জমে উঠেছে ব্লকবাস্টার সিনেমাস
এসএম শাফায়েত
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সিনেমা হল যুগের অবসান লগ্নে অপার সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ব্লকবাস্টার সিনেমাস’। ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এলিয়েন ইনভেশন এবং নিওক্লিয়ার ওয়ার-পরবর্তী সময়ের গল্পে নির্মিত হলিউড সিনেমা ‘অবলিভিয়ন’ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ ও অত্যাধুনিক শপিংমল রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে যাত্রা শুরু হয় বিলাসবহুল এ সিনে থিয়েটারের। যেখানে সিনেমা হল বলতেই চোখে ভাসে অতিকায় এক স্থাপনা; সেখানে অত্যাধুনিক বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের রীতিমতো তাক লাগিয়ে রেখেছে ব্লকবাস্টার সিনেমাস। সূচনালগ্ন থেকেই বক্স অফিস কাঁপানো সিনেমা নিয়ে পর্দা সরব রাখে ব্লকবাস্টার কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া প্রতি মাসে নতুন সিনেমা নিয়ে শিডিউল আপডেট করা হয়। যে কারণে দর্শকেরও আকর্ষণের কমতি নেই। করোনা প্রাদুর্ভাবে সরকারি নির্দেশনা মেনে দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ ছিল ব্লকবাস্টার। এরপর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিতসংখ্যক দর্শক নিয়ে আবারও চালু হয় এটি। করোনাপরবর্তী দর্শকদের বিনোদন দিতে নিয়মিত দেশি-বিদেশি ছবি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে সিনেমা হলের কার্যক্রম সচল রাখে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সত্তরের বেশি কর্মী নিয়ে ব্লকবাস্টার সিনেমাসের কার্যক্রম চলছে দুর্দান্ত গতিতে। পাশাপাশি প্রতিদিন বাড়ছে দর্শকদের আনাগোনা। ভিড় জমাচ্ছেন পছন্দের সিনেমা দেখতে। এর ফলে করোনাপরবর্তী জমে উঠেছে ব্লকবাস্টার সিনেমাস।
মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজার থেকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টারে সিনেমা দেখতে এসেছেন মাসুম আহমেদ-সুমাইয়া আক্তার দম্পতি। টিকিট কেটে অপেক্ষারত অবস্থায় কথা হয় তাদের সঙ্গে। ‘থ্রিল’ হলে ‘রেহানা মারিয়াম নূর’ সিনেমাটি দেখবেন তারা। ব্লকবাস্টার সিনেমাস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘এর আগেও কয়েকবার এখানে সিনেমা দেখেছি। হলের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা, স্ক্রিন, সাউন্ড সিস্টেম, ফুড সার্ভিস এক কথায় অসাধারণ। বাংলাদেশে এ রকম সুযোগ-সুবিধা আর কোথাও আছে বলে আমাদের মনে হয় না।’
সিনে কমপ্লেক্সটির ‘উৎসব’ হলের সামনে কথা হয় সিদরাতুল মুনতাহা নামের এক দর্শকের সঙ্গে। হলিউড সিনেমা ‘এক্সটার্নাল’ দেখে সদ্য বাইরে বের হয়েছেন তিনি। কেমন দেখলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি হলিউডের অ্যাডভেঞ্চার ও অ্যাকশন থ্রিলারধর্মী সিনেমা। এর আগে এ ধরনের সিনেমা মোবাইল ও ল্যাপটপ স্ক্রিনে দেখেছি। এবার প্রথম সিলভার স্ক্রিনে দেখলাম। যতটা সময় হলের মধ্যে ছিলাম আমার মনে হয়নি বাংলাদেশের কোনো সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখছি! দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে।’
টিকিট কাউন্টারে অপেক্ষারত কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছুটির দিন ছাড়া অন্যান্য দিন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই টিকিট কাটতে পারেন তারা। ছুটির দিনে দর্শকদের বেশি চাপ থাকে। তবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা ও মাল্টি কাউন্টার থাকায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও তাদের টিকিট কাটতে অসুবিধা হয় না।
ব্লকবাস্টার সিনেমাসের কাস্টমার কেয়ারের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ রাজন ও সাদিকুল ইসলাম শান্ত’র সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে আগত দর্শক সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ নিয়মিত দর্শক ব্লকবাস্টার সিনেমাসের নিয়মকানুনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় খুব একটা বেগ পেতে হয় না। এর বাইরে তারা নতুন দর্শকের যে কোনো জিজ্ঞাসা ও চাহিদা পূরণ করেন বলে জানা যায়।
ব্লকবাস্টার সিনেমাস প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির হেড অব অপারেশন (ডিজিএম-অ্যাকাউন্ট, যমুনা গ্রুপ) জাহিদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ এখন অনেক কমে গেছে। সরকারি নির্দেশনা মেনে আমরা সিনেমা হল পরিচালনা করছি। ব্লকবাস্টার সিনেমাস একটি আন্তর্জাতিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন সিনে থিয়েটার। করোনাপরবর্তী দর্শকরাও হলমুখী হচ্ছেন। চেষ্টা করছি দর্শকদের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিয়ে বিনোদন দেওয়ার। ঘরে বসে মোবাইল ফোন স্ক্রিনে সিনেমা দেখার চেয়ে বড় পর্দায় সিনেমা দেখার আনন্দ একেবারেই আলাদা। আমরা দর্শকদের অনুরোধ করব, ‘হলে বসে সিনেমা দেখুন, ব্লকবাস্টারের সঙ্গে থাকুন।’
হল ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে ব্লকবাস্টারের হেড অব টেকনিক্যাল (ডিজিএম) সৈয়দ গোলাম মহিউদ্দিন সেতু বলেন, ‘সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আমরা সিনেমা হল পরিচালনা করছি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হলিউডে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো প্রদর্শন করছি। দর্শকরাও আমাদের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
একনজরে ব্লকবাস্টার : সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাতটি সিনেমা হলের সমন্বয়ে ‘ব্লকবাস্টার সিনেমাস’। এর মধ্যে আইরিশ, মনটেজ, থ্রিল, এক্সপোজার, উৎসব ও ট্রানজিশন হলে রয়েছে ২৮০টি করে মোট ১ হাজার ৬৮০টি আসন। এ ছাড়া ‘ক্লাব রয়েল’-এ রয়েছে ২০০টি বিলাসবহুল আসন। ভিআইপি দর্শকের জন্য রিক্লাইনিং সোফাসহ মোবাইল চার্জিং, ব্লাঙ্কেট ও ওয়েটারাইজিং সার্ভিস। হলগুলোতে রয়েছে ডলভি সারাউন্ড ৭.১ হোল অ্যাকুয়েস্টিক সাউন্ড সিস্টেম, ৫০ ফিট সিলভার স্ক্রিন, চিত্তাকর্ষক ও বিলাসবহুল কফি লাউঞ্জ, অতিথিদের আরামদায়ক বসার জায়গা, ভিআইপি লাউঞ্জ, অনলাইন টিকিটিং, সাতটি হলের সাত ধরনের আকর্ষণীয় ইন্টেরিয়র ডিজাইন, মনোমুগ্ধকর লবি ডিজাইন, সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডিশন, নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা, ক্রিয়েটিভ টেকনিক্যাল টিমসহ ‘ব্লকবাস্টার সিনেমাস’-এর অভিনব সব আয়োজন সাজানো হয়েছে দেশের মানুষের বিনোদন ও প্রত্যাশা মেটানোর প্রত্যয়ে। ব্লকবাস্টার সিনেমাসে নিয়মিত তিনটি শিডিউলে সিনেমা প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩.২৯ মিনিটি পর্যন্ত ম্যাটনি শো এবং বেলা ৩.৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ইভিনিং ও নাইট শো। সাধারণ ছয়টি হলে রবি থেকে বৃহস্পতিবার ম্যাটনি শোর টিকিট মূল্য ৩০০-৩৫০ টাকা (টু-ডি) ও ৩৫০-৪০০ টাকা (থ্রি-ডি)। ইভিনিং ও নাইট শোর টিকিট মূল্য ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত। তবে শুক্র-শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিন সব শোর টিকিট মূল্য ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত। শুধু ক্লাব রয়েল হলের নিয়মিত টিকিট মূল্য ৬০০, ১ হাজার ও ১ হাজার ২০০ টাকা। চাইলে যে কেউ এ ক্লাবের সদস্য হতে পারবেন। বার্ষিক ২৫ হাজার টাকা ফি দিয়ে পেতে পারেন বিশেষ সুবিধায় টিকিট বুকিং, রয়্যাল লাউঞ্জ ব্যবহার ও ওয়েলকাম ড্রিংকস-ফুড, ফ্রি কার পার্কিং, হলে বসে খাবার অর্ডার ও সরবরাহ সুবিধাসহ ১৮টি আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা।