Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

কাঁচামালে আগাম কর বহাল

রডের কর এক হাজার টাকা কমেছে * রাইড শেয়ারিং ও ই-কমার্সে ভ্যাট ৫ শতাংশ

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০১৯, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কাঁচামালে আগাম কর বহাল

ছবি: যুগান্তর

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে আগাম কর প্রত্যাহার করা হলেও শিল্পের কাঁচামালে তা বহাল রাখা হয়েছে। নির্মাণ শিল্পের প্রধান উপকরণ রডের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে স্ক্র্যাপ থেকে বিলেট ও বিলেট থেকে রড উৎপাদনে নির্দিষ্ট কর এক হাজার টাকা কম করা হয়েছে। রাইড শেয়ারিং ও ই-কমার্স খাতের ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন ভ্যাট আইনে এসব সংশোধন আনা হয়েছে। শনিবার ভ্যাট, আয়কর ও শুল্ক আইনে সামান্য সংশোধন করে জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাস হয়। রোববার শুল্ক, ভ্যাট আইনের পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ভ্যাটের প্রজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে আগাম কর স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে কাঁচামাল আমদানিতে সেটি বহাল রাখা হয়েছে। বাজেটে সব ধরনের আমদানি পণ্যের ওপর আগাম কর আরোপ করা হয়। পরবর্তীতে শিল্প উদ্যোক্তাদের আপত্তিতে ২০ জুন সাময়িকভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর আগাম কর প্রত্যাহার করা হয়। সেই আদেশটিই প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়েছে।

মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিসংক্রান্ত কাস্টমসের একটি প্রজ্ঞাপন আছে, যাতে প্রজ্ঞাপনের আওতায় কী কী যন্ত্রপাতি আনতে পারবেন তার এইচএস কোডসহ তালিকা দেয়া রয়েছে। এ প্রজ্ঞাপনের আওতায় স্থানীয় উদ্যোক্তারা ৬৫৯ ধরনের যন্ত্রপাতি এক শতাংশ শুল্ক দিয়ে খালাস নিতে পারবেন, এর বাইরে অন্য কোনো কর দিতে হবে না। এছাড়াও তুলা, পলিস্টার ইয়ার্ন ও ভিসকস ইয়ার্ন আমদানিতে আগাম কর দিতে হবে না।

শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, কাঁচামাল আমদানিতে আগাম কর বহাল রাখা শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বহুলাংশে বাড়বে। আইনে ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও সেটি পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আগে শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ অধিদফতরের মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের রিফান্ড দেয়ার বিধান থাকলেও ব্যবসায়ীরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা পায়নি। তাই বাধ্য হয়ে, স্থানীয় বাজারের পণ্য উৎপাদনকারীরা সেটি পণ্যের দামের সঙ্গে সমন্বয় করবেন। এ কারণে পণ্যের দাম বাড়বে। অন্যদিকে উদ্যোক্তাদের ক্যাপিটাল ব্লক হয়ে পড়বে। একইভাবে রফতানি পণ্যের প্রতিযোগী সক্ষমতা কমবে। এতে দেশের রফতানি খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

জানতে চাইলে রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে বলেন, শিল্পের কাঁচামালের ওপর যারা আগাম কর আরোপ করেছে তারা দেশের শত্রু। এর পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে, শুধু দেশীয় শিল্প ধ্বংস করা ছাড়া! সরকার যেখানে বিনিয়োগ বাড়াতে, শিল্পায়নকে গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে এ ধরনের নীতি গ্রহণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

মূলধনী যন্ত্রপাতি ছাড়াও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ যেমন ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, ক্যান্সার, কুষ্ঠ রোগের ওষুধ ও এন্টিবায়োটিক, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ, কিডনি ডায়ালাইসিস সলিউশন, হার্ট ভাল্ব, অপারেশন ল্যাম্প ও ভ্যাকসিন ও ইনসুলিন পেনসহ বেশকিছু চিকিৎসা সামগ্রী আমদানিতে আগাম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর বাইরে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ভ্যাট প্রথম তফসিলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য; সরকার অনুমোদিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আমদানি যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট উপকরণ; এনবিআরের অনুমোদনের ভিত্তিতে সরকারি প্রকল্পের আওতায় আমদানি পণ্য; ডিফেন্স স্টোর হিসেবে আমদানি পণ্য; অন্ধ ও বধিরদের জন্য আমদানি পণ্য; ত্রাণসামগ্রী; রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আমদানি পণ্য; বন্ড সুবিধায় আনা আমদানি পণ্য এবং সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, জাতিসংঘভুক্ত সংস্থা, দূতাবাস, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও সংস্থার আমদানি পণ্যে আগাম কর দিতে হবে না।

প্রসঙ্গত, বাজেটে অর্থ আইনের মাধ্যমে নতুন ভ্যাট আইনের ৩১ ধারা সংশোধন করে সব ধরনের আমদানি পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে আগাম কর আরোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, করযোগ্য আমদানির ওপর ৫ শতাংশ আগাম কর আদায় করতে হবে। প্রত্যেক নিবন্ধিত আমদানিকারক নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট কর মেয়াদে মূসক দাখিলপত্রে পরিশোধিত আগাম করের সমপরিমাণ অর্থ সমন্বয় করতে পারবেন। যারা নিবন্ধিত নয়, তারা কমিশনারের কাছে আগাম কর ফেরত পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ভ্যাটে যত পরিবর্তন : প্রস্তাবিত বাজেটে রাইড শেয়ারিং ও ই-কমার্স খাতে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। এ হার কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। রডের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে স্ক্র্যাপের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে টনপ্রতি এক হাজার টাকা নির্দিষ্ট কর আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া স্ক্র্যাপ থেকে বিলেট ও বিলেট থেকে রড উৎপাদনে নির্দিষ্ট কর দুই হাজার টাকা থেকে কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। টেক্সটাইল শিল্পের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রতি কেজি সুতার ওপর ৪ টাকা নির্দিষ্ট করা আরোপ করা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম