টঙ্গী ব্রিজে গর্ত, দুদিন ধরে যানজটে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ
বিমানের যাত্রীদের সময় নিয়ে রওয়ানা দেওয়ার অনুরোধ এপিবিএন’র
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২১, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কিছু অংশ ভেঙে পড়ায় বন্ধ টঙ্গী সেতু। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। বাধ্য হয়ে বহু যাত্রী হেঁটে চলছেন গন্তব্যে। শুক্রবারের ছবি -যুগান্তর
গর্তের কারণে টঙ্গী ব্রিজ বন্ধ হওয়ায় গত দুদিন ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। শুক্রবার ছুটির দিনেও সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে উত্তরা আব্দুল্লাহপুর থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে কয়েক ঘণ্টা থেমে থেমে গাড়ি চলে। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রীরা। এ যানজটের কারণে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার আগে প্লেনের যাত্রীদের হাতে সময় নিয়ে রওয়ানা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে বের হওয়া যানবাহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকছে। টঙ্গী স্টেশনরোড থেকে ঢাকা অভিমুখী লেনে বাঁশ ও অন্যান্য উপকরণ ফেলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। টঙ্গী স্টেশনরোড হয়ে ইউটার্ন নিয়ে বিকল্প পথে রাজধানীতে ঢুকছে যানবাহনগুলো। এদিকে শুক্রবার ঢাকায় এনএসআই ও বিভিন্ন অধিদপ্তরগুলোর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। এ কারণে ছুটির দিনেও ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কে তীব্র যানজটে পড়েন হাজারো মানুষ। জয়দেবপুরে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন রফিকুল ইসলাম, থাকেন গাজীপুরে। এনএসআইর নিয়োগ পরীক্ষা দিতে শুক্রবার ভোর ৬টায় তিনি বাসা থেকে বের হন। রফিকুল বলেন, ‘দেখি সড়কে গাড়ির প্রচণ্ড চাপ। গাড়িগুলো অনেক ধীরে চলছে। এ কারণে বিকল্প সড়ক রেললাইনের পাশ ঘেঁষে অটোরিকশায় টঙ্গী থানা পর্যন্ত পৌঁছাই। ওই সড়কেও যানজট থাকায় টঙ্গী থানার এক কিলোমিটার উত্তরে অটোরিকশা থেকে নেমে হেঁটে টঙ্গী ব্রিজ অতিক্রম করি। এপারে এসেও দেখি তীব্র যানজট।’ তারমতো অসংখ্য মানুষ শুক্রবার যানজটে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। গাজীপুর থেকে ঢাকায় আসতে যেমন সময় লাগছে, তেমনি ঢাকা থেকে ওই সড়কে বের হতেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় সকাল থেকে ঢাকামুখী যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়। বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এবং নদীর উপর আরেকটি ব্রিজ নির্মাণাধীন থাকায় ওই সড়কে এমনিতেই সব সময় যানজট লেগে থাকে। সেতুর গর্তের কারণে সড়কের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়ে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টঙ্গী ব্রিজের ঢাকা অভিমুখী লেনটি ফাঁকা। উলটো লেনে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর আনুমানিক ৪-৫ ফুট করে এগিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে আসা পিকআপভ্যানের চালক খোরশেদ আলম যাবেন ময়মনসিংহে। তিনি জানান, ব্রিজ পার হতে তার সময় লেগেছে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। টঙ্গী পূর্ব প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার রাতেও টঙ্গী বাজার থেকে ভোগড়া বাইপাস, কামাড়পাড়া সড়ক ও টঙ্গী কালীগঞ্জ সড়কের নিমতলী এলাকা পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়কজুড়ে ছিল তীব্র যানজট।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) শুক্রবার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার আগে প্লেনের যাত্রীদের হাতে সময় নিয়ে রওয়ানা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গত দুদিন ধরে চলছে তীব্র যানজট। এতে কম সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হলে যাত্রীদের ফ্লাইট মিস করার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। তাই দেশের ভেতরের ও আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে বাসা থেকে অতিরিক্ত সময় হাতে নিয়ে রওয়ানা হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
বুধবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গীর একটি ব্রিজের স্ল্যাব ফুটো হয়ে যায়। ব্রিজটির সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ করতে ১৫ দিন লাগবে বলে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ব্রিজের স্ল্যাব বিশেষ ঢালাইয়ের মাধ্যমে পুনঃস্থাপন করতে হবে। এই ঢালাইয়ে ৭ দিন লেগে যাবে। তারপর আরও কিছু কাজ রয়েছে। তাই এ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে অন্তত ১৫ দিন লাগবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ১৫ দিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
বিকল্প ব্যবস্থাতেও তীব্র যনজট : গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী ব্রিজ ফুটো হয়ে যাওয়ায় বিকল্প হিসাবে বেইলি ব্রিজ দিয়ে সীমিত যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশ করছে। অপরদিকে রাজধানী থেকে ময়মনসিংহ বা গাজীপুরগামী পরিবহণ আব্দুল্লাহপুর থেকে টঙ্গী-আশুলিয়া সড়ক হয়ে কামারপাড়া বিশ্ব ইজতেমা ব্রিজ দিয়ে টঙ্গীতে প্রবেশ করছে। বিকল্প এ ব্যবস্থা চালুর পরও যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। মহাসড়কের এ যানজটের প্রভাবে গাজীপুর মহানগরের প্রায় প্রতিটি অভ্যন্তরীণ সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। বিকল্প হিসাবে নগরীর বিভিন্ন শাখা সড়ক ব্যবহারের কারণে নগরীর সর্বত্রই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তদুপরি অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও সংস্কার কাজ চলমান থাকায় নগরবাসীর ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় প্রতিদিন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এ রুটে চলাচলকারী হাজার হাজার যাত্রী। শুক্রবার পর্যন্ত ফুটো হয়ে যাওয়া টঙ্গী ব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। সেতুর প্রবেশমুখে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে পরিবহণ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শত শত মানুষ হেঁটে ব্রিজ পার হচ্ছেন। রাজধানীমুখী পরিবহণ ধীর গতিতে বেইলি ব্রিজ পার হওয়ায় টঙ্গীতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। বিকল্প ব্যবস্থা চালুর ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট অনেকটা কমেছে। টঙ্গী ব্রিজ চালু হলে যান চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।