স্বাস্থ্যকর্মীদের ১শ কোটি টাকার প্যাকেজ
নির্দেশনার ৯ মাস পর প্রণোদনা ছাড়
মিজান চৌধুরী
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নির্দেশনা জারির নয় মাস পর কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একশ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
এরই মধ্যে ১৮০০ ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রণোদনার ৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আরও ৩ হাজার ৬৮৭ জনকে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তাদের পেছনে ব্যয় হবে ১৭ কোটি টাকা। সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে এসব উপকারভোগীকে এককালীন তাদের দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্যাকেজের অর্থ ছাড় করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সম্মুখযোদ্ধা হিসাবে চিকিৎসক-নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত বছরের ৯ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ তাদের এককালীন দেওয়ার নীতিমালা জারি করে। ওই নীতিমালার পর গত সোমবার ২২ ফেব্র“য়ারি অর্থ বিভাগ এই প্যাকেজের অর্থ ছাড় করেছে।
অর্থাৎ নীতিমালা জারির ৯ মাসের বেশি অতিবাহিত হওয়ার পর এই প্যাকেজের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এর আগে সরকারের ঘোষিত আরও ২০টি প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ ছাড় শুরু হয়। কোনো কোনো প্যাকেজের অর্থ এরই মধ্যে বিতরণ শেষ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনা প্যাকেজের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে আসতে বিলম্ব হয়েছে। এর কারণ জানা নেই। কারা প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পাবে সেটি জানতে এবং উপকারভোগীদের তালিকা পাঠাতে একাধিকবার স্বাস্থ্য বিভাগকে তাগিদ দেওয়া হয় অর্থ বিভাগ থেকে।
তবে প্রথম প্রস্তাব আসার পর ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনুকূলে ৯ কোটি টাকা প্যাকেজের অর্থ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আরও ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রণোদনার অর্থ চেয়ে প্রস্তাব আসছে। খুব শিগগিরই তাদের অর্থ ছাড় করা হবে।
সূত্র জানায়, ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা প্রণোদনা হিসাবে দেওয়া হয়েছে ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮শ চিকিৎসক, ৪৬৯ জন নার্স ও ৫৩৮ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের ১০৭ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে দেওয়া হয়েছে ৬২ লাখ টাকা, চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের ৩৮৩ জনকে প্রায় ২ কোটি টাকা, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ৭৯ জনকে প্রায় ৪৬ লাখ টাকা এবং ফেনী হাসপাতালের ২০৯ জনকে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
এছাড়া নোয়াখালীর জেনারেল হাসপাতালের ১২৩ জন ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী প্রণোদনা পেয়েছেন। তাদের দেওয়া হয়েছে প্রায় ৬১ লাখ টাকা। প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ১১২ জনকে। তারা পেয়েছেন প্রায় ৫১ লাখ টাকা। একইভাবে প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২২১ জনকে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে শুধু পেয়েছে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার গ্রিড হাসপাতালের ১৮১ জন ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। তারা পেয়েছেন ৯৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থপ্রাপ্তির অন্যান্য হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের রেলওয়ে কোভিড আইসোলেশন হাসপাতালের ৩৩ জন, তারা পেয়েছেন ১৩ লাখ টাকা, চটগ্রাম বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের ৩২ জন পেয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। পাশাপাশি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার জেনারেল হাসপাতালের ৭৮ জনকে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা, বান্দরবানের সদর হাসপাতালে ৭৯ জনকে দেওয়া হয় ৩৪ লাখ টাকা, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ৪৩ জন পেয়েছেন ২১ লাখ টাকা এবং লালমনিরহাট হাসপাতালের ১২১ জনকে দেওয়া হয় ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফায় অর্থ বিভাগের কাছে আরও ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রণোদনা চেয়ে প্রস্তাব এসেছে। সেখানে ৩ হাজার ৬৮৭ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য ১৭ কোটি টাকা চাওয়া হয়। এর মধ্যে চিকিৎসক হচ্ছেন ১ হাজার ৫২০ জন, নার্স ৪০৬ জন এবং স্বাস্থ্যকর্মী হচ্ছেন ১ হাজার ৭৬১ জন। এর মধ্যে রয়েছে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ৭৪৩ জন। এই হাসপাতাল চেয়েছে ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
এছাড়া মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ১০৪ জনের জন্য ৫৭ লাখ টাকা, ঢাকা মিরপুর মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ১৪২ জনের জন্য প্রায় ৬৯ লাখ টাকা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের ৮২ জনের জন্য ৬১ লাখ টাকা, দিনাজপুর আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০৬ জনের জন্য ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪৮২ জনের জন্য অর্থ প্রণোদনার অর্থ চাওয়া হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
অর্থ বিভাগের কাছে আরও যেসব প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছেন, সেগুলোর মধ্যে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৮ জনের জন্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫৭৭ জনের জন্য আড়াই কোটি টাকা ও পিরোজপুর জেলা সদর হাসপাতালের ৬১ জনের জন্য প্রস্তাব হচ্ছে ৩৪ লাখ টাকা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫১৪ জনকে প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের সম্মানী বাবদ ব্যয় হবে ৩ কোটি টাকা। পাশাপাশি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫৭০ জনের জন্য ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালের ৯৫ জনের জন্য ৫৬ লাখ টাকা, বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ৩ জন এবং সুনামগঞ্জের সদর হাসপাতালের ৮০ জনের জন্য ৩৮ লাখ টাকা চাওয়া হয়।