Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আরইবির ২০০ কোটি টাকার দরপত্র

লকডাউন উপেক্ষা উন্মুক্ত হচ্ছে কাল

Icon

মুজিব মাসুদ

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২১, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

লকডাউন উপেক্ষা উন্মুক্ত হচ্ছে কাল

সরকারের জারি করা কঠোর লকডাউন মানছে না পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। ফাইল ছবি

সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) মানছে না পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। দরদাতা কোম্পানিগুলোর আবেদন উপেক্ষা করে ২০০ কোটি টাকার বেশি একটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনা প্রকল্পের (কেডি-জি-২১) দরপত্রের সময় না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

কাল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছে ২৫ থেকে ৩০টি দরদাতা প্রতিষ্ঠান। এদের কেউ কেউ ঢাকার বাইরের। তাদের অভিযোগ, ২০০ কোটি টাকার বেশি একটি দরপত্র তৈরি করা চাট্টিখানি কথা নয়। শত কাগজ তৈরি করতে হয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নানা ধরনের কাগজপত্র আনতে হয়। কঠোর লকডাউনের মধ্যে এসব অত্যাবশ্যকীয় কাগজপত্র জোগাড় করা অসম্ভব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। বন্ধ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস। জীবন বাঁচাতে এবার অর্থনীতির প্রাণ পোশাক কারখানাও বন্ধ। লকডাউন বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। রাস্তায় কাউকে দেখলেই জেল-জরিমানা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বন্ধ রয়েছে সড়ক, রেল ও নৌপথের গণপরিবহণসহ সব ধরনের যান্ত্রিক যান। এ অবস্থায় সময় না বাড়ালে দরপত্রে অংশ নেওয়া কঠিন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, কিসের লকডাউন! সবকিছু চলছে। কোথাও কোনো লকডাউন হচ্ছে না। সব প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। সবকিছুই স্বাভাবিক। কাজেই প্রকল্পের সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পটি জরুরিভিত্তিতে শেষ করতে হবে। প্রথম দফার লকডাউনে একবার সময় বাড়ানো হয়েছিল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তারাও সময় না বাড়ানোর কথা বলেছে। আরইবি বোর্ডও আর সময় না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে। কাজেই এক দিন সময় বাড়ানোরও সুযোগ নেই।

ঢাকার বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে ডকুমেন্ট জমা দিতে ঢাকায় আসবে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কোনো উত্তর দিতে পারেননি। কোনো বিশেষ কোম্পানিকে সুবিধা দিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম কিছু নেই।

সূত্রমতে, প্রকল্পটির টেন্ডার জমা দেওয়ার স্থান আরইবির হেড অফিস ঢাকার নিকুঞ্জে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে নথি জমা দিতে বলা হয়েছে। অথচ ১৩ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা কঠোর বিধিনিষেধের সার্কুলারে বলা হয়েছে- সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজসমূহ ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, ইমেইল, এসএমএস, হোয়াটআপসহ অন্যান্য মাধ্যমে) সম্পন্ন করতে হবে।

বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার এতবড় একটি প্রকল্প নিয়ে এরকম একগুঁয়েমি করা ঠিক হবে না। যেখানে সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছে সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। অনেকেই এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের কোনো কোম্পানি। এতে দরপত্র প্রতিযোগিতামূলক হবে না। এ সুযোগে সিন্ডিকেশন করে প্রকল্প ব্যয়ও বাড়িয়ে দিতে পারে সুযোগসন্ধানী দরদাতারা।

সরকারের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এ লকডাউনে কোনোভাবেই টেন্ডার উন্মুক্ত করার সুযোগ নেই। একটি উন্মুক্ত টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি করতে অনেক ধরনের কাগজপত্র ও ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দিতে হয়। সরাসরি গিয়ে টেন্ডার বাক্সে ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। এখন সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং সেবা চলছে। এ মুহূর্তে ২০০ কোটি টাকার বেশি একটি প্রকল্পের ব্যাংক গ্যারান্টির পিজি (পারফরম্যান্স গ্যারান্টি) তৈরি করা অনেক কঠিন। অনেক ব্যাংক এখন এসব স্পর্শকাতর কাগজপত্র তৈরি করতে চাচ্ছে না। এই অবস্থায় আরইবির উচিত হবে দরপত্রের সময় বাড়ানো।

সিপিটিইউর সাবেক ডিজি ফারুক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সাবমিশন ডেট পালটানোর অবশ্যই সুযোগ আছে। প্রকিউরমেন্ট এনটিটি (আরইবি) ইচ্ছা করলেই একাধিকবার সময় বাড়াতে পারে। পাশাপাশি দরদাতারা যদি আবেদন করেন তাহলেও সময় বাড়ানোর সুযোগ আছে। তিনি বলেন, দরদাতারা যদি আবেদনে জানান, সরকার ঘোষিত লকডাউন পরিস্থিতির কারণে বাজার যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না, সরাসরি গিয়ে জমা দেওয়া এবং সাপোর্টিং কাগজপত্র জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না তাহলে প্রকল্পের সময় বাড়াতে আইনগত বাধা নেই।

সূত্রমতে, আরইবি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ১৯ মে প্রথম দফায় দরপত্র আহ্বান করে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। ওই দফায় দরপত্র খোলার তারিখ ছিল ১ জুলাই। কিন্তু ৩০ জুন থেকে সরকার ঘোষিত লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় প্রথম দফায় সময় বাড়িয়ে ২৭ জুলাই শেষ তারিখ করা হয়। কিন্তু ২৩ জুলাই থেকে সরকার আরও কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে।

দরপত্রে অংশ নেওয়া একটি কোম্পানি আরইবিকে দেওয়া আবেদনে জানায়, ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে তাদের অফিস বন্ধ রয়েছে। সব কর্মী ছুটিতে আছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সার্কুলার অনুযায়ী সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসগুলো বন্ধ। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান্ত্রিক যান। শপিংমল, দোকানপাট। এ অবস্থায় দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য আরও ৪ সপ্তাহ সময় প্রয়োজন।

আরেকটি কোম্পানি আবেদনে জানায়, সরকার মানুষের জীবন বাঁচাতে এবারের লকডাউনে সব গার্মেন্টস শিল্পকারখানা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এতে ৫শ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হবে দেশের। বিদেশি বায়াররা অন্য দেশে চলে যাবেন। তারপরও সরকার সিদ্ধান্তে অটল ছিল। এই অবস্থায় আরইবির উচিত প্রকল্পটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে দেওয়া।

বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, যেহেতু সরকারই লকডাউন ঘোষণা করেছে সেহেতু এডিবি দরপত্র পেছানোর সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, যদি আরইবি নিজেরা দায়িত্ব নিতে না পারে তাহলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সময় বাড়ানোর অনুমোদন নিতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম