বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। সারা বছর অনেকেই এ মেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস হওয়ায় এমনই এটি আবেগের জায়গা। তার ওপর আবার এ উপলক্ষে মাতৃভাষার বইয়ের মেলা। তাই আবেগ-চেতনা অন্য মাত্রায় গিয়ে পৌঁছে। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একাডেমির চত্বরসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসেছে এ মেলা। দেশের প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রকাশনী সংস্থা ব্যস্ত রয়েছে নতুন বই প্রকাশের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে। প্রতিবারের মতো এবারের মেলায়ও শোবিজ তারকাদের লেখা বই প্রকাশ হয়েছে। প্রিয় তারকাদের প্রকাশিত বই পাঠকের মাঝে তৈরি করেছে আগ্রহ। এবারে বইমেলায় প্রকাশ করা তারকাদের নিয়েই এ আয়োজন।
মেলায় আবুল হায়াতের চার বই
এবারের অমর একুশে বইমেলায় চারটি বই নিয়ে আসছেন অভিনেতা আবুল হায়াত। অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখেছেন তিনি। সেগুলো নিয়ে অনন্যা প্রকাশনী থেকে বেরুচ্ছে ‘এসো নীপবনে’, ‘ঢাকামি’ ও ‘জীবন খাতার ফুটনোট’। এছাড়া শব্দশিল্প প্রকাশনী থেকে বেরুচ্ছে গল্পের বই ‘মিতুর গল্প’। চারটি বইয়েরই প্রচ্ছদ করেছেন তার মেয়ে বিপাশা হায়াত। এ বিষয়ে আবুল হায়াত বলেন, “তিনটি বই এখন পর্যন্ত কনফার্ম- ‘ঢাকামি’, ‘জীবন খাতার ফুটনোট’ ও ‘মিতুর গল্প’। ১ ফেব্রুয়ারি বেরিয়েছে ‘ঢাকামি’ আর ‘জীবন খাতার ফুটনোট’। তবে ‘এসো নীপবনে’ বইটির কাজ এখনও বাকি রয়েছে। এ পর্যন্ত ২৫টির বেশি বই প্রকাশ হয়েছে। বেশিরভাগ বইয়ের প্রচ্ছদ বিপাশার করা। ও চারুকলায় ভর্তি হওয়ার পর আর কাউকে দিয়ে আমার বইয়ের প্রচ্ছদ করাতে হয়নি। আমার জানা মতে, বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হওয়া কলাম নিয়ে তিনটি বই বের করছে অনন্যা। আর ‘মিতুর গল্প’ তিনটি গল্পের সংকলন, যা বের করছে শব্দশিল্প।”
কনকচাঁপার ‘কাটা ঘুড়ি’
তিন বছর পর আবারও কনকচাঁপা তার লেখা নতুন একটি স্মৃতিচারণমূলক বই নিয়ে পাঠকের মাঝে হাজির হচ্ছেন। এবারের বইটির নাম ‘কাটা ঘুড়ি’। ‘প্রাণের বাংলা’ নামক একটি অনলাইন পোর্টালে আবিদা নাসরিন কলির বিশেষ অনুরোধে গত দুই বছর ধরে নিয়মিত স্মৃতিচারণমূলক লেখা লিখে আসছেন তিনি। কলিরই অনুপ্রেরণায় তিনি সেই লেখাগুলো একত্রিত করে বই আকারে প্রকাশ করছেন। এরই মধ্যে বই প্রকাশের সব কাজ প্রায় শেষ বলে জানালেন কনকচাঁপা। এ বইটি প্রকাশ করছে যথারীতি অনন্যা প্রকাশনী। এ প্রসঙ্গে কনকচাঁপা বলেন, “প্রতিটি মানুষই একটি দর্শন নিয়ে তার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায় সামনের পথে। আমার জীবনের দর্শন আমার বাবা-মা। আমার জীবনের দর্শনের স্থপতি তারাই। তার সঙ্গে জীবনের নানা মুহূর্তের স্মৃতিচারণমূলক গল্পই উঠে আসবে ‘কাটা ঘুড়ি’ বইটিতে। আমি অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে চাই আবিদা নাসরিন কলিকে। কারণ, তার উৎসাহে নিয়মিত এ ধরনের লেখা না লিখে থাকলে এ বই প্রকাশের কথা চিন্তাও করতে পারতাম না আমি। তা ছাড়া আরেকটি কথা না বললেই নয়, যে অনলাইন পোর্টালে আমি নিয়মিত লিখতাম, সেখানে দেশের অনেক বরেণ্য লেখকও নিয়মিত লিখতেন। নিজের লেখা পড়তে গিয়ে তাদের লেখা নিয়মিত পড়া আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। আমার ভীষণ ভালো লাগত সেসব লেখকের লেখা পড়তে। পাঠক তাদের লেখা পড়তে গিয়ে আমার লেখাও পড়বেন, সেই ভাবনা থেকে নিয়মিত লিখতাম আমি।”
ভাবনার গুলনেহার
এবারের বইমেলায় নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা হাজির হচ্ছেন উপন্যাস নিয়ে। মেলায় প্রকাশ হবে তার লেখা উপন্যাস ‘গুলনেহার’। ভাবনার লেখা উপন্যাসটির মূল চরিত্র ৮৭ বছরের বৃদ্ধা গুলনেহার। তাকে ঘিরেই পুরো উপন্যাসটি লেখা হয়েছে। তার স্বপ্ন, প্রেম আর কষ্টের চিত্র পাওয়া যাবে এ উপন্যাসে। ভাবনা এ উপন্যাস নিয়ে বলেন, “গুলনেহার আমার নানির নাম। তবে নানিকে নিয়েই এ উপন্যাস লিখেছি এমনটি নয়। ভাবনায় যখন যা এসেছে তাই লিখেছি। নিজের জীবনের প্রথম বই। অনেক আবেগ নিয়ে লেখা। আমার খুব কাছের মানুষের উৎসাহে ‘গুলনেহার’ উপন্যাসটি লিখেছি। নতুন জগতের নতুন মানুষ হিসেবে একুশে বইমেলায় আমার যাত্রা শুরু হচ্ছে।” তাম্রলিপি প্রকাশনী থেকে এটি প্রকাশ হবে।
পুতুলের প্রথম উপন্যাস
গায়িকা হিসেবে উঠে এলেও লেখালেখির অভ্যাসটা আগে থেকেই ছিল সাজিয়া সুলতানা পুতুলের। এর আগে অনেক গানের কথা নিজেই লিখেছেন। অন্যদিকে গত দুই বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার দুটি কবিতার বই। এবার তিনি এসেছেন উপন্যাস নিয়ে। এর নাম ‘একটি মনস্তাত্ত্বিক আত্মহনন ও তার পুতুলকাব্যিক প্রতিবেদন’। একটি মেয়ের গল্প উঠে আসবে এতে। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আজাদকে। বইটি উৎসর্গ বিষয়ে পুতুল জানান, ‘হুমায়ুন আজাদের প্রভাব আমার লেখালেখি বা ব্যক্তি জীবনেও আছে। আমার দুর্ভাগ্য যে, তার সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করতে পারিনি।’ ‘একটি মনস্তাত্ত্বিক আত্মহনন ও তার পুতুলকাব্যিক প্রতিবেদন’ বইটি এবারের একুশে বইমেলায় প্রিয়মুখ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
লাক্স তারকা শানুর ‘লাল এপিটাফ’
শানারেই দেবী শানু কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন গত বছর। ২০১৭ সালের অমর একুশে বইমেলায় অনন্যা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছিল তার প্রথম গ্রন্থ ‘নীল ফড়িং কাব্য’। যেখানে স্থান পেয়েছিল ৫৮টি কবিতা। এবার তিনি বইমেলায় নিয়ে আসছেন ‘লাল এপিটাফ’। বইটিতে থাকবে ৭০টি কবিতা। শানু বলেন, ‘প্রথম বই প্রকাশের পর থেকে সবাই খুব উৎসাহ দিয়েছেন। প্রথম বইয়ের মাধ্যমে সিটি-আনন্দ আলো পুরস্কারও পেয়েছি। এবার মেলায় নতুন বই নিয়ে হাজির হচ্ছি। এ বইয়ের সব কবিতা ২০১৭ সালের বইমেলার পর লেখা।’ ২০১৬ সাল থেকে শানুর কবিতা লেখা শুরু হলেও ছোটবেলা কেটেছে কবি পরিবারে। তার বাবা একে শেরাম একজন কবি। সেই সূত্রে শানু ছোটবেলা থেকেই কবিতা খুব পড়তেন, আবৃত্তি করতেন। গল্প-উপন্যাসও লিখছেন জানিয়ে শানু বলেন, ‘গল্প ও উপন্যাসের প্রতি আলাদা টান রয়েছে। ২০১৯ সালের বইমেলায় একটা উপন্যাস প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে।’
তারা ঝিলমিল প্রতিবেদক