আমাদের শিল্প-সাহিত্য বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে চাই: প্রধানমন্ত্রী
যুগান্তর রিপোর্ট ও বাসস
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: যুগান্তর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বিকালে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করে বলেন, তার সরকার বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের মান আরও উন্নত করে সারা বিশ্বে তা ছড়িয়ে দিতে চায়। তিনি বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলার মধ্য দিয়ে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে কেবল বাংলাদেশের মধ্যেই নয়, বিশ্ব দরবারে পৌঁছাতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রন্থমেলা এখন কেবল বই কেনা-বেচার কেন্দ্র নয়, এটি বাঙালির প্রাণের মেলাও। গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাঙালিরা দেশে আসেন। বিদেশি নাগরিকরাও বইয়ের প্রতি বাঙালির নজিরবিহীন ভালোবাসা প্রত্যক্ষ করতে বাংলাদেশ সফরে আসেন।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, তিনি ছাত্রজীবনে গ্রন্থমেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকায় এখন আমার সেই স্বাধীনতা নেই। প্রধানমন্ত্রী গ্রন্থমেলা উপলক্ষে এখানে আসার সুযোগ দেয়ার জন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়নের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দ্রুত এগিয়ে চলেছি এবং আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছি। আমরা দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই এবং বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে সম্মান অর্জন করতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটি বিজয়ী জাতি এবং আমরা মাথা উঁচু করে ও বিজয়ের চেতনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং বিশ্ব মঞ্চে বাংলাভাষাকে উপস্থাপনের বিষয়টি তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু রচিত ৩য় বই ‘আমার দেখা নয়া চীন’ শীর্ষক বইয়ের মড়ক উন্মোচন করেন। গ্রন্থমেলা উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আতাউর রহমান, খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস প্রমুখ পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধি দল ১৯৫২ সালে এক শান্তি সম্মেলনে অংশ নিতে চীন সফর করেছিলেন। ‘আমার দেখা নয়া চীন’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সম্মেলনে জাতির পিতা প্রথমবারের মতো বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। বইটিতে জাতির পিতা নতুন চীনের কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থী এমনকি শিশুসহ জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথাও বর্ণনা করেছেন।
এদিকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলা একাডেমি বঙ্গবন্ধুর সব বই নিয়ে একটি রচনাসামগ্রী বের করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি শাসকদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরেই জাতির পিতা বিদেশ চলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তবে তিনি এ (নির্যাতন) সম্পর্কে কাউকে কিছু বলেননি, বরং তিনি বলেছিলেন- দেশে যা কিছু ঘটেছে, ঘটছে কিন্তু বিদেশে এসে আমরা দেশের সমালোচনা করতে পারি না।
শেখ হাসিনা বলেন, তবে আজ আমরা দেখতে পাই, আমাদের দেশে অনেকে বিদেশিদের কাছে অভিযোগ করতে গিয়ে অতি উৎসাহিত হয়ে যা ঘটেনি তাও বেশি করে বলে। ... আমরা এ প্রবণতাটি দেখি (কিছু লোকের মধ্যে)।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটি পড়লে মানুষ নতুন চীন সম্পর্কে অনেক কিছু উপলব্ধি করতে পারবে এবং জানতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তি সম্মেলনের ছবি, মনোগ্রাম এবং তথ্য সংগ্রহ করে বইটি প্রকাশে সহায়তার জন্য কবি তারিক সুজাতকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। এছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
এ বছর বাংলা একাডেমির অমর গ্রন্থমেলা ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ’ পালন উপলক্ষে তার প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দশ কবি ও সাহিত্যিকের কাছে হস্তান্তর করেন। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- কবিতায় মাকিদ হায়দার, উপন্যাসে ওয়াসি আহমদ, প্রবন্ধ ও গবেষণায় স্বরচিস সরকার, অনুবাদে খায়রুল আলম সবুজ, নাটকে রতন সিদ্দিকী, কিশোর সাহিত্যে রহিম শাহ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্যে রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, বিজ্ঞান উপন্যাসে নাদিরা মজুমদার, ভ্রমণ সাহিত্যে ফারুক মইনউদ্দিন এবং লোকসাহিত্যে সাইমন জাকারিয়া।
গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’-এর সপ্তম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন : গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’-এর সপ্তম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রন্থমেলা উদ্বোধন শেষে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) স্টলে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তার হাতে গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’-এর সপ্তম খণ্ড তুলে দেন সিআরআই ট্রাস্টি ও গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’-এর প্রকাশক রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। বইটি হাতে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এইটা তো সেই বই, তাই না।’ এ বইটির সম্পাদনায় সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল প্রধানমন্ত্রীর।
শিশু-কিশোরদের জন্য তৈরি গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’-এর সপ্তম খণ্ডে উঠে আসে তৎকালীন দুর্ভিক্ষের চিত্র। আর সেখানে মানুষগুলোর অবয়ব পরিবর্তন করে রুগ্ন ও শীর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- যেমনটা দুর্ভিক্ষের সময় ছিল। শুধু তাই নয়, বইটির সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম ভুলগুলো খুঁজে বের করে তা ঠিক করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
সপ্তম পর্বের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ অন্য অতিথিদের হাতে এক সেট করে বই তুলে দেয়া হয়। মোড়ক উন্মোচনের সময় উপস্থিত ছিলেন- সিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামস, বইটির সম্পাদক শিবু কুমার শীল, কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময়সহ সিআরআই’র কর্মকর্তারা।