মানুষের জন্য কিছু করা সুখের : টেইলর সুইফট
সবশেষ আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে ‘আর্টিস্ট অব দ্য ইয়ার’ হয়ে নতুন করে আলোচনায় আছেন টেইলর সুইফট। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত আসরে দুটো ট্রফি জিতেছেন তিনি। লিখেছেন-
সাব্বিন হাসান
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভক্তদের ভোটের ভিত্তিতে চূড়ান্ত বিজয়ীকে নির্বাচিত করা হয়। অনবদ্য রেকর্ড গড়ে ষষ্ঠবারের মতো আর্টিস্ট অব দ্য ইয়ার হয়েছেন সুইফট। অনুষ্ঠানে অবশ্য সরাসরি তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তার লকডাউন অ্যালবাম ‘ফোকলোর’-এর প্রতি ভক্তদের উৎসাহের জন্য তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সারা বিশ্বে সুইফট নামেই বিখ্যাত। পুরো নাম ‘টেইলর সুইফট’। জন্ম ১৩ ডিসেম্বর ১৯৮৯। জন্মস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে। সংগীত দুনিয়ার শিরোনাম হতে তিনি যেন বরাবরই পারদর্শী। আছেন ক্যারিয়ারের তুঙ্গে। বাবা স্কট সুইফট। যিনি পেশায় একজন শেয়ার ব্যবসায়ী। মা অ্যান্ড্রি। সুইফটের একটি ছোট ভাই আছে। নাম অস্টিন। সুইফট যখন চতুর্থ শ্রেণিতে তখন জাতীয় পর্যায়ে ‘মনস্টার ইন মাই ক্লোসেট’ কবিতা আবৃতিতে পুরস্কার অর্জন করেন।
কারাওকেতে সুইফটের কৃতিত্ব দেখে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ক্রিক ক্রেমার তার মাকে কান্ট্রি সংগীতে সুইফটকে তালিম দিতে বলেন। এরপর কান্ট্রি সংগীতে সুইফট অসামান্য নৈপুণ্য দেখায়। এরপর থেকেই সুইফট স্থানীয় অনুষ্ঠান ও সংগীতের আসরে নিয়মিত কান্ট্রি সংগীত গাইতেন। তার প্রথম আলোচিত সংগীতানুষ্ঠান ছিল একটি মেলাতে।
সংগীত জীবনের শুরুতে সুইফট এক কম্পিউটার মিস্ত্রির কাছে গিটারের কর্ড বাজানো শেখেন। এরপর সে তার প্রথম গান ‘লাকি ইউ’ রচনা করেন। স্কুলের প্রতি আগ্রহ না থাকলেও তিনি নিয়মিত গান লিখতেন। এজন্য স্কুলের বাচ্চারা তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে এমনটা ভেবে সুইফট তাদেরকে নিয়েও গান লিখতেন। কানাডিয়ান কান্ট্রি সংগীতশিল্পী শানায়া টোয়েইন সুইফটকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। তার দাদি ছিল পেশাদার অপেরা শিল্পী। তবে সুইফটের আগ্রহ ক্রমাগত কান্ট্রি সংগীতের দিকে ঝুঁকতে থাকে। খ্যাতিমান কান্ট্রি সংগীতশিল্পী প্যাটসি ক্লাইনের বিশেষ ভক্ত ছিল সুইফট।
সুইফট ১১ বছর বয়সে তার কারাওকে দিয়ে গাওয়া গান প্রচারের উদ্দেশ্য কোনো রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির প্রত্যাশায় প্রথম নাশভিলে যায়। শহরের কোনো মিউজিক কোম্পানিই তার গান নেয় না। সবাই ফিরিয়ে দেয়। অবশেষে পেনসিলভানিয়াতে ফেরার পর সুইফট ইউএস ওপেন টেনিস টুর্নামেন্টে গান গাওয়ার সুযোগ পান। এ অনুষ্ঠানে সুইফট জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। যা উপস্থিত শ্রোতাদের মুদ্ধ করে। ১২ বছর বয়সে সুইফট ১২ স্ট্রিং-এর গিটারে গান গাওয়া শুরু করেন।
সঙ্গে চলে গান লেখাও। বয়স যখন ১৪ তখন তার পরিবার নাশিভিলের উপশহরে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। নাশভিলে এসে সুইফট স্কট বার্কেটের নজরে আসেন। স্কট তার সদ্য প্রতিষ্ঠিত রেকর্ড কোম্পানি বিগ মেশিন রেকর্ডের সঙ্গে সুইফটকে চুক্তিবদ্ধ করে। ১৪ বছর বয়সে সুইফটকে সনি মিউজিক পাবলিশিং গ্রুপ ভাড়া করে। সুইফটই সবচেয়ে কম বয়সি যিনি সনি মিউজিকের এ সুযোগ পান।
সিএমএ অ্যাওয়ার্ডে বর্ষসেরা গান নির্বাচিত হয় সুইফটের লেখা আলোচিত ‘বেটার ম্যান’ গানটি। তার লিটল বিগ টাউন অ্যালবামের এ গানটির মিউজিক ভিডিওটিও বেশ সাড়া ফেলে। গানটি ইউটিউবে দেখা হয় প্রায় সাড়ে চার কোটিবার।
সুইফট তার অ্যালবাম ‘রেপুটেশন’ প্রকাশ করেন। রেপুটেশন সুইফটের স্টুডিও অ্যালবাম। এতে মোট ১৫টি গান আছে। নির্ধারিত সময়ের তিন দিন আগেই অবমুক্ত করা হয় রেপুটেশন। কেন এমন করলেন এ বিষয়ে কিছুই না জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মার্কিন এ গায়িকা লিখেছেন, তিন দিন আগেই রেপুটেশন চলে এল। সুইফট খুবই সরল মনের। যেমন ক্যান্সারে আক্রান্তদের খবর জানলে তিনি নিজেই ফোন করে সাহস জোগান। নিজের ২৪তম জন্মদিনে এক লাখ ডলার দিয়েছেন আর্থিক সংকটে পড়া সংগীতশিল্পীদের। ডু সামথিং ডট ওরগের তালিকায় একেবারে শীর্ষে উঠে আসে সুইফটের নাম।
সুইফটের ‘লাভ স্টোরি’ গানটি কান্ট্রি এবং পপ সংগীতের তালিকার বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। মুক্তির সাত দিনেই ইন্টারনেটে ১ লাখ ২৯ হাজার কপি বিক্রি হয় অ্যালবামটি। অনলাইনে কোনো কান্ট্রি সংগীতের অ্যালবামের মধ্যে এটি রেকর্ড সৃষ্টি করে।
সুইফট মানেই নতুন উন্মাদনা। আর অনলাইনে রেকর্ড গড়ার মহড়া। ভক্তদের কাছে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি সংগীতশিল্পীদের সমস্যার পাশে দাঁড়াতেও পিছু পা হন না তিনি। ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য সুইফটের আছে কঠিন মমতা। সুযোগ পেলেই তিনি কোনো না কোনো ক্যান্সার আক্রান্তের সঙ্গে আলাপ করেন। জীবন কঠিন যুদ্ধক্ষেত্র। পথ চলতে হতাশা আসবে। তবে দমে যেতে নেই। অন্যের জন্য কিছু করা এটাই যেন সুইফটের আত্মবিশ্বাসকে উজ্জীবিত করে রাখে।