চিরতরুণ নোবেল

তারা ঝিলমিল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেতা আদিল হোসেন নোবেল।
শুধু মডেলিং করেই নাটক সিনেমার তারকাদের মতোই ভক্তদের আদর্শ হওয়া যায় তার প্রমাণ অনেক আগেই দিয়েছেন জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেতা আদিল হোসেন নোবেল।
বর্তমান প্রজন্মের বেশিরভাগ মডেলকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনার আদর্শ কে? অথবা আপনার প্রিয় মডেল কে? উত্তরে অনেকেই যে নামটি বলেন তিনি ‘নোবেল’। অথচ, নোবেল কখনও ভাবেননি এতটা জনপ্রিয় হবেন! কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় তাকে দেখা যাবে সেটাও কল্পনা করেননি। বাস্তব জীবনে মানুষের যেমন লক্ষ্য থাকে কিছু হওয়ার, সেখানেও নোবেল মডেল শব্দটি ব্যবহার করেননি। তবুও তিনি আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেল। এ প্রজন্মের মডেলদের আইকন।
নব্বই দশকের শুরুর দিকে ‘লোনলি ডে, লোনলি নাইট’ শিরোনামের একটি বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েই দর্শকদের সামনে আসেন তিনি। তবে তার করা প্রথম বিজ্ঞাপন ছিল কোমলপানীয় স্প্রাইটের। আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় নির্মিত এ বিজ্ঞাপনটি প্রচার হয়নি। পরবর্তী সময়ে একই নির্দেশকের আজাদ বলপেনের বিজ্ঞাপন করে বেশ আলোচিত হন। এরপর বাকিটা ইতিহাস।
সিনেমা, নাটক কিংবা মিউজিক ভিডিওর বাইরে মডেলিং জগতেও যে জনপ্রিয় জুটি গড়া যায় সেটার প্রমাণও দিয়েছেন নোবেল। জুটি বেঁধেছেন সাদিয়া ইসলাম মৌয়ের সঙ্গে। এছাড়া তানিয়া, সুইটি, তিশার সঙ্গেও সফল জুটি ছিল তার। মডেলিং জগতের বাইরে অভিনয়েও তিনি সুপরিচিত। তবে তা ছিল নির্মাতাদের অনুরোধে এবং এর সংখ্যা হাতেগোনা। ‘প্রাচীর পেরিয়ে’ ছিল তার অভিনীত প্রথম টিভি নাটক। নাটকে অভিনয় প্রসঙ্গে নোবেল বলেন, ‘নাটকে অভিনয়ের ইচ্ছা ছিল না আমার। নির্মাতাদের অনুরোধে অভিনয় করি। তবে দুটি বিষয় অবশ্যই আমার মাথায় থাকে। প্রথমত ভালো গল্প হলে আর দ্বিতীয়ত চাকরির বাইরে হাতে সময় থাকলে। আগামী ঈদ উপলক্ষে একটি নাটকে অভিনয় করব। এ নিয়ে কথাও হয়েছে।’
জনপ্রিয় এ মডেলের সর্বশেষ কাজ ছিল গত জানুয়ারি মাসে। একটি অভিজাত কোম্পানির তেলের বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করেন তিনি। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এ মডেল ও অভিনেতার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি অনীহা ছিল। সাড়া জাগানো ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার অনুরোধ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি তাও ফিরিয়ে দেন।
এ প্রসঙ্গে নোবেল বলেন, “অভিনয় করার ইচ্ছা থাকতে হয় এবং ভেতর থেকে আসতে হয়। জোর করে কোনো কিছু হয় না। আমি কখনও চাইনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করব। মনমানসিকতাও ছিল না। ভবিষ্যতেও চলচ্চিত্রে অভিনয় করব না। আমি আর ইমন (প্রয়াত সালমান শাহ) একসঙ্গেই মডেলিং শুরু করি। সে যখন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি করে হিট হয়ে যায়, তারপর একদিন আমাকে বলে, তুমি তো অভিনয় করলে না, না হয় আজ আমার জায়গায় তুমি থাকতে। আমি তাকে দুষ্টুমি করে বলেছিলাম, দোস্ত আমি অভিনয় করলে তো তুমি আজ এত জনপ্রিয় হতে পারতে না।”
মডেলিং ও অভিনয়ের পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতিও যে নোবেলের ভালো লাগা এবং ভালোবাসা রয়েছে, তা অনেকের কাছে অজানা। ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহের কথা জানতে চাইলে নোবেল বলেন, ‘আমি যখন চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ি তখন থেকেই ক্রিকেটের সঙ্গে সখ্য আমার। সে সময় স্কুল ক্রিকেট লিগ শুরু হয়। সেখানেই বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেটে জড়িত হওয়া।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে ভর্তি হওয়ার পর একটি দল গঠন করলাম। চট্টগ্রামের বাইরেও খেলতে যেতাম। এ ছাড়া আন্তঃকলেজ বিভিন্ন ম্যাচ খেলেছি আমি।’ নোবেল গান গাইতে পারেন তা অনেকে হয়তো শুনেছেন।
কিন্তু তিনি যে গানের কথা লিখেছেন এবং তাতে সুর করেছেন তা অনেকে হয়তো জানেন না। তিনি নিজেও কখনও সেটি জানাননি। এ প্রসঙ্গে নোবেল বলেন, ‘এটি কখনও জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি।
কিন্তু আজ এমনভাবে গানের প্রসঙ্গটি চলে এলো যে না বলে থাকতে পারলাম না।’ নোবেলের কথা ও সুরে একটি কোমলপানিয়ের বিজ্ঞাপনচিত্রের সঙ্গীতায়োজন করেছিলেন প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চু। নোবেলকে প্রথম মঞ্চেও গান করান তিনি। এ প্রসঙ্গে নোবেল বলেন, “এইচএসবিসি ব্যাংকের বার্ষিক একটি অনুষ্ঠানে গান করছিল এলআরবি।
হঠাৎ বাচ্চু ভাই ঘোষণা দিয়ে বললেন, এখন মঞ্চে গান করবে আমার ছোট ভাই নোবেল। সেদিন এলআরবির ‘এই রুপালি গিটার’ গানটি পরিবেশন করি। আমি শাকিলা জাফর আপার সঙ্গেও টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে গান করি। শিগগিরই বাচ্চু ভাইয়ের ‘এ ঘুম ভাঙা শহরে’ গানটি নতুন সঙ্গীতায়োজনে আমি গাইব।” মৌলিক কোনো গান করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো পেশাদার শিল্পী নই। তাই কখনও সাহস করিনি মৌলিক গান করার। তবে ইচ্ছা রয়েছে সামনে মৌলিক গান করব। এ নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছি।’
দুই যুগের কাছাকাছি সময় পার করলেও বাংলাদেশের মডেলিং জগতে নোবেলের মতো কেউ শরীরের ফিটনেস ধরে রাখতে পারেননি। এখনও চিরতরুণ হয়ে আছেন তিনি। কীভাবে নিজকে এখনও এত সতেজ রাখতে পারছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা করে জীবনযাপন করা আমার পছন্দ। প্রতিদিন ব্যায়াম, সুইমিং, জিম করি। প্রতিদিন সঠিক সময় খাওয়া, অফিস করা ছাড়াও দৈনিন্দন জীবনে আমার একটি রুটিন রয়েছে- এ রুটিন অনুযায়ী আমি কাজ করি।’