Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

দুদকের প্রতিবেদন দাখিল: আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতেই নাজমুল হুদার মামলা

এবার হুদার বিরুদ্ধেই মামলা করবে দুদক * ঘুষ নেয়ার আরেক মামলায়ও বিচারের মুখোমুখি হুদা দম্পতি

Icon

হাসিব বিন শহিদ

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুদকের প্রতিবেদন দাখিল: আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতেই নাজমুল হুদার মামলা

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার বিরুদ্ধে তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগে করা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মামলাটি ‘মিথ্যা’ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ মামলায় আদালতে দেয়া এক প্রতিবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে, নাজমুল হুদা অসৎ উদ্দেশ্যে আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য সাজানো মামলা করেছেন।

মিথ্যা মামলা করায় নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে শিগগিরই মামলা করবে দুদক। এছাড়া ঘুষ গ্রহণের অপর একটি মামলাতেও বিচারের মুখোমুখি হতে চলেছেন নাজমুল হুদা দম্পতি।

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার করা ওই মিথ্যা মামলায় সম্প্রতি ‘এফআর অ্যাজ আইএফ’ (ফাইনাল রিপোর্ট অ্যাজ ইনটেনশনালি ফলস) দাখিল করা হয়েছে। তদন্ত শেষে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন আদালতে এ রিপোর্ট দাখিল করেন।

ইতিমধ্যেই ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ তা দেখেছেন। দুদকের রিপোর্টে বলা হয়, ‘এজাহারে বর্ণিত ঘটনা একটি কাল্পনিক-সাজানো ঘটনা। এজাহারকারী (নাজমুল হুদা) অসৎ উদ্দেশ্যে আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার মানসে আলোচ্য মিথ্যা মামলাটি রুজু করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।’

রিপোর্টে আরও বলা হয়, মামলার তদন্তকালে সাক্ষী দুদকের আইনজীবী একেএম ফজলুল হক জানান- তিনি নাজমুল হুদার লিভ টু আপিল শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আপিল বিভাগের তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ৭ জুন হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশ বাতিল করে রায় দেন; যা তাৎক্ষণিকভাবে দুদকের আইনানুগ বিভাগের মহাপরিচালককে অবহিত করা হয়। এজাহারে বর্ণিত ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আপিল বিভাগ বা তৎকালীন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্য আদালতে আপিল মামলা বাতিল বলে কোনো ঘোষণা বা আদেশ দেননি।

অপর সাক্ষী ফাহাদ হোসেন জানান- সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে দুটি লিভ টু আপিল শুনানির সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। সাবেক প্রধান বিচারপতি কর্তৃক ঘুষ দাবি বা এ সংক্রান্ত প্রস্তাব দেয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

অপর দুই সাক্ষী আশানুর রহমান ও শাহানারা বেগমও তাদের বক্তব্যে জানান- আপিল বিভাগে ওই লিভ টু আপিল শুনানির সময় তারা উপস্থিত ছিলেন না। সাবেক প্রধান বিচারপতি কর্তৃক নাজমুল হুদাকে ডেকে নিয়ে ঘুষ দাবি করার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।

নাজমুল হুদার মিথ্যা মামলা : গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে উৎকোচ দাবির অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন নাজমুল হুদা। মামলার অভিযোগে বলা হয়- দৈনিক যুগান্তরের তৃতীয় পাতায় গত বছরের ৩০ মার্চ ‘জামিন ছাড়াই বছর পার নাজমুল হুদা ও স্ত্রীর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনের মাধ্যমে নাজমুল হুদা জানতে পারেন মতিঝিল থানার মামলাটি (ঘুষ গ্রহণের মামলা) পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। প্রকাশ্য আদালতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের দেয়া রায়ে সন্তুষ্ট হয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ‘দুদকের করা লিভ টু আপিলদ্বয় ডিসমিস করা হল।’ এরপরও কিভাবে ওই আদেশ পাল্টে গিয়ে লিভ টু আপিলদ্বয় মঞ্জুর হয়? আমি (নাজমুল হুদা) নিশ্চিত যে, আসামির (এসকে সিনহা) একটি অবৈধ লেনদেনের প্রস্তাবে আমি রাজি না হওয়াতেই আমাকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে। ২০১৭ সালের ২০ জুলাই দুপুর ২টার দিকে এসকে সিনহার জমাদার চেম্বারে এসে আমাকে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানান। ওই সময় আমার মুহুরি ফরহাদ, জুনিয়র অ্যাডভোকেট আশানুর রহমান, ইকবাল আখন্ডি ও শিউলী খানম চেম্বারে উপস্থিত ছিলেন। ওই দিন আড়াইটার দিকে প্রধান বিচারপতির খাস কামরায় উপস্থিত হই। এসকে সিনহা ওই সময় তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। না দিলে আমার মামলাগুলো পুনরায় চালু করা হবে বলেও হুমকি দেন।

ঘুষ গ্রহণের মামলায় বিচারের মুখোমুখি : ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ গ্রহণ মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে চলেছেন নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা। দুজনকে অভিযুক্ত করে এ মামলায় চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হলে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ তা আমলে নেন। একই সঙ্গে মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বদলির আদেশ দেন। বর্তমানে মামলাটি চার্জ গঠন শুনানির জন্য ধার্য আছে।

ঘুষ নেয়ার এ মামলার চার্জশিটে বলা হয়, যমুনা সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্গানেট ওয়ান লিমিটেডকে নিযুক্ত করা হয়। যোগাযোগমন্ত্রী থাকার সময় নাজমুল হুদা ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মাসে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা তার স্ত্রীর মালিকানায় পরিচালিত ‘খবরের অন্তরালে’ পত্রিকার হিসাবে জমা দেয়ার জন্য বলেন। টাকা দেয়া না হলে ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি নিয়োগ বাতিল করে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি দেয়া হয়। নিরুপায় হয়ে ও ব্যাপক ব্যবসায়িক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে মাসে ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ প্রদানের প্রস্তাব করলে নাজমুদ হুদা দম্পতি তাতে রাজি হন। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্গানেট ওয়ান লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকের কাছ থেকে ২০০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চেকের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকা ঘুষ নেন।

এ অভিযোগে ২০০৮ সালের ১৮ জুন রাজধানীর মতিঝিল থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক বেলাল হোসেন মামলা করেন। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ২০০৮ সালের ২২ জুলাই পাঁচজন সাক্ষী আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- সৈয়দ আহমেদ ফারুক, রুস্তম আলী হাওলাদার, এসএম আবদুল মান্নান, আনোয়ারুল হক ও মোবারক হোসেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম