Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপনির্বাচন: আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম জয়ী

ভোট পড়েছে ২৩ শতাংশ * পুনর্নির্বাচন দাবি আবু সুফিয়ানের * নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতেই অপপ্রচার -মোছলেম

Icon

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপনির্বাচন: আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম জয়ী

মোছলেম উদ্দিন আহমদ। ছবি: যুগান্তর

কম ভোটার উপস্থিতি এবং অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদ (নৌকা) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৮৭ হাজার ২৪৬ ভোট।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবু সুফিয়ান (ধানের শীষ) পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৩৫ ভোট। চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম থেকে রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফল ঘোষণা করেন।

২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে বলে তিনি জানান। এ আসনে ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮। কেন্দ্র ছিল ১৭০টি। এ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য বাংলাদেশ জাসদের নেতা মাইনউদ্দিন খান বাদল ৭ নভেম্বর মারা গেলে আসনটি শূন্য হয়। তিনিও নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন।

ফল ঘোষণার সময় জিমনেশিয়ামে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দীন আহমদসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকলেও বিএনপির কেউই ছিলেন না।

এদিকে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেছেন বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের নামে জনগণের সঙ্গে তামাশা, প্রহসন করা হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য এটা অশনিসংকেত। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।

ভোটে মাঠের চিত্র : বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান প্রথম দফায় দুপুর ১টায় ও দ্বিতীয় দফায় বেলা ৩টায় ব্রিফিং করে কেন্দ্র দখল ও হামলার অভিযোগ এনে ভোট স্থগিত করে পুনঃনির্বাচন দাবি করে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যান। যদিও আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদ ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দাবি করে নির্বাচনী মাঠে শেষ পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন।

সকাল ১০টার চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় সিডিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। কেন্দ্রটিতে ভোটার ছিল ১ হাজার ৯১৯। সকাল ১০টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৩০টি। সকাল ১০টার দিকে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান এ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন। ভোট দেয়া শেষে তিনি গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন। তখনই কেন্দ্রের সামনে জড়ো হন কয়েকশ’ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

কেন্দ্রের অদূরে মসজিদের সামনে অবস্থান নেন একাধিক শ্রমিক নেতা। এ কারণে বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান সকাল ১০টার দিকে ভোট দিতে এলেও প্রায় দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে অনেকটা ‘অবরুদ্ধ’ ছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার দেবদূত মজুমদার এসে সুফিয়ানকে নিরাপদে তার (সুফিয়ানের) গাড়িতে তুলে দেন।

সকাল ৯টার দিকে চান্দগাঁও এনএমচি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে একটি বুথে ভোটারদের নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করছিল কয়েকজন যুবক। এক মহিলা ওই ছবি মোবাইলে ধারণ করতে চাইলে পুলিশ ও কয়েকজন যুবক ওই মহিলাকে ধাওয়া করে। প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে এ কেন্দ্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

এখানে এক আইনজীবীসহ আহত হন অন্তত ৩ জন। এর মধ্যে নগর বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্র কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম (৫৭) ও বিএনপি কর্মী মো. খোরশেদ আলম (৩০) রয়েছেন। এ কেন্দ্রের এক সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার জানান, হামলার ঘটনায় আতঙ্কে বেশিরভাগ ভোটার কেন্দ্রে আসেননি।

দুপুর ১টার পর বোয়ালখালীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে শাকপুরা দশভূজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোট কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন। তারা মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে ভোট দিচ্ছেন। কেন্দ্রটিতে ভোটার ২ হাজার ৪৯৪। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫৮৬টি। কেন্দ্রটিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আধিপত্য ছিল। বিএনপির কোনো নেতাকর্মী বা এজেন্ট চোখে পড়েনি।

পুনর্নির্বাচনের দাবি আবু সুফিয়ানের : উপনির্বাচন স্থগিত করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান। বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে এসে বেলা ৩টায় নগরীর নূর আহমদ সড়কের নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। ভোট দিতে গিয়ে হামলায় দু’জন গুরুতর আহতসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। সুফিয়ান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।

নির্বাচনের নামে যেটা হয়েছে সেটা জনগণের সঙ্গে তামাশা, প্রহসন। গণতন্ত্রের জন্য এটা অশনিসংকেত। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আরেকবার প্রমাণিত হল এ নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

পুনর্নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না : নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, নির্বাচন চলাকালে কোনো প্রার্থীর এজেন্ট কোনো ধরনের অভিযোগ দেয়নি।

তাছাড়া তারা (বিএনপি) একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সেটি আমরা গ্রহণ করেছি। তাতে নির্বাচন স্থগিত করে পুনর্নির্বাচনের দাবি করা হয়েছে। কিন্তু কেন পুনর্নির্বাচন দিতে হবে? একটি কেন্দ্রেও এমন কোনো গোলযোগ হয়নি যাতে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তাহলে কেন পুনর্নির্বাচন? সব প্রার্থীর অংশগ্রহণে একটি স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন হয়েছে।

প্রশ্নবিদ্ধ করতেই অপপ্রচার -মোছলেম : সুফিয়ানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা অভিযোগ করেন মোছলেম উদ্দিন আহমদ। বিকালে দলীয় কার্যালয়ে মোছলেম উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই সুফিয়ান অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) সারা দিন ভোট কেন্দ্রে ঘুরেছেন। কোনো কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করার মতো বা বন্ধ হওয়ার মতো কী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে? কোথাও কী সংঘর্ষ হয়েছে? কোথাও নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তও হয়নি। মূলত পরাজয় নিশ্চিত জেনেই বিএনপি প্রার্থী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছেন।

এ নির্বাচনে প্রমাণ, সিইসিকে বিশ্বাস করা যায় না- রিজভী : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির বলেছেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনের মাধ্যমে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগাম বার্তা দেয়া হল কিনা জনগণ সেটি জানতে চায়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হল, এ সিইসি কেএম নুরুল হুদাকে বিশ্বাস করা যায় না।

সোমবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এ সময় দলটির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রিজভী বলেন, হুদা কমিশন ভোট ডাকাতির বৈধতাদানের সিলমোহরে পরিণত হয়েছে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের শত্রুপক্ষ। তিনি গণতন্ত্রের শত্রু। তিনি বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের সঙ্গে শত্রুতামূলক আচরণ করেন। বিষাক্ত সাপকেও বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাস করা যায় না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম