ভোগ্যপণ্যের চাহিদায় গরমিল
হিসাবের বাইরে থাকছে দেড় কোটি মানুষ
ইয়াসিন রহমান
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতিবছর বাড়ছে দেশের জনসংখ্যা। পরিবর্তন আসছে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে। এতে ভোগ্যপণ্যের চাহিদায়ও হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটছে।
একই সঙ্গে আমদানি ও উৎপাদন ব্যবস্থায়ও আসছে পরিবর্তন। কিন্তু মৌলিক ভোগ্যপণ্যের চাহিদা নিরূপণের ক্ষেত্রে এসব বিষয় আমলে নিচ্ছে না সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
শুধু তাই নয়, নিয়মিত আদশুমারি না হওয়ায় দেড় কোটির বেশি মানুষ থাকছে চাহিদা নিরূপণের বাইরে। ফলে সরকারি তথ্যে উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহের হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকলেও বাস্তবে ঘাটতিই থেকে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্যের যে চাহিদা নিরূপণ করে পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাজারের বাস্তবতার মিল থাকছে না। এতে ফিরছে না বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা। স্বাভাবিকভাইে উৎপাদন মৌসুমেও বিভিন্ন পণ্যের দাম থাকছে বেশ চড়া। ভোক্তাদের পকেট থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ চলে যাচ্ছে ভোগ্যপণ্য কিনতে। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বেসামাল থাকায় সরকারকে পড়তে হচ্ছে বিব্রতকর অবস্থায়।
ভোগ্যপণ্যের নিরূপিত চাহিদা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে মতভেদ রয়েছে, তেমনি ব্যবসায়ীরাও চাহিদার তথ্যকে সঠিক বলে মানতে পারছেন না। এ নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী, নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যেই কথা বলছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে উল্লিখিত চিত্র।
সমস্যার সমাধানে সরকারের একাধিক সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিডিসআই) বিভিন্ন নিত্যপণ্যের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে প্রকৃত চাহিদা, সম্ভাব্য উৎপাদন ও আমদানির তথ্য নিরূপণের উদ্যোগ নিয়েছে বেশ আগে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, দেশে বছরে কী পরিমাণে খাদ্য প্রয়োজন, তার সঠিক তথ্য আগে বের করতে হবে। কারণ দেশে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তাদের চাহিদা তৈরিকৃত চাহিদার সঙ্গে যোগ হচ্ছে না।
দেশে কী পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে, কী পরিমাণে আমদানি হচ্ছে, তার তথ্য রয়েছে। কিন্তু মোট জনসংখ্যার সঙ্গে সংগতি কিনা, তা দেখতে হবে। তাই আদমশুমারি করা প্রয়োজন। এতে সংশ্লিষ্টরা সমস্যা সমাধানে একটি পথ বের করতে পারবে।
সূত্র জানায়, দেশে সর্বশেষ আদমশুমারি হয়েছে ২০১১ সালে। ওই সময়ে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ১৭ লাখ। এরপর আর কোনো আদমশুমারি হয়নি। প্রচলিত নিয়মে পাঁচ বছর পরপর এ শুমারি হওয়ার কথা। তবে চলতি বছর ডিজিটাল পদ্ধতিতে একটি আদমশুমারি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন শুমারি না হওয়ায় ২০১১ সালের শুমারির ভিত্তিতে ২০১৬ সালের জনসংখ্যার প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ কোটি ৬২ লাখ। ওই শুমারি অনুযায়ী প্রতিবছর জনসংখ্যা বাড়ছে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে। এ হিসাবে ২০১৭ সালে জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮৫ লাখ, ২০১৮ সালে ১৭ কোটি ৮ লাখ, ২০১৯ সালে ১৭ কোটি ৩১ লাখ, ২০২০ সালে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ, ২০২১ সালে ১৭ কোটি ৭৯ লাখ এবং ২০২২ সালে জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৮ কোটি ৩ লাখ। এর সঙ্গে আরও আছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বেসরকারি হিসাবে তাদের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। সরকারি হিসাবে ১১ লাখ। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মনে করে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কমপক্ষে ২০ কোটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি হিসাবেই যেহেতু জনসংখ্যা ১৮ কোটি তাই ভোগ্যপণ্যের চাহিদার হিসাব করতে হবে এর ভিত্তিতে। এর সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে পণ্যের চাহিদা নিরূপণ করা হচ্ছে সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যা ধরে। এখানেই ভোগ্যপণ্যের চাহিদার বাইরে থাকছে দেড় কোটির বেশি মানুষ। ফলে উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থায় উদ্বৃত্ত পণ্য থাকলেও বাস্তবে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। জনসংখ্যার তুলনায় চাহিদায় বরং ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এতে চাহিদার সংকট হওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
এছাড়া বিভিন্ন স্তরে পণ্যের মজুত থাকে। এর মধ্যে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়। মিলার, পাইকার ও কৃষকের ঘরেও মজুত থাকে। সরবরাহ ব্যবস্থায় চলমান থাকে বেশকিছু পণ্য। খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি গুদামগুলোতে চাল মজুত থাকে। এগুলোও বিবেচনায় নিয়ে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ আরও বেশি রাখতে হবে।
সম্প্রতি সচিবালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সঠিক পরিসংখ্যানের ওপর গুরুত্বারোপ করে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দেশে চালের চাহিদা, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা নিয়ে পরিসংখ্যানগত অসংগতি দূর করতে হবে।
তিনি বিবিএস ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া দেশে ১০ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। প্রতিবছর ২২-২৪ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। প্রাণী-মৎস্যের খাদ্য হিসেবেও চালের কিছু ব্যবহার হচ্ছে। মানুষের আয় এবং জীবনযাত্রার মানও বেড়েছে। এসব মিলে চালের চাহিদা ও কনজামশন দিন দিন বাড়ছে। ফলে চালের দাম কিছুটা বেশি। তারপরও সঠিক তথ্য থাকলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুবিধা হয়। আশা করি তা সমাধান হবে।
সাম্প্রতিক সময় এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে কৃষিপণ্য উৎপাদনে সঠিক তথ্যের প্রয়োজন। সঠিক চাহিদা ও সরবরাহের তথ্য প্রয়োজন। আসল উৎপাদনের তথ্য যদি সঠিক না পাই তাহলে সঠিক ব্যবস্থাপনা করা দুরূহ হয়ে পড়ে।
সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে বছরে গড়ে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ টন। আর বছরে গড়ে উৎপাদন ৩ কোটি ৫৮ লাখ টনের বেশি। অর্থাৎ বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টনের বেশি চাল উদ্বৃত্ত থাকছে। এর বাইরে বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ টন আমদানি হচ্ছে। উৎপাদন ও আমদানি মিলে চাহিদার চেয়ে চালের সরবরাহ বেশি। এরপরও দাম বাড়ছেই। এমনকি চালের ভরমৌসুমের সময়ও এর দাম বেড়েছে।
গত অর্থবছরের ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন চাল ও গম উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে খাদ্যের মজুত রয়েছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে মজুতের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৯২ হাজার টন। আলোচ্য সময়ে মজুত বেড়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার টন।
চলতি অর্থবছরের জুলাই ও নভেম্বরে বিতরণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৭৪ হাজার টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে বিতরণ ছিল ১১ লাখ ২৪ হাজার টন। সরকারিভাবে ক্রয় করা হয়েছে ৬ লাখ ১৮ হাজার টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে কেনার পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৭৭ হাজার টন। আমদানি করা হয়েছে ৩৪ লাখ ৩৬ হাজার টন। গত অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৩৩ হাজার টন। সব মিলে চালের উৎপাদন, সরবরাহ, আমদানি সবই গত বছরের চেয়ে বেশি। তারপরও বাজারে চালের দাম বেড়েছে।
ভাত, পোলাও, খিচুড়ি ছাড়াও আরও বিভিন্নভাবে চালের ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে বিস্কুট, পিঠা, পায়েস, নুডলসসহ নানা খাদ্যপণ্য তৈরিতে চালের ব্যবহার হচ্ছে। এগুলোর একটি অংশ রপ্তানিও হচ্ছে। ভাতের বদলে এখন অনেকে আটা রুটি খাচ্ছেন। চালের চাহিদা নিরূপণের সময় এগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশে খাদ্যপণ্যের সঠিক চাহিদা যেমন নেই, তেমন উৎপাদনের সঠিক তথ্যও নেই। যা পরিকল্পনা গ্রহণে বড় বাধা।
এতে যে কোনো মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কার্যক্রম নেওয়া বা আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। এতে পরিকল্পনা ভুল হবে। কাজেই তথ্যের সঠিকতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিবিএসকে তার দায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে এক অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, চালের কী পরিমাণ চাহিদা, তার মূল্যায়ন করা দরকার। আগের চেয়ে চালের চাহিদা বেড়েছে। চালের বাণিজ্যিক ব্যবহারও বাড়ছে। ভোগের বাইরেও চালের ব্যবহার বাড়ছে। এসব বিষয় হিসাবে আনা দরকার। ঘাটতি টানাপোড়েনের সুযোগে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। কতিপয় গোষ্ঠী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।
গত বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৩ লাখ ৬২ হাজার টন। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে পেঁয়াজের প্রকৃত উৎপাদন দাঁড়াচ্ছে ২৮ লাখ টন। আমদানি হচ্ছে গড়ে ৫ লাখ ৫২ হাজার টন। মোট সরবরাহ আছে ২৮ লাখ ৫২ হাজার টন। বছরে এর চাহিদা ২৬ লাখ ২৫ হাজার টন। সে হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকছে ২ লাখ ২৭ হাজার টন। এছাড়া আরও পেঁয়াজ আমদানির পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু বাজারে এর প্রতিফলন নেই। পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই। গত এক মাসের ব্যবধানে ২৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ বেড়ে এখন ৪৫ টাকা হয়েছে।
কৃষিবিদরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা করতে উৎপাদন বাড়িয়ে ৩৫ লাখ টনে নিয়ে যেতে হবে। একই যেটুকু নষ্ট হচ্ছে সেগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া হিমাগারগুলোর ব্যবস্থাপনা আরও আধুনিকায়ন করতে হবে। তাহলে নষ্ট হওয়ার হার কমবে।
এছাড়া পেঁয়াজ এখন মসলা ছাড়াও বহুবিদ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু পেঁয়াজ দিয়ে সবজি রান্না, ফাস্টফুডসহ অন্যান্য খাবারেও পেঁয়াজের ব্যবহার বেড়েছে। সেগুলোর বিষয়ে একটি জরিপ করে প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করতে হবে।
বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ১২ লাখ টন। এর মধ্যে ৮ লাখ টনই সয়াবিন, সাড়ে তিন লাখ টন সরিষা ও অন্যান্য তেল ৫০ হাজার টন। সরিষা সাড়ে ৩ লাখ টন দেশে উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া আরও কিছু তেল দেশে উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদার ৭৫ শতাংশই আমদানিনির্ভর। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয়ও বাড়ছে।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সরকারের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত চার বছরের ব্যবধানে জনপ্রতি তেল ভোগের পরিমাণ বেড়েছে। দেশের মানুষ গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ গ্রাম করে তেল গ্রহণ করে। এ হিসাবে বছরে ৮ কেজির বেশি তেল লাগে। গত চার বছরে আরও ৫ কেজি বেড়েছে। সব মিলে এখন ১৩ কেজি তেল লাগছে। এছাড়া গবাদিপশু ও পোলট্রির খাদ্য হিসাবেও সয়াবিন তেল ব্যবহৃত হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে ৯০ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের সয়াবিন তেল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। আমদানি হয়েছে ৭৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি।
দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ লাখ মেট্রিক টন। সরকারি চিনিকলে বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৫০ হাজার টন। পরিশোধিত আকারে আমদানি হচ্ছে আরও ৫০ হাজার টন। বাকি ১৭ লাখ টন চিনি অপরিশোধিত আকারে আমদানি করে বেসরকারি খাতের কারখানাগুলোতে পরিশোধন করে বাজারজাত করা হয়। এ হিসাবে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টনই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এর মধ্যে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয় চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে ৪৬ কোটি ডলারের চিনি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। আমদানি হয়েছে ৪৪ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে চিনি আমদানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্যের বাইরেও পরোক্ষভাবে চিনির ব্যবহার বহুবিধ বেড়েছে। এর মধ্যে কোমল পানীয়, মুখরোচক খাদ্যসামগ্রী, দই, মিস্টিসহ নানা খাদ্যে এর ব্যবহার বেড়েছে। যে কারণে চিনির চাহিদাও বেড়েছে।
বছরে দেশে ডালের চাহিদা ২৭ লাখ টন। উৎপাদন হয় ৯ লাখ টন। বাকি ১৮ লাখ টন আমদানি করা হয়। সরাসরি খাদ্য ছাড়াও ডালের ব্যবহার বহুমুখী। বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি পশু, পোলট্রির খাদ্য হিসাবেও ডাল ব্যবহৃত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিবেশী দেশগুলো কীভাবে চালের চাহিদা নিরূপণ করে সে বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। তারা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী চালের চাহিদা নিরূপণের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি কার্যকর হলে চালের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করা সম্ভব হবে।
২০১৯ সালের নভেম্বরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের এক বৈঠকে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সারা বছরের চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন ও আমদানির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটা জরিপ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর মাধ্যমে প্রকৃত চাহিদা, উৎপাদন ও আমদানির সঠিক তথ্য নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু করোনার কারণে এর তেমন অগ্রগতি নেই।