Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পদ্মা সেতু রেললিংক সংযোগ প্রকল্প, এখনও বন্ধ দুই প্রান্তের কাজ, গতি নেই ত্রুটি সমাধানে

Icon

শিপন হাবীব

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২০, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পদ্মা সেতু রেললিংক সংযোগ প্রকল্প, এখনও বন্ধ দুই প্রান্তের কাজ, গতি নেই ত্রুটি সমাধানে

ফাইল ছবি

পদ্মা সেতু এবং পদ্মা সেতু রেল লিংক সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প দুটি কাজ সমান্তরালে চলছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে এ দুটি প্রকল্প অন্যতম।

এদিকে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ প্রায় ১ বছর আগে আপত্তি জানায়, মূল পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে (সেতু থেকে নামার রাস্তায়) রেল লিংক প্রকল্প নির্মাণে ‘ত্রুটি’ রয়েছে। সেই আপত্তির কারণে সেতুর দুই প্রান্তে রেল লিংক সংযোগ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

চিহ্নিত ত্রুটি দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে নকশার মান (ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড) ও রাস্তার নকশা চেয়ে রেল লিংক সংযোগ প্রকল্প পরিচালকের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালকের কাছে ৪টি চিঠি দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনোটির উত্তর আসেনি।

যদিও সম্প্রতি রেলপথমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, রেল ও সেতু সচিব, দুই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা একাধিকবার ‘ত্রুটি’ যুক্ত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

সমস্যা সমাধানে দ্রুত কাজ করছেন জানিয়ে উভয় মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এটিকে এখনও ‘ত্রুটি’ বলা যাবে না। যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করা হবে। নতুবা একই দিন সেতু দিয়ে যান চলাচলের সঙ্গে ট্রেন পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

বর্তমানে পদ্মা সেতুর সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। অপরদিকে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারিতে শুরু হওয়া পদ্মা রেল লিংক সংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩৩ শতাংশ (আর্থিক অগ্রগতি) এবং ২৫ শতাংশ (ভৌত অগ্রগতি)।

অথচ প্রতিশ্রুতি রয়েছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনই সেই সেতু দিয়ে একই দিন ট্রেনও চলাচল করবে। কিন্তু রেল লাইন পিলার স্থাপনে ত্রুটি/সমস্যা দেখা দেয়ায় রেলওয়ের অংশের কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছে।

ফলে একই দিন সেতু দিয়ে ট্রেন পরিচালনা-চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সমীক্ষা অনুযায়ী কাজ করছে- এ ত্রুটি/সমস্যা তাদের নয়।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে পদ্মা সেতু রেল লিংক সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, ‘সমস্যা সমধান না হওয়া পর্যন্ত যে স্থানে কাজ বন্ধ রয়েছে- সেখানে কাজ করা যাচ্ছে না।

আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানে বুয়েটের প্যানেলসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করছি। তাছাড়া এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আপনাদের (মিডিয়া) সঙ্গে কথা বলতে চাই না। আমরা কাজ করছি, সমস্যা সমাধান করতে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, রেলপথমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রীসহ রেলওয়ে ও আর্মির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ত্রুটিযুক্ত স্থান পরিদর্শন করেছেন। সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে- এমন প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে।

এখন দুই কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় রেখেই এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। ইতোমধ্যে রেলের অংশে যতটুকু কাজের অগ্রগতি হওয়ার কথা তা হয়নি। সমস্যার সমাধান হলেই আমাদের অংশে কাজ শুরু করা যাবে।

এদিকে পদ্মা সেতু রেল লিংক সংযোগ প্রকল্প সূত্র জানা যায়, পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আপত্তি আসার পর বিশেষ করে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট থেকে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে (২৫ আগস্ট, ৯ সেপ্টেম্বর, ১৪ সেপ্টেম্বর এবং ২২ সেপ্টেম্বর) পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক বরাবর চারটি পত্র দেয়া হয়েছে।

আজ পর্যন্ত চারটি পত্রের কোনোটিরই উত্তর পাওয়া যায়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ডিজাইন এবং টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসতেই চারটি পত্র প্রেরণ করা হয়েছিল।

রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ২০১৫ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী তার উড়াল রেললাইন নির্মাণ করছেন।

এখন সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ‘ত্রুটি’ আপত্তির পর রেল যদি একক সিদ্ধান্তে ডিজাইন পরিবর্তন কিংবা রি-ডিজাইন করে সমস্যা সমাধান করে, পরবর্তীতে সেতু কর্তৃপক্ষের আবারও আপত্তি আসতে পারে- এমন শঙ্কা রেল লিংক সংযোগ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেতু বিভাগের মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে রেল লাইন অতিক্রম করবে যে স্থান দিয়ে সেই স্থানেই আপত্তি জানায় সেতু কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সেতুর বিদ্যমান রাস্তার প্রস্থ ১০.০৮ মিটার (জাজিরা প্রান্ত) এবং ৯.০৭ মিটার প্রস্থ (মাওয়া প্রান্ত) রয়েছে।

এদিকে সেতুর দুই পাশে থাকা রেললাইনের মাত্র ২টি (২৫ এবং ১৪ নং পিলার) পিলার স্থাপন সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে সেতু কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। এখন সেতু কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে উভয় প্রান্তে রাস্তার প্রস্থ হবে ১৫.৫ মিটার। রেল বলছে, ১৫.৫ মিটার কেন লাগবে, লাগবে ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড কীভাবে হবে, সেই সব তথ্য-উপাত্ত চেয়েই ৪টি পত্র দেয়া হয়।

এদিকে পদ্মা সেতু রেল লিংক সংযোগ প্রকল্পের কাজ ধীরগতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ত্রুটি’ এবং করোনা ও বন্যার আঘাত। জাজিরা অংশে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার রেললাইন অংশে বন্যার কারণে গত ৩ মাস ধরে যথাযথ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে চীনের ডিজাইনারদেরও পাওয়া যাচ্ছে না।

এমন অবস্থায় দ্রুত ত্রুটি/সমস্যা সমাধান না হলেও এ প্রকল্পের কাজ আরও ধীরগতি হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার বিকালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা রেলওয়ের কাজ বন্ধ রাখতে বলে দিয়েছি। যতক্ষণ না ত্রুটির সমাধান না হচ্ছে, ততক্ষণ সেতুর দুই প্রান্তে তারা কাজ করতে পারবে না। কারণ এমন অবস্থায় তাদের কাজ সম্পূর্ণ হলে ভয়াবহ ত্রুটি দেখা দেবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক যুগান্তরকে জানান, পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পে যতুটুক সমস্যা কিংবা ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে তা আমরা দেখেছি। উভয়ের (দুই প্রকল্প) মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।

দেশ ও জাতির স্বার্থে এ প্রকল্প দুটির কাজ দ্রুত সমাধানে যা উত্তম তাই আমরা করব করছি। কারণ রেলের কাজ এ সমস্যার জন্য বন্ধ হয়ে আছে, এতে কাজের গতি কমে যাবে। এখন কার কারণে এমনটা হয়েছে, সেটা দেখার চেয়ে জরুরি, দ্রুত সমাধান। এজন্য আমরা বারবার বসছি।

বুয়েটের প্যানেল প্রধান অধ্যাপক এএফএম সাইফুল আমিন বলেন, এ ইস্যুটি দ্রুত, পর্যাপ্ত ও যথাযথভাবে সমাধানে নির্মাণ, তদারকি ও নকশা টিম কাজ করছে। পিবিআরএলপি ও পিএমবিপি প্রকল্পের তথ্যের ভিত্তিতে টিমগুলো কাজ করছে।

এটি চলমান নির্মাণ কাজের গতির ওপর কোনো প্রভাব ছাড়া দ্রুত সমাধান হবে। প্রকল্পটি যথাসময়ে শেষ হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই এগোচ্ছি। একটি সঠিক সমাধানে আমরা পৌঁছব, দ্রুত সময়ের মধ্যেই।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রেলপথ সচিব মো. সেলিম রেজা যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকবার সমস্যাগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। সেতু বিভাগ সচিবের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে, এখনও আলোচনা চলছে।’

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম