
প্রিন্ট: ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০১ পিএম
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী
আঘাত হানতে পারে সন্ধ্যায়, বিকাল ৪টার মধ্যে উপকূলের সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হবে * মোংলা ও পায়রায় ৭, চট্টগ্রামে ৬ এবং কক্সবাজারে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত * ৪৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় * বিকাল ৩টা নাগাদ ঝড়ের কেন্দ্র আছড়ে পড়বে ওড়িশা উপকূলে। এরপর কলকাতা ও বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মেঘালয়ের দিকে যাবে * শনিবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত, হবে ১৪ মে * চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩ মে ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় ফণী আজ সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশ অতিক্রম করতে পারে। এটি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা খুলনা-সাতক্ষীরার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
ওই উপকূল অতিক্রমকালে ঘণ্টায় এর বাতাসের গতিবেগ ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব সকাল থেকেই পড়বে ওই এলাকাসহ গোটা উপকূল অঞ্চলে। এ সময়ে উপকূলের ১৯ জেলায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ঝড়ের সঙ্গে উপকূলীয় এবং চরাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়েও ৪-৫ ফুট উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৬ এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে।
উপকূলজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জনগণের জানমাল রক্ষার্থে সরকার এরই মধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এর আগে ‘অতি প্রবল’ রূপ নিয়ে এ ঘূর্ণিঝড়টি আজ বেলা ৩টা নাগাদ ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঝড়টির গতিবিধি ও তীব্রতা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) বলেছে, বর্তমানে ১৭ কিলোমিটার বেগে এগিয়ে আসছে এটি। ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ার সময়ে ঝড়টির কেন্দ্র থেকে ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ থাকবে ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার।
অবশ্য ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর (আইএমডি) বলছে, ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় ঘণ্টায় প্রায় ২০৫ কিলোমিটার গতি থাকবে এ ঘূর্ণিঝড়ের। বিগত ৪৩ বছরের ইতিহাসে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর বা ভারত মহাসাগরে এপ্রিলে উৎপন্ন এত শক্তিশালী ঝড়ের মুখোমুখি হয়নি ভারত।
ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে জানমাল রক্ষার্থে এরই মধ্যে ওড়িশা উপকূল থেকে ৮ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তখন ঝড়টি ওড়িশা থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে ছিল বলে জানা গেছে।
বিএমডি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এদিন বিকালে সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। এমন টার্গেট ধরে আজ সকাল ১০টা থেকে উপকূলীয় ১৯টি জেলার ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা শুরু হবে এবং বিকাল ৪টার মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
সে অনুযায়ী উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সভায় আবহাওয়া অধিদফতরের (বিএমডি) পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পুরো বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় থাকবে, এ সময়টা ক্রিটিক্যাল।
উচ্চগতির বাতাস ও দমকা ঝড়ো হাওয়ার সময় সবাইকে নিরাপদে থাকতে হবে। ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে সারা রাত ধরে বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার থাকতে পারে।
এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, বিপদ সংকেত দেয়া হয়েছে। মহাবিপদ সংকেত দেয়ার জন্য সময় এখনও হয়নি। ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, মূল ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে ওড়িশায়। এরপর এটি কলকাতার পশ্চিমাঞ্চল, বাংলাদেশের রাজশাহী, সিলেট অঞ্চল হয়ে মেঘালয়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে।
এরপর স্থল নিুচাপ আকারে বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে এটি দুর্বল হয়ে ম্লান হবে। ওড়িশা অতিক্রমকালে এটি ক্যাটাগরি-৩ মাত্রার অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় থাকবে। বাংলাদেশ অতিক্রমকালে ক্যাটাগরি-২-এ পরিণত হবে।
কিন্তু এর প্রভাব পুরো দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, পূর্ব এবং মধ্যাঞ্চলে পড়বে। তবে এটাও ঠিক, ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক ব্যাপারে এভাবে আগাম পূর্বাভাস করা কঠিন। কেননা যে কোনো সময় এ ধরনের ঝড় গতিমুখ পরিবর্তন করতে পারে। সে কারণে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর ভয়াবহতা ও ছোবল থেকে জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদই সব নৌযান ও ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়।
সন্ধ্যার মধ্যে ওই নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সমুদ্রবন্দরে পণ্য ওঠানামাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উপকূলীয় ১৯ জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়।
জনগণকে সতর্ক করতে দুপুরের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে লাল পতাকা টানানো হয়। পৌনে ৪ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়। পাশাপাশি সাগর তীরের লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরে যেতে মাইকিং করা হয়।
মজুদ করা হয় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি। গঠন করা হয় মেডিকেল টিম। যুক্তরাজ্যে সফররত খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিস্থিতি তদারকি করছেন। তিনি আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দুর্গত অঞ্চলে মানুষের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকেও দলের নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ওই মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় বিআইডব্লিউটিএ’র সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদেরকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত দেশের সব রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। নৌ মন্ত্রণালয় ও বন্দরগুলোয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। সব সমুদ্রবন্দর ও বিআইডব্লিউটিএকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করছে মন্ত্রণালয়। এদিকে ঢাকার সদরঘাট থেকে বৃহস্পতিবার কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।
জানা গেছে, উপকূলীয় সেনা ক্যাম্পগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়পরবর্তী জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তাসহ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর (আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নৌপুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে কালকের (৪ মে) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। এই পরীক্ষা নেয়া হবে ১৪ মে। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানিয়েছেন, উপকূলের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাম সাইক্লোন শেল্টার খোলা রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ২৫ এপ্রিল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে এই ঝড়ের উদ্ভব হয়। উৎপত্তিকালে এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২১৭০ কিলোমিটার দূরে ছিল। এক সপ্তাহ ধরে এটি আসে উপকূলে। চলার পথে কখনও এর গতিবেগ সমান ছিল না। কখনও সামনে আগানোর গতিবেগ ৪-৫ কিলোমিটার ছিল।
আবার ২০ কিলোমিটারও ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বিএমডির আবহাওয়াবিদরা ৫-৬ মে বাংলাদেশে এবং এর আগে ভারতে আঘাত হানার পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু গত দু’দিনে এটি অতিদ্রুত উপকূলের দিকে আগায়।
তবে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক দিক হচ্ছে- বাংলাদেশে আঘাত হানার আগে এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা রাজ্যের উপকূলে আছড়ে পড়ে। ওড়িশায় আছড়ে পড়ায় এর প্রভাব ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশেও পড়েছে।
প্রভাব পড়েছে তামিলনাড়ুতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ ওই দুই রাজ্য থেকে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে ব্যাপক ঝড়-ঝাপটার খবর পাওয়া গেছে। শুধু তা-ই নয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলেও ওই ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের ঝাপটা হিসেবে ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হতে শুরু করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সবমিলে কিছুটা দুর্বল অবস্থায় ফণী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার দিকে আসছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে শুক্রবার বিকাল ৩টায়। যদি ঝড়ের বিদ্যমান গতি অটুট থাকে, তাহলে পরবর্তী সময়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে সন্ধ্যায় বাংলাদেশের খুলনা এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় পৌঁছতে পারে।
কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব পড়তে শুরু করবে। ওই এলাকায় বাতাস বেড়ে যাবে। ঝড়ো হাওয়া দেখা যাবে সকাল থেকেই। ঝড়টির পরবর্তী অবস্থা কাল এর গতিবিধি দেখে বলা যাবে। তবে এখন যে অতি প্রবল আকার আছে, সেটা না-ও থাকতে পারে যদি এটি স্থলভাগে উঠে যায়।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়কে চার ভাগে ভাগ করা হলে এর ডান পাশে বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকে। এর সঙ্গে বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস থাকে। সবচেয়ে আতঙ্কের হয় যদি আঘাত হানার সময়ে সাগরে জোয়ার থাকে। তখন জলোচ্ছ্বাস বেড়ে যায়।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, ১৯৬৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে ৪৬টি ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি হয়েছে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে। যার ৭টি ছিল মে মাসে। দুটি ছিল এপ্রিলে। এ দুটি ঘূর্ণিঝড় ১৯৬৬ ও ১৯৭৬ সালের এপ্রিলে হয়েছে। কিন্তু ওই দুটির চেয়েও ফণী শক্তিশালী।
বিএমডির এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ আছে। মোংলা ও পায়রা সমুন্দ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার উপকূলে ৪ নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিুাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা : সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা। এ সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ভালো প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, আমরা মোকাবেলা করতে পারব, প্রাণিসম্পদও রক্ষা করতে পারব।
খুলনার ১১ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের নিয়ে সজাগ থাকতে হবে, তাদের জন্য আলাদা কক্ষ (আশ্রয় কেন্দ্রে) নির্ধারণ করা আছে।
খাবারের অভাবে কেউ যেন আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ির দিকে না যায় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া আছে। মোমবাতি ও কুপির পরিবর্তে হ্যাজাক লাইটের ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। এনামুর বলেন, ‘আমরা সবাই সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করি, দুর্যোগের ক্ষতি থেকে রক্ষায় সবাই যেন যার যার ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা করি।’
৪০ লাখ মানুষ নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা : ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, ১৯ উপকূলীয় জেলায় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গে তারা মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসবে।
উপকূলীয় ১৯ জেলায় তিন হাজার ৮৬৮টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৪০ লাখ মানুষ নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা যে কোনো দুর্যোগে সাধারণত ৪০-৪১ লাখ মানুষ সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করি।
কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে হয়তো ১৮-২০ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে পারব। তবে এবার সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে মহাবিপদ সংকেত দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাবে।
আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সোলার সিস্টেম রাখা হয়েছে। তাদের সুপেয় পানির জন্য ত্রিশটি ট্রাক মাউন্টেন রাখা হয়েছে। এসব ট্রাক মাউন্টেন লবণাক্ত পানিকে সুপেয় করে প্রস্তুত করবে। এ ছাড়াও এসব এলাকায় স্কুল, কলেজসহ সব ধরনের স্থাপনা কাজে লাগানো হবে। তাছাড়া এলাকায় যাদের দোতলা বাড়ি রয়েছে তাদেরও আমরা কনভিন্স করেছি। তারা যেন দুর্যোগপূর্ণ মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
এদিকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সচল রাখতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র : জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র থেকে ঘূর্ণিঝড় ফণি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। ৯৫৪৫১১৫, ৯৫৪৯১১৬, ০১৭৫৫৫৫০০৬৭ নম্বরে ফোন করে, ৯৫৪৯১৪৮, ৯৫৪০৫৬৭ নম্বরে ফ্যাক্সে ও ndrcc-modmr.gov.bd ই-মেইল করা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাত মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। উপকূলীয় এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে প্রয়োজন হলে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া যায়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পণ্য ওঠানামাসহ প্রায় সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দরের জেটিতে অবস্থানরত সব জাহাজকে বহির্নোঙরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্দরের ক্রেনসহ সব সরঞ্জাম ও স্থাপনা রক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
রাজশাহীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ফণীর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় রাজশাহীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে তা প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতি সভায় এ নির্দেশ দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদেরের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পাথরঘাটায় ২০-২৫ ট্রলার এখনও ফেরেনি : পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, ২০-২৫টি ট্রলার এখনও নিরাপদে পৌঁছতে পারেনি। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে এখনও অনেক ট্রলার অবস্থান করছে। তাদের মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় পাওয়া যায়নি।