরবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ হচ্ছে, সেদিকে তাদের কোনো দৃষ্টি নেই। ট্রাফিক পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কেউই এ বিষয়ে দৃষ্টি দিচ্ছেন না। 

সরেজমিন দেখা গেছে, রূপনগর আবাসিক এলাকার মোড় থেকে দুয়ারীপাড়া মোড় পর্যন্ত মূল সড়কের ১ ফুট অংশ কেটে ফেলা হচ্ছে। সংস্কার কাজ করতে গিয়ে সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে মাটি, বালু। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। পথচারীরা সড়ক ও ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারছে না।

রূপনগর আবাসিক এলাকার মোড়, রূপনগর টিনশেড ও দুয়ারীপাড়া মোড়সহ আশপাশের এলাকার একই চিত্র। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ওই এলাকার সড়কগুলো যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে।

সারা দিনের চিত্রও অনেকটা একই রকম থাকে। বিকল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজটের তীব্রতা আরও বাড়ে। যানজট প্রকট আকার ধারণ করলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়। এ কাজগুলো দিনের বেলায় না করে রাতে করলে দুর্ভোগ কিছুটা কম হতো বলে মনে করেন তারা।

এ উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে ডেসকোর কর্মরত শ্রমিক মো. রেজাউল বলেন, এখানে দুই ধরনের তার বসানো হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্নয়ন কাজ চলছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ বাস্তবায়ন করছি।

আমরা এরবেশি কিছু জানি না। মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে দেখছি, এ ধরনের কাজ হলেতো কিছুটা দুর্ভোগ হবে। সেজন্যতো এ কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। এটাও এসব মানুষের জন্যই করা হচ্ছে। 

মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে সড়কের পশ্চিম পাশ গেল প্রায় ৮ থেকে ৯ মাস বন্ধ। পূর্ব পাশের ছোট্ট রাস্তায় দুমুখী যান চলাচল করছে। এ অংশ পাড়ি দিতে সময় লাগছে কয়েক ঘণ্টা। মিরপুর সড়কের বেহাল দশার কারণে কল্যাণপুর সড়কে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ।

তাই কল্যাণপুর থেকে আসাদগেট আসতে লেগে যাচ্ছে কয়েক ঘণ্টা। রাজধানীর ব্যস্ততম ফার্মগেট এলাকার সড়কের বড় অংশ জুড়ে চলছে পাইলিং কাজ। একে তো মেট্রোরেলের কারণে সড়ক সরু। তারপরে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে।

বাংলামোটর থেকে মগবাজার পর্যন্ত সড়কের একপাশ কেটে চলছে স্যুয়ারেজ লাইন বসানোর কাজ। এ কারণে ওই এলাকার অনেক সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এ এলাকার সড়কগুলোতেও চলাচল করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। 

আজিমপুর সড়কগুলো খুঁড়ে ক্ষতবিক্ষত করে রাখা হয়েছে। রাজধানীর বড় দুটো কবরস্থান আজিমপুরে। প্রতিদিন শত শত মানুষের দাফন করা হয় এখানে। আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কবরস্থান পর্যন্ত সড়কে গাড়ি কার্যত অচল হয়ে থাকে।

স্বাভাবিক সময়ের সামান্য দুই মিনিটের এ দূরত্ব পাড়ি দিতে কখনো ঘণ্টাও পার হয়ে যাচ্ছে। কখনওবা এক ঘণ্টা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আজিমপুর এলাকার ভেতরের সড়কগুলোরও একই অবস্থা। ড্রেনেজ লাইনের কাজের কারণে এ খোঁড়াখুঁড়ি।

আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা নির্বিঘ্ন করতে ড্রেনেজ লাইন সংস্কার করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাজ হলেও মন্থরগতির কারণে এলাকাবাসী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে রেখে ঢিমেতালে উন্নয়ন কাজ করার কোনো মানে হয় না। 

রাজধানীর বাসাবো বৌদ্ধমন্দির এলাকার প্রধান সড়ক খনন করে চলছে ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ। এরপর ওই সড়কের সংস্কার কাজ করা হবে। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র তেজগাঁও বলাচলে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।

ড্রেনেজের পাইপলাইন বসানোর লক্ষ্যে দীর্ঘ সময় ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এ কারণে ওই এলাকার সড়ক ও পুরো পরিবেশ ধুলিময় হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় ওই এলাকায় বসবাসকারী ও অফিসের প্রয়োজনে যাতায়াতকারীরা দুর্ভোগে নাকাল হচ্ছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যমান সমস্যার উত্তরণের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। 

একইচিত্র বিরাজ করছে ঢাকার দুই সিটির প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে। কারণ হিসাবে জানা গেছে, ওয়ার্ড পর্যায়ের বার্ষিক উন্নয়নে বরাদ্দ দিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। সেসব বরাদ্দের কাজ চলছে। বর্ষার মৌসুম আসন্ন হওয়ায় ওয়ার্ড পর্যায়ের সড়ক, ফুটপাত ও ড্রেনেজ সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম জোরেশোরে পরিচালনা করা হচ্ছে। 

ধুলা দূষণ : এবারও বিশ্বের বায়ুদূষণের মান সবচেয়ে খারাপ বলে স্বীকৃতি মিলেছে। এরপরও ঢাকার বায়ূ দূষণের অনুষঙ্গগুলো বন্ধ হচ্ছে না। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-গাজীপুর সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ, বিমান বন্দর তৃতীয় টার্মিনালের কাজ কয়েক বছর ধরে চলছে।

গত কয়েক মাস ধরে এসব কাজের পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটিসহ সেবা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্র এখন খোঁড়াখুঁড়ির কার্যক্রম চলছে। 

সেবা সংযোগ লাইন ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গৃহীত উন্নয়ন কাজের কারণে প্রচুর ধুলো সৃষ্টি হচ্ছে। প্রকল্পের শর্তানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব ধুলো ও জনদুর্ভোগ হয় এমন বিষয়গুলো সহনীয় পর্যায় রেখে কাজ করা।

কার্যাদেশপত্রে এসব শর্ত দেওয়া থাকলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এরপরও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর যথারীতি পাওনা পরিশোধ করছে। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর দায়িত্ব পালনের উদাসীনতার কারণে ঢাকার বাতাসে ভাসছে বালি আর মাটির কণা। এখন বৃষ্টি না হওয়ায় বাতাসে ধূলিকণা থেকে যাচ্ছে।

ঢুকে পড়ছে বাসাবাড়ি, স্কুল ও কর্মপরিবেশে। বাইরে চলাচলে ধুলোয় চোখ-মুখ ও শরীর প্রায় কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। এসব ধুলোবালু ঢুকে পড়ছে মানুষের ফুসফুসেও। বক্ষব্যাধির বড় কারণ বায়ুদূষণ এজন্য চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নয়ন কাজ হলে কিছুটা ধুলো সৃষ্টি হবে। তবে এটা এমনিতেই বায়ুতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। পানি ছিটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই নগণ্য। 

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশনের যতটুকুন দায়িত্ব আছে তা পালন করার চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে সরকার ডিএনসিসিকে এ দায়িত্ব দিলে সেটা পালন করতে আগ্রহী সিটি করপোরেশন। তখন সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে যানজট নিরসনে কাজ করবেন।

তিনি বলেন, ডিএনসিসি নিজস্ব প্রয়োজনে খুব কম পরিমাণ সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে থাকে। বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রয়োজনে সড়ক খননের অনুমোদন প্রদান করা হয়ে থাকে। এটাকে সমন্বিতভাবে করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আর মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আশা করা যায়, অল্প সময়ের ব্যবধানে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে আসবে। 

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ যুগান্তরকে বলেন-যানজট, মশা, ধুলাদূষণ ও খোঁড়াখুঁড়িসংক্রান্ত বিষয়গুলো সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

এসব সমস্যার সমাধান করে নগরজীবনকে স্বাভাবিক রাখতে ডিএসসিসি তার সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ন্ত্রণে ওয়ান স্টপ সেল করা হয়েছে। যানজট নিরসনে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়েছে।

মশক নিয়ন্ত্রণে বছরজুড়ে রুটিন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর ধুলাদূষণ প্রতিরোধে পানি ছিটানো হচ্ছে। এ কার্যক্রমে সফলতা আনতে পানি ছিটানোর পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম