পেশিশক্তির মহড়ায় আতঙ্ক
গাজীপুরে ক্ষমতার বলয়ে নতুন চক্র
সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অপরাধে এখন ‘নিজভূমে পরবাসী’ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী
মাহবুব আলম লাবলু, গাজীপুর থেকে ফিরে
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকার উপকণ্ঠে ব্যস্ততম নগরী গাজীপুর। আপাতদৃষ্টে সেখানে সবকিছুই স্বাভাবিক। শিল্প-কলকারখানা সচল। সরগরম বাজারঘাট। সকাল-সন্ধ্যা দল বেঁধে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত করছেন নির্বিঘ্নে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় রাজনীতিতে পটপরিবর্তনের পর আধিপত্য বিস্তারের মহড়ায় ভেতরে ভেতরে পালটে গেছে দৃশ্যপট। বিরাজ করছে অস্থিরতা।
খোদ ক্ষমতাসীন দলের একাংশের নেতাকর্মীদের জন্য তৈরি হয়েছে ভয়ের পরিবেশ। আর এ পরিবর্তন বেশি দিনের নয়। মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করার পরপরই পরিস্থিতি দ্রুত পালটাতে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ-আগে একরকম ‘বঞ্চিত’ নেতাকর্মীরা এখন আধিপত্যে ফিরেছেন। ঝুট, ডিশ, ইন্টারনেটসহ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা।
ক্ষমতার বলয়ে সৃষ্ট নতুন চক্রের নেপথ্যে আছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলের অনুসারী নেতাকর্মী। তাদের সরাসরি মদদ দিচ্ছেন প্রতিমন্ত্রীর চাচা নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের জাহাঙ্গীরপন্থি বহু নেতাকর্মীকে এখন আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। তাদের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ ঘরবন্দি। আবার কাউকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। হামলা চালানো হয়েছে বাড়ি-ঘরে। বেদখল হয়ে গেছে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য। দখল হয়েছে দলীয় কার্যালয়। স্থানীয় রাজনীতিতে পেশিশক্তির এ মহড়ায় ভঙ্গ হচ্ছে দলীয় শৃঙ্খলা-এমন মন্তব্য জাহাঙ্গীরপন্থি নেতাকর্মীদের।
জাহাঙ্গীরের অনুসারী হিসাবে এতদিন যারা ছিলেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী, এখন তারা আছেন আতঙ্কে। কারণ তাদের তালিকা করে হামলা, মারধর করছে প্রতিপক্ষ। আতঙ্কে থাকা অনেকেই বলেছেন, বংশপরম্পরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেও শুধু জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অপরাধে তারা এখন ‘নিজভূমে পরবাসী’। হুমকির মুখে পরিবার। দলীয় প্রতিপক্ষের কাছে এমন আচরণ তাদের কাম্য নয়।
শনি ও রোববার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে উল্লিখিত সব তথ্য। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে সরাসরি এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী ও জনসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি এ প্রতিবেদককে এড়িয়ে যান। এমনকি তার হোয়াটস অ্যাপে সুনির্দিষ্ট দুটি প্রশ্ন পাঠালেও তিনি জবাব দেননি।
৩৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনোয়ারুল কবির জুয়েল যুগান্তরকে বলেন, ১ ডিসেম্বর সকালে মোটরসাইকেলে নিজ কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। নগরীর মৈরান ব্রিজের কাছে জামান, আলম, রাকিবুল হাসান, শাহীনসহ ৮-১০ জনের একটি দল গতিরোধ করে তার ওপর হামলা চালায়। হাতুড়িপেটা করে তার দুপায়ের হাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়। লোহাড় রড ও ইট দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় তিনি পঙ্গু হাসপাতালের অধীনে চিকিৎসাধীন। হাতুড়িপেটা করার সময় হামলাকারীরা তাকে জাহাঙ্গীরের দালাল বলে গালাগাল দিতে থাকে। হামলাকারীরা প্রতিমন্ত্রী ও তার চাচার রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে এলাকায় পরিচিত।
দুপায়ের প্লাস্টার দেখিয়ে জুয়েল বলেন, ‘আমি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব কিনা জানি না। রাজনীতির পাশাপাশি আমি সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব পদে কর্মরত। আমার অপরাধ আমি মেয়র সাহেবের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতাম। এখন আর এ ঘটনার কোনো বিচারও পাব না জানি। তাই মামলাও করিনি।’
