ঈদের ছবির পোস্টমর্টেম
আবারও শাকিব খানের রাজত্ব
আনন্দনগর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০১৮, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঈদের আনন্দ উদযাপনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে নতুন ছবি দেখা। তাই ঈদ ঘিরে নির্মাতা প্রযোজকদের মধ্যেও থাকে নতুন ছবি মুক্তি দেয়ার প্রতিযোগিতা।
বরাবরের মতো এবারের ঈদেও পাঁচটি ছবি মুক্তির আওয়াজ দিয়েছিল। এর কোনোটি আবার সেন্সর সনদও পায়নি। তথাপিও আওয়াজ দিয়ে বাজারে নিজেদের আলোচনায় রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষাবধি সেই আওয়াজ ধোপে টেকেনি। ঈদ উপলক্ষে প্রেক্ষাগৃহে চারটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। বাজার মন্দা হলেও অন্যদের চেয়ে এবারও শাকিব খানের ছবি এগিয়ে। বিস্তারিত লিখেছেন এফ আই দীপু
সাধারণত ঈদে মাসখানেক আগে থেকেই প্রচারের ঝলকানি দেখা যায়। কিন্তু এবারের কোরবানির ঈদে এমন চিত্র খুব একটা দেখা যায়নি। মুক্তির আওয়াজ দিলেও বাহ্যিক প্রচারণায় ছিল না ঈদের কোনো আমেজ। এবারের কোরবানি ঈদে মুক্তি পেয়েছে চার ছবি।
এর মধ্যে রয়েছে শাকিব খান-বুবলী জুটি অভিনীত ‘ক্যাপ্টেন খান’, মাহিয়া মাহি ও কলকাতার বনি সেনগুপ্ত অভিনীত ‘মনে রেখো’, সাইমন সাদিক-মাহি অভিনীত ‘জান্নাত’। ছবিগুলোর ও রোশান-ববি অভিনীত ‘বেপরোয়া’। এর মধ্যে বেপরোয়া একটিমাত্র প্রেক্ষাগৃহে (জনতা ডিজিটাল সিনেমা হল, জলঢাকা, নীলফামারী) মুক্তি পেয়েছে।
এ ছবিটি মূলত পরিচালক সমিতিকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অন্য ছবিগুলোর মধ্যে কেবল ‘জান্নাত’ ঈদের মাসখানেক আগে সেন্সর থেকে ছাড়পত্র পেয়েছিল। বাকি দুটি ছবি ঈদের মাত্র দুদিন আগে পায় সেন্সর ছাড়পত্র। ঈদের ঠিক আগমুহূর্তে ছাড়পত্র পাওয়ায় প্রচার-প্রচারণায় ছিল না কোনো ঝলক। তাছাড়া ছবি মুক্তির আগে গান প্রকাশ করেও ছবিকে আলোচনায় রাখা হয়। কিন্তু ‘ক্যাপ্টেন খান’ কিংবা ‘মনে রেখো’র বেলায় গান প্রকাশেও দেখা গেছে অবহেলা।
যদিও ক্যাপ্টেন খান ছবির নায়ক ‘শাকিব খান’ এ অহমিকায় প্রযোজক প্রচারণায় কৃপণতা দেখিয়েছেন। তাছাড়া ঠিক কোন কোন ছবি ঈদে মুক্তি পাবে এ নিয়েও দর্শকরা তো বটেই, হল মালিকরাও ছিলেন শঙ্কায়। কাকে এমজি (মিনিমাম গ্যারান্টি) দিয়ে ধরা খান! তবে ‘মাতাল’ নামে একটি ছবি ফাঁকা আওয়াজ দিয়ে অন্য ছবির হল বুকিংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি যে শুধুই মিথ্যার ফুলঝুরি তা বুঝতে কারও বাকি ছিল না।
ঈদের ছবির বাণিজ্যিক হিসাবে বরাবরের মতো এবারও শাকিব খান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। তার অভিনীত ছবি ‘ক্যাপ্টেন খান’ দেশের পৌনে দুইশ’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়ে এক ধরনের রেকর্ডই গড়েছে।
কিন্তু বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ছবির প্রযোজকের গোঁয়ার্তুমির কারণে রাজধানীতে একমাত্র ‘যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাস’ ছাড়া আর কোনো বড় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি। রাজধানীর মেইন পয়েন্টে থাকা তিনটি বড় হল মধুমিতা, বলাকা, সনি ও স্টার সিনেপ্লেক্সে নেই ক্যাপ্টেন খান। ফলে ছবিটি নিয়ে দর্শকদের অধিক আগ্রহ থাকলেও সেটি দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন দর্শক।
রাজধানীর ব্লকবাস্টার সিনেমাসের পাশাপাশি এ চারটি সিনেমা থেকে যে পরিমাণ অর্থ আয় হয়, তা দেশের অন্য কোনো সিনেমা হল থেকে পাওয়া যায় না। প্রযোজক যদি আরও একটু সতর্ক হতেন তাহলে হয়তো ক্যাপ্টেন খান রোজার ঈদের মতো এবারও সুপারহিট ব্যবসা দিত। এত কিছুর পরও ঈদের ছবির বাণিজ্যিক তালিকায় রাজত্ব করছে ‘ক্যাপ্টেন খান’। শুধু এমজি দিয়েই ছবিটি মুক্তির আগে কোটি টাকা ঘরে তুলে নিয়েছে।
তাছাড়া ছবিতে শাকিব খান ও বুবলীর রসায়নও ছিল বেশ। যদিও এ ছবির বিরুদ্ধে অনেকে নকলের অভিযোগ আনলেও মুক্তির আগে বিষয়টি ছবির নায়ক শাকিব খানই পরিষ্কার করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ক্যাপ্টেন খান নকল নয়, অনুকরণের ছবি। পরিচালক বাংলাদেশি বাজার অনুযায়ী বাজেটের মধ্যে দারুণ একটি ছবি তৈরি করার চেষ্টা করেছেন।’ এ ছবির পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমনও একই কথা বলেছেন।
ঈদের ছবির তালিকায় একেবারে হুট করেই আলোচনায় আসে মাহিয়া মাহি ও কলকাতার বনি সেনগুপ্ত অভিনীত ছবি ‘মনে রেখো’। এ ছবিটিও পরিচালনা করেছেন ওয়াজেদ আলী সুমন।
মুক্তির দুই দিন আগ পর্যন্তও এ ছবি নিয়ে ছিল সংশয়। প্রযোজনা সংস্থা হার্টবিট প্রোডাকশনও প্রচারণায় কার্পণ্য দেখিয়েছে। ছাড়পত্র পেয়ে শ্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শেষ পর্যন্ত দেশের ৭০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছবিটি। মুক্তির প্রথম দিন থেকেই ছবিটি দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে বলে জানান প্রযোজক তাপসী ফারুক। পাশাপাশি মাহির আরও একটি ছবি মুক্তি পেলেও ‘মনে রেখো’ নিয়েই ছিল তার বেশি উচ্ছ্বাস। এর কারণও তিনি জানিয়েছেন। রাজধানীর বড় হলগুলোয় এ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে।
তবে ঈদের ছবির যে রমরমা হিসাব-নিকাশ হওয়ার কথা ছিল সেটি এ ছবির বেলায় দেখা যায়নি। প্রযোজক স্পষ্ট করে না বললেও খুব বেশি এমজিও পাওয়া যায়নি বলেই জানা গেছে। কলকাতার অখ্যাত কোনো নায়কের জন্য দেশের হল মালিকরা অগ্রিম টাকা জমা দেবেন সেটি ভাবারও কোনো কারণ নেই। এ ছবিটি যে ক’জন দর্শক দেখেছেন সেটিও শুধু মাহির কারণেই দেখেছেন। তাই ব্যবসায়িক তালিকায় এ ছবিটি ক্যাপ্টেন খানের কাছাকাছি না হলেও সংখ্যাতত্ত্বে পরের অবস্থানেই রয়েছে।
ঈদে মুক্তি পাওয়া আরেক ছবি মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘জান্নাত’। এ ছবিটির ভাগ্যে সফলতা লেখা ছিল না বোধহয়। তাই মুক্তির পরই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। কোনো কোনো হল মালিক রাগান্বিত হয়ে হল থেকে নামিয়ে দেয়ার কথাও বলছিলেন। কিন্তু আপাতত বিকল্প না থাকাতে ঈদের পুরো সপ্তাই ছবিটি চালাতে বাধ্য হয়েছে। ছবিটি মাত্র ২৩টি হলে মুক্তি পেয়েছে।
এ ছবির মাধ্যমে ক্যারিয়ারের প্রথমবার ঈদের মতো বড় উৎসবে সাইমন সাদিকের ছবি মুক্তি পেল। কিন্তু তারপরও এ ছবির প্রচার-প্রচারণায় এ নায়ককে কোথাও দেখা যায়নি।
তিনি যথারীতি ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি গিয়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে মেতে রয়েছেন। স্বভাবতই ছবিটি ঈদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা তো দূরের কথা, মাঠে ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারেনি। এর মধ্যে ছবির নায়িকা মাহিয়া মাহি দাবি করেছেন ‘জান্নাত’ কোনো ঈদের ছবি নয়। এ সময় মুক্তি দেয়াটাও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। প্রযোজক কিংবা পরিচালকের গোঁয়ার্তুমির কারণে ছবিটি মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ছবিটি নিয়ে পরিচালক, নায়ক-নায়িকা এখনও আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।