Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ফেসবুকে তরুণীদের টার্গেট, ফাঁদে ফেলে পাচার

ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত চক্রের নেটওয়ার্ক * মূল আস্তানা বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর * বিভিন্ন হোটেলের সঙ্গে রয়েছে চুক্তি * হৃদয়ের সহযোগী যশোরের আলামিন ৮ মাস আগে বাড়ি ছাড়ে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২১, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফেসবুকে তরুণীদের টার্গেট, ফাঁদে ফেলে পাচার

টিকটক মডেল বানানো ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নারীদের পাচার করা হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের কয়েকটি রাজ্যের অপরাধীদের একটি আন্তর্জাতিক চক্র এ কাজ করছে। এই চক্রের মূল আস্তানা বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর। পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করতে বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের পাচার করে তারা। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের হোটেলগুলোর সঙ্গে চুক্তি রয়েছে চক্রটির। বেঙ্গালুরু পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া দুই নারীসহ ছয়জন এই চক্রের সদস্য। ভারতে বাংলাদেশি নারীকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই চক্রটি বিভিন্ন সময় ভারতে অন্তত ১০ নারীকে পাচার করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে কতজন নারীকে তারা পাচার করেছে এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় নির্যাতিত নারীর বাবা এরই মধ্যে হাতিরঝিল থানায় পর্নোগ্রাফি এবং মানবপাচার আইনে মামলা করেছেন। মামলায় মগবাজারের নয়াটোলার টিকটক হৃদয় বাবুসহ অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে টিকটকারদের নিয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপও পরিচালনা করে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। গত বছর ঢাকার পাশের একটি জেলায় ৭০০-৮০০ তরুণ-তরুণীকে নিয়ে একটি পার্টিরও আয়োজন করে চক্রটি। ফেসবুক গ্রুপ থেকেই স্কুল-কলেজপড়ুয়া কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সি নারীদের টার্গেট করা হয়। পাচারের পর তাদের ব্ল্যাকমেইল করতে মাদক সেবন করিয়ে নগ্ন ভিডিও ধারণ করা হয়। তাদের হুমকি দেওয়া হয়, পালানোর চেষ্ট করলে এই ভিডিও পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নির্যাতনের ঘটনায় বেঙ্গালুরু পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃতরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) এদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নয়াদিল্লির এনসিবির কাছে তথ্য চেয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (এনসিবি) মহিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীকে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি ভারতের নয়াদিল্লির এনসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তাছাড়া দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই ভুক্তভোগীকে ফিরিয়ে আনা যাবে। আসামিদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রথমে ইন্টারপোলের রেডনোটিশ জারি করা হবে। রেডনোটিশ জারির পর তাদের ফিরিয়ে দিতে এনসিবির মাধ্যমে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানানো হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও ভারত সরকারকে অনুরোধ করা হবে। তাদের ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে বলে মনে হয় না। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এখানে ভূমিকা রাখতে হবে। তাছাড়া বন্দি বিনিময়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের বহিঃসমর্পণ চুক্তি আছে। এ কারণে তাদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না বলেই আশা করছি।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, টিকটকের মডেল বানানোর ফাঁদে ফেলে নারীদের পাচার করছে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। পাচারের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত শুরু হয়েছে। জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।

তেজগাঁও বিভাগের এডিসি হাফিজ আল ফারুক যুগান্তরকে বলেন, মামলার তদন্তে এরই মধ্যে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, টিকটক মডেল বানানোর পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারে ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখায়। চক্রের সদস্যদের ফাঁদে পা দিলেই ভারতে পাচার করা হয়।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাচারের শিকার এক বাংলাদেশি তরুণীকে বীভৎস কায়দায় নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ২৩ বছর বয়সি ওই তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের পর দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়। ওই ভিডিওর সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার ছয়জনের ওই দলটিকে গ্রেফতার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। গ্রেফতার সবাই একই গ্রুপের এবং তারা বাংলাদেশি।

টিকটক হৃদয়ের সহযোগী যশোরের আলামিন ৮ মাস আগে বাড়ি ছাড়ে : যশোর ব্যুরো জানায়, ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিওতে টিকটক হৃদয় বাবুর সহযোগী যশোরের এক যুবকও রয়েছে। তার নাম আলামিন। বাড়ি যশোর শহরের চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকায়। তার পরিবারের সদস্যরা তাকে শনাক্ত করলেও তাদের দাবি, আট মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

আলামিন ভ্যানচালক মনু মিয়ার ছেলে। এ ব্যাপারে মনু মিয়া বলেন, আলামিন ভালো না। বাইরে থেকে তার কাছে লোক আসত। ঘরে বসে তারা কী সব (ইয়াবা) খেত। তাই আট মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। শুনেছি, আলামিন ভারত গেছে, তার বউ বাপের বাড়ি। ভারতে সে কী করছে জানি না, তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।

এলাকাবাসী জানায়, আলামিন দেশে দুটি বিয়ে করেছে। দুই সংসারে তার দুটি সন্তান রয়েছে। তাদের ফেলে সে ভারতে চলে যায়। ভিডিওতে সে গোলাপি ফুলহাতা গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট পরিহিত এবং তার পায়ে কালো রাবারের ব্যান্ড রয়েছে। এছাড়া ভিডিওতে থাকা লাল ফুলহাতা টপস পরা মেয়েটির নাম তানিয়া। তার বাড়ি যশোরের নওয়াপাড়ায়। তানিয়াকে আলামিন স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিয়ে ভারতে নিয়ে গেছে। আলামিন বা তানিয়া কেউই এখনো আটক হয়নি।

টিকটক হৃদয় বাবু, আলামিনসহ এই চক্রটি ভারতের বেঙ্গালুরুর কোর্টলোর এলাকায় থাকত। সেখানে ‘রাফি’ নামে একজনের আস্তানা রয়েছে। এই রাফির বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকায়। তার প্রকৃত নাম আশরাফুল মন্ডল। রাফিকে আলামিনরা বস বলে সম্বোধন করে।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) বেলাল হোসাইন বলেন, ভারতে তরুণী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত একজনের বাড়ি যশোরে বলে শুনেছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম