গরমে জ্বর থেকে মুক্তির উপায়
ডা. চৌধুরী সাইফুল আলম বেগ
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গ্রীষ্মের দাবদাহে শরীর থেকে হু হু করে ঘাম বেরুচ্ছে। আর এ ঘাম গায়ে বসেই হচ্ছে জ্বর। ঘরোয়া পদ্ধতিতে এর থেকে মুক্তি কীভাবে? দাবদাহ পরিস্থিতির থেকে কিছুতেই নিস্তার মিলছে না! প্রবল গরমে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। পাখার থেকে এক হাত দূরে গেলেই ঘেমে নেয়ে স্নান। এমন পরিস্থিতিতে শরীর খারাপ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আর হচ্ছেও তাই। ঘরে ঘরে বাড়ছে জ্বরের প্রকোপ। এ অবস্থায় সুস্থ থাকতে কিছু ঘরোয়া টোটকার সাহায্য নিতেই পারেন। এখন আবহাওয়ায় হিউমিডিটি বা আর্দ্রতা অনেকটাই বেশি। এ কারণেই মূলত ভ্যাপসা গরমের শিকার হচ্ছেন সবাই। এ পরিস্থিতিতে কলের পানির মতোই শরীর থেকে ঘাম বেরুচ্ছে। আর সেই ঘাম গায়েই শুকাচ্ছে। এর থেকেই তৈরি হচ্ছে একাধিক সমস্যা। বিশেষত, জ্বরের খপ্পরে পড়ছেন অনেকেই। মুশকিল হলো, জ্বর হলেই প্যারাসিটামলের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক খেতে শুরু করে দেন অনেকে। আর এটাই মূল সমস্যার কারণ। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এ অ্যান্টিবায়োটিক খেলে জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি ড্রাগ রেজিস্টেন্স তৈরি হয়। তাই জ্বর কমাতে অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে ঘরোয়া কিছু টোটকায় বিশ্বাস রাখুন। এতেই শরীরের তাপমাত্রা কমবে।
* জলপট্টিই প্রধান অস্ত্র
খুব জ্বর এলে জলপট্টিই হতে পারে প্রধান অস্ত্র। এক্ষেত্রে ঠান্ডা পানির কাপড় ভিজিয়ে তা কপালে দিতে পারেন। এতেই শরীর ঠান্ডা হয়, জ্বরও কমবে। এক্ষেত্রে কপালের পাশাপাশি গোটা শরীরই পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে মুছে নিতে পারেন। এতে দেহের তাপমাত্রা সহজেই কমবে। গবেষণায় দেখা গেছে, জলপট্টি দেওয়ার মাধ্যমেই জ্বরের মতো সমস্যাকে প্রশমিত করা যায়। বিশেষত, ভাইরাল ফিবারে জলপট্টি দারুণ কার্যকরী। তাই এ পুরোনো অস্ত্রের কথা ভুলে যাবেন না যেন!
* প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খান
জ্বরে দেহে পানির ঘাটতি হতে পারে। এ সমস্যার নাম ডিহাইড্রেশন। তাই এ সময় দেহে পানির পরিমিত জোগান থাকা জরুরি। সেই কারণে জ্বর হলেই পানি পানের পরিমাণ কিছুটা বাড়াতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পানির পাশাপাশি জুস, স্পোর্টস ড্রিংকস, সুপ এবং চা-ও অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া প্রয়োজন হলে ওআরএস খাওয়া যেতে পারে। আর যদি অর্থ সংকুলান হয় তাহলে দিনে একটা ডাবের পানি পান করুন। এতেই দ্রুত সেরে উঠবেন।
* পর্যাপ্ত বিশাম নিন
এখন ওয়ার্ক ফ্রম হোমের নামে জ্বরের সময়ও বাড়ি থেকে অনেকে কাজ করেন। বেঁচে থাকলে আরও বহুদিন চাকরি করতে পারবেন। তাই কাজের চক্করে নিজের শরীরের জলাঞ্জলি দেবেন না। এতে ক্ষতির আশঙ্কাই কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জ্বরের সময় বিশ্রাম নিলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়। তাই কয়েকটা দিন শুয়ে বসে কাটাতে পারলে ভালো। এ ছাড়া দিনে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম হলো বাধ্যতামূলক। এতেই সুস্থ থাকতে পারবেন।
* আদা চা হতে পারে মোক্ষম দাওয়াই
আদায় রয়েছে জিজ্ঞেরল নামক একটি উপাদান। এটি হলো আদার অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এ উপাদান কিন্তু জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা কমাতে সিদ্ধহস্ত। এক্ষেত্রে চায়ে কিছুটা পরিমাণে আদা মিশিয়ে দিন। তারপর সেই চা পান করুন। এভাবে দুই কাপ আদা চা খেতে পারলেই ভালো ফল পাবেন। তবে দিনে দুই কাপের বেশি চা খাবেন না। এতে উপকারের বদলে সমস্যাও বাড়তে পারে। এমনকি ঘুমের সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া জ্বরের সময় ফল, শাক-সবজি খাওয়াও বাড়াতে হবে। তবেই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন।
* টেস্ট জরুরি
এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জ্বর না কমলে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মাধ্যমেই সঠিক রোগ ধরা পড়বে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত সেরে উঠতে পারবেন।
লেখক : মেডিকেল এডুকেটর অ্যান্ড জিপি এক্সামিনার, সিনিয়র জিপি, ওয়াল্টার্স রোড মেডিকেল সেন্টার, ব্ল্যাকটউন, নিউ সাউথ ওয়েলস, অষ্ট্রেলিয়া।