হোগলা পাতায় স্বপ্ন বোনেন ওরা
মো. জসিম জনি
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হোগলা পাতা দিয়ে বিছানা বুনছেন কনিকা রানী ও মমতা রানী
ভোলার লালমোহনে চরভূতা ইউনিয়নের নমগ্রাম, কর্তারহাট, গজারিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০০ নারী হোগলা পাতার পাটি তৈরি করেন। এ আয় দিয়েই চলে তাদের সংসার। ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিছানায় হোগলা পাতার পাটির ব্যবহার হয়। এছাড়া নদীর মাছ ঢাকায় পাঠানোর জন্য বড় প্যাকেট করতে হোগলা পাটির বিছানা ব্যবহার করা হয়। ওয়াজ মাহফিলেও বসার জন্য হোগলা পাটির বিছানা ব্যবহার হয়।
সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে হোগলা পাতার পাটি বুনে পরিবারে বাড়তি আয়ের জোগান দেন এ এলাকার নারীরা। হোগলা শিল্পের সঙ্গে জড়িত কনিকা রানী। ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের নমগ্রাম গ্রামে তার বাড়ি। তেলি বাড়ি নামে পরিচিত বাসু দেব বালার স্ত্রী। বাসু দেব বালা একজন দিনমজুর। দৈনিক মজুরিতে অন্যের ক্ষেতখামারে কাজ করেন তিনি। এতে যা পান তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তাই স্বামীকে সহযোগিতা করতে হোগলা পাতা দিয়ে বিছানা তৈরির উদ্যোগ নেন কনিকা রানী।
এ প্রসঙ্গে কনিকা রানী বলেন, স্বামীর একার আয়ে সংসারের সব খরচ চালানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। সংসারের কাজ সামলিয়ে দিনে ৩-৪টি বিছানা বানাতে পারি। এ থেকে আয় হয় ২০০ টাকা। প্রতিটি বিছানা তৈরিতে খরচ পড়ে ১০০ টাকা। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হোগলা পাতা সংগ্রহ করি। প্রতি আঁটি হোগলা পাতার দাম পড়ে সাড়ে ৩০০ টাকার মতো। এ দিয়ে ১০ থেকে ১২টি বিছানা তৈরি করতে পারি।
এ দিয়ে সংসারের খরচ চালাই। দুই মেয়ে আর স্বামী-স্ত্রী নিয়েই আমাদের সংসার। বড় মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট মেয়ে এখনও ভর্তি হয়নি বিদ্যালয়ে। ছোট মেয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে সংসারের খরচ আরও বাড়বে। স্বামীকে সহযোগিতা করতেই মূলত এ বিছানা তৈরির কাজ করছি। যা আয় হয় তা দিয়ে কিছুটা হলেও সংসারের উপকারে আসছে।
একই এলাকার মমতা রানীও হোগলা পাতা দিয়ে পাটি বোনেন। তার স্বামী গোপালচন্দ্র মালও একজন দিনমজুর। কাজ করেন অন্যের ক্ষেতখামারে। যা দিয়ে তেমন ভালো করে চলে না তাদের ৪ সদস্যের সংসার। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। স্বামীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে মমতা রানীও হোগলা পাতা দিয়ে বিছানা তৈরির কাজ বেছে নেন। তিনি দিনে ৩টি বিছানা তৈরি করতে পারেন। যা থেকে আয় হয় ১৫০ টাকা। প্রতিটি বিছানা তৈরিতে যা ব্যয় হয় তা বাদ দিয়ে লাভের অংশ সংসারে ব্যয় করেন।
মমতা রানীর মতে, বছরে ৬ মাস হোগলা পাতা দিয়ে বিছানা তৈরির কাজ করি। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে কিছুটা হলেও পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে পারছি।
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. নূর নবী বলেন, যারা হোগলা পাতা শিল্পের সঙ্গে জড়িত তাদের ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় এনে এ শিল্পকে আরও এগিয়ে নেয়া সম্ভব।