
প্রিন্ট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৯ এএম
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আজ
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধিতে আজ শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন

যুগান্তর রিপোর্ট ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০১৮, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী আজ। প্রতি বছর এ দিনটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে উদযাপন করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ পুরো জাতি দিনটি পালনে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্র ও সরকারের এ দুই শীর্ষ ব্যক্তিই জাতির পিতার জন্মদিনে তার জন্মস্থান গোপালগঞ্জে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়নের জন্য দেশের নতুন প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে দেশের মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘আসুন, শিশুদের কল্যাণে আমরা আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি।’
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। লুৎফর-সায়েরা দম্পতির এ সন্তানই পরে এ দেশের মানুষের পরাধীনতা মুক্তির ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন। টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আজ সকাল সাড়ে ৬টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে তাকে স্মরণ করবে। সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। পরে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। পৌনে ১১টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এ সময় একটি গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ছাড়াও আগামীকাল রোববার দুপুর ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আয়োজনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচিগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কুল জীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কৈশোরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকাবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন। ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের মতো রাজনীতিকের সান্নিধ্যে আসেন। এ নেতাদের সাহচর্যে তিনি নিজেকে ছাত্র-যুব নেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপরই ঢাকায় ফিরে নতুন রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা নিয়ে অগ্রসর হন বঙ্গবন্ধু। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হলে তরুণ নেতা শেখ মুজিব দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পান। পরে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ।
বঙ্গবন্ধু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আটান্নর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী সব আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের এসব আন্দোলনের কারণে বারবার কারাগারেও যেতে হয় তাকে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পান তিনি। আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্র“য়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে তাদের কারাগারে পাঠান। ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে। এ সময়ে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নানা চক্রান্ত করে বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন এবং চূড়ান্তপর্বে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দেন।
এ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু বেশি দিন দেশ গঠনের কাজ করে যেতে পারেননি। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে নিজ বাসভবনে ক্ষমতালোভী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসান ঘটে।
যুগান্তরের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে উপস্থিত হয়ে সমাধিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের স্বাগত জানাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত মহাসড়কে শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে গোপালগঞ্জকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের কর্মসূচি সফল করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীবর্গ ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের টুঙ্গিপাড়া আগমনকে নির্বিঘœ করতে তিনস্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শিশু দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গমাতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সারা দেশে কোরআনখানি ও আলোচনা সভা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সারা দেশে ৭১ হাজার ৫৩৫টি স্থানে কোরআনখানি, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৬৪টি জেলা কার্যালয়, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার ৬৭ হাজার ৩৬৮টি কেন্দ্র, ৫৫০টি উপজেলা/জোন, এক হাজার ৫০০টি মডেল রিসোর্স সেন্টার, এক হাজার ১০টি দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, ৫০টি ইসলামিক মিশন, সাতটি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি, মসজিদ পাঠাগার শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের ৫৪১টি মডেল লাইব্রেরি ও ইসলামিক মিশনের ৪৪৫টি মাদ্রাসা মক্তবে আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। এরপর সকাল ৭টায় মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার ৬৭ হাজার ৩৬৮টি কেন্দ্র ও এক হাজার ১০টি দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় কোরআনখানি, মিলাদ, কিয়াম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টায় জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মোট সাত হাজার ৭২২টি কেন্দ্রে শিশু সমাবেশ, র্যালি, হামদ-না’ত, গজল পরিবেশন, কবিতা আবৃত্তি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের থিম সং পরিবেশনসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সকাল ১০টা থেকে ১২টায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী’ এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ইসলাম প্রচার প্রসারে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শাহাদাতবরণকারী সব সদস্যের রুহের মাগফিরাত কামনা করে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সকাল ১১টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররমস্থ মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।