ভাওয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সমাজ কল্যাণ সম্পাদক বিকাশ সরকার যুগান্তরকে বলেন, স্কুলজীবন থেকেই জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আমি পড়াশোনা করেছি। একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। দলীয় সভাপতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাহাঙ্গীর তা মেনে নিয়েছেন। আমরাও মেনে নিয়েছি। ব্যক্তি সম্পর্কের কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন গাজীপুর চৌরাস্তায় আমার ওপর হামলার চেষ্টা করে। এ দৃশ্য ভিডিও করতে গেলে একজন সাংবাদিক হামলাকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হন। ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছি। বিরোধী দলে থাকতে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা, মামলা, নির্যাতনের শিকার হয়েছি। মামলায় আসামি হয়েছি। অনেক লড়াই-সংগ্রাম করেছি। এখন যদি দলের লোকজনের হাতে নির্যাতিত হই তাহলে এ কষ্ট কার কাছে বলব?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহানগর যুবলীগ নেতা সুমন আহমেদ শান্ত বাবুর অনুসারী ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থক মতিউর রহমান মতিন। কাউলতিয়া সাংগঠনিক থানা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী মতিনের বসবাস জোলারপাড়ের সেমিপাকা টিনশেড বাড়িতে। ২৪ নভেম্বর দুপুরে কাউলতিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসারের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি দল তার বাড়িতে যায়। মতিনকে বাড়িতে না পেয়ে হাসান আলী ও ইকবাল হোসেন তার ঘরে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। হামলাকারীরা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আলমিরাসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে চলে যায়। এরপর থেকে মতিনকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে তারা।
৪ ডিসেম্বর সরেজমিন মতিনের বাড়িতে গিয়ে হামলা ও ভাঙচুরের চিহ্ন দেখা গেছে। মতিন যুগান্তরকে বলেন, ‘তারা শুধু হামলা চালিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। আমাকে এলাকা ছাড়তে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। আমার লিখিত অভিযোগ থানায় জমা রাখলেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।’
আরও জানা যায়, ২১ নভেম্বর ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব আবুল হোসেনের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আজমত উল্লাহ খানের ভাতিজা। ২৩ নভেম্বর ৫৪ নম্বর আওয়ামী লীগ সদস্য সৈকত পাঠানকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বাহিনীর লোকজন তার ওপর হামলা চালায়। হামলার শিকার হন কোনাবাড়ীর আওয়ামী লীগ নেতা আনিস মাস্টার।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লাহ খান জাহাঙ্গীরের অনুসারীদের বাড়িঘরে হামলা ও মারধরের ঘটনা অস্বীকার করে মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিরোধের জের ধরে দু-একটি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনাকে কেউ কেউ রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের পর কোন নেতার কী ভূমিকা ছিল তা খতিয়ে দেখতে ১১ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঝুট ব্যবসা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর মেয়র হওয়ার পর অন্যায়ভাবে তার লোকজন দিয়ে অনেকের ব্যবসা দখল করে নিয়েছিল। এখন ওই সব ব্যবসা কেউ কেউ পুনরুদ্ধার করছে বলে শুনতে পেয়েছি।’ ১৭ জন নেতার ছবি ফেসবুকে তুলে মারধরের ইঙ্গিত দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। এটি কেউ করে থাকলে দায় তাকেই নিতে হবে।’
হুমকির মুখে যারা : গাছা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক নবীন হোসেন ১৭ নেতাকর্মীর (জাহাঙ্গীর আলমপন্থি) নাম ও ছবি দিয়ে তার ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘এই কয়জনের ছবি উন্মোচন হলো। আপাতত এগুলোকে লোড দেওয়া হোক। বাকিগুলো আবার তৃতীয় ধাপে শুরু হবে।’
ফেসবুকে এমন হুমকি দিয়ে যাদের নাম ও ছবি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন-মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মনির, ৩৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও গাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী রশিদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, গাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের মিয়া, গাছা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান মুকুল, শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক মাহফুজ, যুবলীগ সদস্য রুহুল আমিন, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা মোল্লা মঈন, মোশারফ হোসেন রতন, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব আব্দুর রশিদ, বাসন থানা আওয়ামী লীগ নেতা পরান, মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মাজহার, মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি মজিদ বিএসসি, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব হুমায়ন কবির রিপন।
ঝুট বাণিজ্য দখল : সরেজমিন আরও জানা গেছে, গাজীপুর নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পরিবর্তনের পর থেকেই স্থানীয় এমপি ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের লোক পরিচয়ে অতি উৎসাহী একাধিক গ্রুপ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকার ঝুট, ডিশ, ইন্টারনেটসহ নানা ধরনের বাণিজ্য দখলে তারা এখন মরিয়া।
নগরীর বাংলাবাজার এলাকার ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন কাউলতিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসারের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ। এই গ্রুপের সদস্য আবু হানিফ, হাসান আলী, এমদাদ হোসেন, ইকবাল হোসেনের দাপটে আতঙ্কে আছেন অনেকেই। এদের সরাসরি মদদ দিচ্ছেন এমপি রাসেলের চাচা নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সদস্য রুহুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের জায়গা কিনে স্টোফা টেক্স ও বাংলা পোশাক লিমিটেড নামের ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করেছেন মালিকরা। সেই সুবাদে প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে আমি ব্যবসা করি। পাশেই আছে ইন্টার ফ্যাব সার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং লি. নামের আরেকটি কারখানা। লিখিত চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার ব্যবসা চলছিল। সম্প্রতি আবুল হাসানের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ব্যবসা দখল করে নিয়েছে। তারা আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। শুধু আমাকে নয়, এলাকায় বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি শুরু করেছে। থানায় অভিযোগ করতে গেলে, অভিযোগ গ্রহণ করছে না। দলীয় লোক মারফত মন্ত্রীকেও বিষয়গুলো জানানো হয়েছে। তিনিও নীরব। ৩০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। আমরা স্থানীয় বাসিন্দা। এখন আমরা কেন অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হব।’
এছাড়া ২১ নম্বর ওয়ার্ডের লিও ওয়ে ফুড লিমিটেড ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের হেল্থকেয়ার কোডস ফ্যাক্টরি লিমিটেডে গিয়েও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে আবুল বাসারের ক্যাডার বাহিনী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাউলতিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার যুগান্তরকে বলেন, ‘ফ্যাক্টরি ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলেই আমরা কাজ করছি। জোর করে কিছু করছি না।’
আপনি প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে অনেক ফ্যাক্টরিতে গিয়ে ঝুট ব্যবসা দিতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙাব কেন? আমি তো প্রতিমন্ত্রী সাহেবের লোকই। সবাই আমাকে চেনে। মতিন ভাই (প্রতিমন্ত্রীর চাচা) আমাদের গাইড করছেন।’
মতিউর রহমানের বাড়িতে হামলার বিষয়ে কী বলবেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, ‘হামলার ঘটনা মিথ্যা।’
৭ ডিসেম্বর রাতে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর কাকা মতিউর রহমান মতির মোবাইল ফোনে কল করে জানতে চাওয়া হয়, আবুল বাসারকে চেনেন কিনা-উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ ওতো আমার সামনেই আছে।’
উনাকে কি আপনি ঝুট ব্যবসা দখলে মদদ দিচ্ছেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ কেউ ঝুট ব্যবসা দখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ এসেছে। অন্যায় কাজে আমি কাউকে মদদ দেই না। এ নিয়ে কথা বলতেই আবুল বাসারকে ডেকে এনেছি। বলেছি, এগুলো করলে দুর্নাম হবে। এ ধরনের কাজ কেউ করলে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকেও বলা হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের পরও তার পক্ষে যারা ভূমিকা পালন করেছে তাদের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মনিরের ঝুট ও ডিশ ব্যবসা দখল করে নিয়েছে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী সোহেল রানা গ্রুপ। এ গ্রুপের হুমকি-ধমকির মুখে হাজি মনির এখন অনেকটা ঘরবন্দি।
আর গাজীপুর চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী ও শালনা এলাকায় বেশিরভাগ ঝুট ব্যবসা দখলে নিয়েছেন রিপন সরকার। মেয়র থাকাকালীন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ঝুট ব্যবসা নিয়ে মারাত্মক দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন রিপন। জাহাঙ্গীর দল থেকে বহিষ্কারের পরই রিপন তার আধিপত্য ফিরে পেতে শুরু করেন।
জানতে চাইলে হাজি মনির যুগান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি থেকে যারা দলে ভিড়েছে তাদের দাপট চলছে এখন। আর আমাদের সাজানো হচ্ছে জামায়াত-বিএনপি। এখন সবকিছুই সহ্য করতে হচ্ছে।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে নগরীতে হামলা, ভাঙচুরের কোনো অভিযোগ নিয়ে কেউ আমার কাছে আসেনি। হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় মহানগরীর কোনো থানায় অভিযোগ দায়েরের খবরও আমাকে কেউ জানায়নি। এ বিষয়ে কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।