Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সারা দেশে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সারা দেশে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ

স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল-দোকানপাট খোলা রাখার দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। ঢাকার নিউমার্কেট, মিরপুর, ইসলামপুরসহ আশপাশের ব্যবসায়ীরা রাস্তা নেমে বিক্ষোভ করেন। মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো তারা বিক্ষোভ করেন। বিভিন্ন জেলায়ও ব্যবসায়ীরা একইভাবে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। 

সরেজমিন নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগের দুদিনের মতো মঙ্গলবারও ব্যবসায়ীরা ও দোকান কর্মচারীরা নিউমার্কেট, চাঁদনিচক, গাউছিয়া, নূর ম্যানশন, ইসমাইল ম্যানশন, ইস্টার্ন মল্লিকা, সুবাস্তু অ্যারোমা সেন্টারে জড়ো হন। কিন্তু পুলিশি তৎপরতার কারণে কেউই দোকান খুলতে পারেননি। একপর্যায়ে ছোট ছোট অংশে ভাগ হয়ে তারা দোকান খোলার দাবিতে সমাবেশ করেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার অনুমতি চান তারা। সমাবেশে হাতে লেখা নানা ব্যানার প্রদর্শন করতে দেখা যায়। এসব ব্যানারে লেখা ছিল, ‘করোনা থেকে বাঁচতে গিয়ে না খেয়ে মরতে চাই না’, ‘লকডাউনের নামে তামাশা চাই না’, ‘বইমেলা, শিল্পকারখানা খোলা থাকলে দোকান বন্ধ কেন?’, ‘আগে খাবারের নিশ্চয়তা দিন, পরে লকডাউন’, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানব, দোকানপাট খুলব’। 

নূর ম্যানশনে ইমিটেশন জুয়েলারি দোকানের কর্মচারী ইমরান আহমেদ বলেন, গত বছর ঈদের আগে লকডাউনে কোনো রকম জীবনটা নিয়ে বেঁচে ছিলাম। খরচ কমাতে বউ-বাচ্চা গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এরপরও চলতে না পেরে আত্মীয়-স্বজনের কাছে হাত পেতেছি। ধারদেনা করে কোনো রকমে সুদিনের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে লকডাউন দেওয়ার চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি। দোকান খুলতে না পারলে, বেচাবিক্রি করতে না পারলে মালিক তো এবারও বেতন দিতে পারবে না।

নূর ম্যানশনের এক দোকান মালিক বলেন, সাধারণ দোকান মালিকদের দুঃখ কেউ বোঝে না। মালিক সমিতির নেতারা নিজেদের পদ-পদবি ঠিক রাখতে সাধারণ মালিকদের কষ্টের কথা সরকারের কাছে বলে না। 

তিনি বলেন, গত বছর লকডাউনে নিঃস্ব হয়ে গেছি। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারিনি। এরপরও ধারদেনা করে নতুন করে বাঁচার তাগিদে দোকান চালু করেছি। ভেবেছিলাম এবার ঈদে-বৈশাখে সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু সেটা আর হলো না। বৈশাখ উপলক্ষ্যে যে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, সেটার পুরোটাই এখন লোকসানের খাতায়। 

দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতন কীভাবে দেব? তিনি আরও বলেন, যারা রেডিমেট থ্রি-পিস ও থান কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা করেন, তারা সবাই চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন। কারণ রোজার আগে এ সময় দেশের বিভিন্ন এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী থ্রি-পিস ও কাপড় সংগ্রহ করেন। লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকায় এখন বিক্রেতারা আসতে পারছে না। রোজা শুরু হলে তখন আর কেউ কাপড় নেবে না। 

লকডাউনের বিরুদ্ধে মিরপুরে ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করেছেন। বেলা ১১টায় মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে শাহআলী মার্কেট ও আশপাশের কয়েকটি মার্কেটের শতাধিক ব্যবসায়ী মানববন্ধনে অংশ নেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের ব্যবসায়ীরাও অংশ নেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, তারা লকডাউন বহনে সক্ষম নন। লকডাউন তুলে না নিলে জীবন ও জীবিকার ওপর তা আঘাত হানবে।

রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানববন্ধন, বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বেলা ১১টার দিকে ব্যবসায়ীরা একে একে শিমরাইল মোড়ের হাজী আহসান উল্যাহ মার্কেটের সামনে জড়ো হন। পরে তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানববন্ধন করেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে একেকজন ব্যবসায়ী লাখ লাখ টাকার মাল বাকিতে এনেছেন। এগুলো বিক্রি করতে না পারলে নিঃস্ব হয়ে যাবেন সবাই। মানববন্ধন শেষে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এক পাশের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

বরিশাল : দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর চকবাজারে বিক্ষোভ করেন দোকান মালিক-কর্মচারীরা। মিছিল নিয়ে তারা নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বরিশাল বহুমুখী সিটি মার্কেটের কর্মচারীরা। সমাবেশে চকবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুর রহিম বলেন, ঘোষিত লকডাউনে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা। শুধু দোকানপাট বন্ধ করে তাদের কর্মহীন করা হয়েছে। লকডাউন ঘোষণা করায় দোকান মালিক ও কর্মচারীরা চরম সংকটে পড়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের শর্তে দোকানপাট খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। 

সিলেট : সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নগরীর জিন্দাবাজারের শুকরিয়া মার্কেটের সামনে থেকে মিছিল বের করেন ব্যবসায়ীরা। কোর্ট পয়েন্টে গিয়ে তারা মানববন্ধন করেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। দোকানপাট না খুললে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

টাঙ্গাইল : বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের সমবায় সুপার মার্কেটের সামনে বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, লকডাউনে দোকান খোলা রাখতে না পারলে পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। ঈদকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ টাকার মাল তারা মজুত করেছেন। দোকান খোলা রাখতে সরকার ঘোষিত যে কোনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অঙ্গীকার করেন তারা। মির্জাপুরেও বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা। 

জামালপুর : বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের প্রধান সড়কের তমালতলা মোড়ে বিক্ষোভ করেন দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। এ সময় শহরের প্রধান সড়কে ইজিবাইক ও অন্যসব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ চলাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। 

কুমিল্লা : নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ, মানববন্ধন করেন ব্যবসায়ীরা। কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, গত বছর লকডাউনে ব্যবসায়ীদের যে পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে তা এখনো কাটেনি। গত কয়েক মাসে ব্যবসায়ীরা একটু উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। তখনই আবার লকডাউন দিয়ে তাদের কোমরে আঘাত করা হয়েছে।

চাঁদপুর : ফরিদগঞ্জ পশ্চিম বাজার ও হাজীগঞ্জ বাজারে ব্যবসায়ীরা লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। হাজীগঞ্জ বাজারের হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বের করা মিছিলে বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। মিছিল শেষে হাজীগঞ্জ প্লাজার সামনে সমাবেশ হয়। একই দাবিতে ফরিদগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরাও মিছিল-সমাবেশ করেন। 

গাইবান্ধা : শহরের নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেন। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। 

বগুড়া : দুপুরে শহরের সাতমাথায় বিক্ষোভ-সমাবেশ শেষে ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। দোকানপাট খুলে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে তারা বিক্ষোভ করেন।

সাতক্ষীরা : সুলতানপুর বড়বাজার এবং সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে বস্ত্র ব্যবসায়ী দোকান শ্রমিক-কর্মচারীরা। তারা বলেন, ঈদে মালিকরা বেতন-বোনাস না দিলে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে। গত বছর করোনার কারণে দোকানপাট বন্ধ থাকায় মালিকরা বেতন-ভাতা দেননি বলে তারা অভিযোগ করেন। 

এছাড়া ময়মনসিংহের নান্দাইল, ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জ উপজেলা, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের তথ্য দিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম