
প্রিন্ট: ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৯ এএম

তারাঝিলমিল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জুন ২০১৮, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
সিনেমা নির্মিত হয় বিভিন্ন গল্পকে কেন্দ্র করে। স্থান, সময়, চরিত্রকে কেন্দ্র করে গল্পনির্ভর সিনেমাগুলো পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বিভিন্ন সিনেমার গল্প বিভিন্ন রকম। ‘বাবা’ যেমন একটি সম্পর্ক, তেমনই একটি গল্পও বটে।
এই বাবাকে নিয়ে বিভিন্ন গল্প রয়েছে যা সিনেমায় রূপায়িত হয়েছে। আগামী ১৭ জুন বাবা দিবস। এ দিবস উপলক্ষে বাবাকে নিয়ে নির্মিত বিখ্যাত কয়েকটি ছবি নিয়ে তৈরি হয়েছে এ প্রতিবেদন
ফাদার অব দ্য ব্রাইড
হলিউড ছবি ‘ফাদার অব দ্য ব্রাইড’ ১৯৫০ সালে মুক্তি পায়। এতে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেন স্পেন্সার ট্রেসি ও মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন এলিজাবেথ টেলর। ছবিটিতে দেখানো হয়েছে, একজন বাবার তার সন্তান নিয়ে স্বপ্ন, আশা ও বাস্তবতা। মেয়ে এলিজাবেথ যখন তার বিয়ের ঘোষণা দেন; সেই থেকে তার মধ্যবিত্ত বাবার বিয়ের প্রস্তুতি, অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা ও সন্তানের বেড়ে ওঠার স্মৃতিগুলো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
জুনিয়র
‘জুনিয়র’ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ইভান রেইটম্যান। ছবির কাহিনীতে দেখানো হয়েছে, একজন বিজ্ঞানী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে বিশ্বের প্রথম পুরুষ হিসেবে গর্ভধারণ করেন। ১৯৯৪ সালের ২৩ নভেম্বর মুক্তি পায় আলোচিত হলিউড সিনেমা ‘জুনিয়র’। আবেগ ও কমেডির মিশ্রণ সংবলিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, এমা থম্পসন, পামেলা রিডসহ অনেকে। ছবিতে আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার একই সঙ্গে মা ও বাবা হওয়ার অনুভূতি রপ্ত করেন। গোল্ডেন গ্লোবে সে বছর সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পান আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার।
লাইফ ইজ বিউটিফুল
ঘটনাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। ইতালিতে ফ্যাসিস্ট বাহিনীর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি বাবা ও ছেলে। ক্যাম্পে নিপীড়ন নির্যাতন দেখে ছেলে যেন ভয় না পায় সেজন্য বাবা তাকে বলেন, পুরো ক্যাম্প আসলে এক মজার খেলা। এই খেলায় যে জিততে পারবে সে পাবে আস্ত একটি ট্যাংক। গল্পের গভীরতাকে পরিমাপ করলে কৌতুক আর আবেগের দারুণ মিশ্রণের নাম ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’। ১১৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবির প্রথমার্ধে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবে যে কোনো দর্শক। আবার সিনেমার দ্বিতীয়ার্ধে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়বেন। এভাবে রূঢ় বাস্তবতা থেকে শিশুপুত্রকে রক্ষা করেন বাবা। একটা সময় বাবা ফ্যাসিস্টদের হাতে আটক হয়। ছেলেকে অভয় দিয়ে বাবা চলে যান মৃত্যুর মুখে। এরপর মিত্র বাহিনী আসে। শিশু ছেলেটি মনে করে বাবাই মিত্রদের পাঠিয়েছেন এবং সে মনে করে খেলাটিতে সে জিতেছে বলেই ট্যাংক পেয়েছে। শিশু সন্তানের জন্য বাবা যে হাসিমুখে প্রাণ পর্যন্ত দিতে পারেন তারই অবিস্মরণীয় চিত্র রূপ ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’। রবার্তো বেনিগনি এ ছবিতে তিনি নিজের শৈশবের ঘটনাই বর্ণনা করেছেন। ছবিটিতে তার বাবার স্মৃতিচারণ করেছেন তিনি। তিনি নিজেই অভিনয় করেছেন তার বাবার চরিত্রে।
ফাদারস ডে
বাবার অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্মিত আরও একটি জনপ্রিয় ছবি ‘ফাদারস ডে’। এর গল্পে দেখা যায়, একটি ছেলেকে দু’জন ব্যক্তি তাদের নিজের সন্তান মনে করেন। নিজেদের সন্তান প্রমাণের জন্য হাস্যরসের সঙ্গে আবেগের মিশ্রণে নানা কায়দা অবলম্বন করেন দুই ব্যক্তি। ইভান রেইটম্যানের পরিচালনায় এই কমেডি ঘরানার সিনেমা ‘ফাদারস ডে’ এটি ১৯৯৯ সালের ৯ মে মুক্তি পায়। এতে অভিনয় করেন রবিন উইলিয়ামস, বিলি ক্রিস্টাল, নাতাশা কিনস্কির।
বিগ ফিশ
বাবা বিষয়টি গল্প নিয়ে হলিউড ছবি ‘বিগ ফিশ’ নির্মাণ করা হয় ২০০৩ সালে। ছবিটিতে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেন ইয়ান ম্যাকগ্রেগর ও ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেন বিলি ক্রুডুপ। এ ছবিতে ছেলে তার বাবার তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সমস্যা হল, তার বাবা অত্যন্ত চতুর। ফলে বাবা সম্পর্কে কোনো তথ্য বের করা অত্যন্ত কঠিন ছিল ছেলের পক্ষে। মূলত এখানে মা-বাবার রহস্য বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। ছবিটি সেই বছর অস্কারের জন্য মনোনয়ন পায়।
ফাইন্ডিং নেমো
মা-হারা এক ছোট্ট শিশু ক্লাউনফিশের কাহিনী নিয়ে গড়ে ওঠা এ সিনেমাতে দেখা যায়, জন্মের আগেই মাকে হারায় নেমো। পরবর্তীকালে নেমোর বাবা তাকে সাগরের নানা বিপদ সংকুল পরিস্থিতি থেকে আগলে রাখতে চাইলেও অ্যাকুরিয়ামের জন্য মনোহর মাছ ধরতে আসা শিকারিদের হাতে ধরা পড়ে নেমো। এরপর নেমোর বাবা তাকে উদ্ধার করার সংগ্রামে নামে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত বাবা-ছেলের পুনর্মিলন হয়। ২০০৩ সালে মুক্তির পরপরই যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সাড়া জাগায় এ ছবিটি। সেই সঙ্গে আলোড়ন তোলে সারা বিশ্বে। ৯২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার পাশাপাশি সেরা অ্যানিমেশন ছবি হিসেবে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডও পায়। আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট ‘ফাইন্ডিং নেমো’কে এ যাবৎকালের সেরা অ্যানিমেশন ছবির অন্যতম হিসেবে ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে রূপান্তরিত থ্রি ডি ভার্সন মুক্তির প্রথম সপ্তাহে উত্তর আমেরিকাতে ১৬.৭ মিলিয়ন ডলার আয় করে।
পা (বলিউড)
‘পা’ ছবিতে ৬৮ বছর বয়সী অমিতাভ বচ্চন এক তেরো বছরের কিশোরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, যে কিশোর এক দুরারোগ্য রোগের শিকার। বারো বছরে মানুষটির বয়স হয়ে যায় আশিরও বেশি। রোগের নাম প্লেগোরিয়া। অসাধারণ এই চরিত্রের জন্য এমন মেকআপ নিতে হয়েছে অমিতাভকে যার জন্য প্রত্যেকবার শুটিংয়ের আগে সময় লেগেছে অন্তত চার ঘণ্টা। বলিউডের অল টাইম সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন এ ছবিতে নিজের পুত্রকেই বাবা বলে ডেকেছেন। অভিষেক বচ্চন ছিলেন তার পিতার ভূমিকায়। ‘পা’ এমনই একটা ছবি, যে ছবি আসলে পিতাপুত্রের সম্পর্কের দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এই ছবিকে আপন করে নেন বলিউডের সব শ্রেণীর দর্শক।
ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি
বাবা নিয়ে নির্মিত আরও একটি অসাধারণ ছবি ‘ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি’। পরিচালনা করেছেন কেনেথ লোনারম্যান। ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। পরে একই বছরের ১৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সীমিত এবং ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী মুক্তি পায়। ৮.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সারা বিশ্বে ৬৭.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। একাডেমি পুরস্কারে ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন পাওয়া সিনেমাটিতে অভিনয় করেন কেসি অ্যাফ্লেক, মিচেল উইলিয়ামস, কাইল চ্যান্ডলার ও লুকাস হেজেস।
বাবা কেন চাকর
ঢাকাই চলচ্চিত্রে বাবাকেন্দ্রিক ছবির সংখ্যা কম নয়। তবে সবচেয়ে আলোচিত ও দর্শকনন্দিত ছবি ‘বাবা কেন চাকর’। এখানে আদর্শবাদী এবং বৃদ্ধ বয়সে সন্তান দ্বারা নিপীড়িত বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন নায়করাজ রাজ্জাক। ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিটি ব্যবসাসফল হয়। ছবিটির পরিচালকও ছিলেন রাজ্জাক।
বাবা নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ছবি
কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দ্য ফাদার’ হচ্ছে বাংলাদেশীয় চলচ্চিত্রে বাবাকে নিয়ে নির্মিত প্রথম ছবি। ১৯৭৯ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। এটি তার পরিচালিত প্রথম ছবি। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জন নেপিয়ার এডামস। জন দীর্ঘদিন বাংলাদেশে ইউএসএআইডির আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বুলবুল আহমেদ, সুচরিতা, শওকত আকবর, আয়েশা আখতার। ছবিটির কাহিনীও ব্যতিক্রমী। বিদেশি নাগরিক শ্বেতাঙ্গ জন বাংলাদেশের একটি শিশুকে লালন-পালন করেন পিতৃøেহে। শিশুর নাম দেন তিনি ‘খুকু’। খুকু বড় হয়ে উঠলে বাবা-কন্যার সম্পর্কের টানাপোড়েন, খুকুর শ্বশুর বাড়িতে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। এ ছবিতে জনের একটি বিখ্যাত সংলাপ ‘এত বছর বাংলাদেশে থাকিয়াও আমি বাঙালি হইতে পারি নাই, খুকুর বাবা হইতে পারি নাই’। সুপার হিট এ ছবিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ‘আয় খুকু আয়’ গানটি ব্যবহার করা হয়।
তারা ঝিলমিল প্রতিবেদক