Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

জরায়ুমুখের পরীক্ষা করে ক্যান্সার থেকে দূরে থাকুন

Icon

ডা. রেজাউল করিম কাজল

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২১, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নারী দেহের প্রজননতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের নাম জরায়ু বা ইউটেরাস (Uterus)। জরায়ুর নিচের দিকের অংশকে জরায়ুমুখ বা সারভিকস্ (Cervix) বলে। নারীদেহে যেসব স্থানে ক্যান্সার হয়, তার মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সার (Cervical Cancer) অন্যতম। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় আর ৬ হাজার মৃত্যুবরণ করে। নিয়মিত জরায়ুমুখ পরীক্ষা করলে প্রাথমিক অবস্থাতেই এ ক্যান্সারের পূর্বলক্ষণ ধরা পড়ে এবং এ ক্যান্সার থেকে শতভাগ মুক্তি পাওয়া যায়, এমনকি অপারেশন করে জরায়ু ফেলতেও হয় না। নারীদের জরায়ুমুখ পরীক্ষা করার পদ্ধতির নাম কলপোস্কপি।

কীভাবে কলপোস্কপি পরীক্ষা করা হয়

একজন নারীরোগ বিশেষজ্ঞ হাসপাতাল বা তার ব্যক্তিগত চেম্বারে কলপোস্কপি পরীক্ষা করে থাকেন। কলপোস্কপ (Colposcope) নামের একটি বিশেষ ক্যামেরার মাধ্যমে জরায়ুমুখ ও যোনিপথ অতি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। কোনো জায়গা অস্বাভাবিক মনে হলে, সেখান থেকে কিছু কোষ বা সেল নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। একে প্যাপ স্মেয়ার (Pap smear) বলে। প্রয়োজন হলে সন্দেহজনক স্থান থেকে যন্ত্রের সাহায্যে চিমটি দিয়ে কোষ কলা (Tissue) নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। একে বায়োপসি (Biopsy) বলা হয়। কলপোস্কপি পরীক্ষায় সাধারণত নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো ধরা পড়ে।

* জরায়ুমুখ বা সারভিক্স-এর ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণ।

* যোনিপথে/যোনিমুখে ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণ।

* জরায়ুমুখের প্রদাহ।

* যৌন রোগ।

কী কারণে কলপোস্কপি পরীক্ষার উপদেশ দেওয়া হয়

* বিবাহিত নারী

* যাদের দীর্ঘদিন ধরে তলপেটে ব্যথা।

* দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব/অনিয়মিত রক্তস্রাব।

* চিকিৎসক খালি চোখে দেখে জরায়ুমুখে কোনো সমস্যা আছে সন্দেহ করলে।

* জরায়ুমুখের প্রাথমিক পরীক্ষা যেমন ভায়া/প্যাপস স্মেয়ার-এর রিপোর্টে সন্দেহ হলে।

* এইচপিভি (HPV) বা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস টেস্ট পজিটিভ হলে।

* জরায়ুমুখে দীর্ঘদিন ইনফেকশন থাকলে।

* নিজের অথবা স্বামীর একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে।

কলপোস্কপি পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি

* সাধারণত মাসিক চলাকালীন কলপোস্কপি পরীক্ষা করা হয় না।

* মাসিকের রাস্তায় কোনো ওষুধ ব্যবহার করলে তা ২-৩ দিন আগে বন্ধ করতে হয়।

* ২-৩ দিন স্বামী সহবাস হতে বিরত থাকতে হয়।

* বায়োপসি নেওয়ার প্রয়োজন হলে ইকোস্প্রিন (Ecosprin) জাতীয় ওষুধ ৭ দিন আগে বন্ধ করতে হয়।

* খালি পেট/ভরা পেট এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

কলপোস্কপি করতে কতক্ষণ সময় লাগে

কলপোস্কপি পরীক্ষা করতে ২০-৩০ মিনিট সময় লাগে। তবে বায়োপসি নেওয়ার প্রয়োজন হলে আরেকটু বেশি সময় লাগতে পারে।

পরীক্ষায় কোনো ব্যথা বেদনা হয় কি

কলপোস্কপি কোনো কষ্টদায়ক পরীক্ষা নয়। কারো কারো সামান্য অস্বস্তি লাগতে পারে। তবে বায়োপসি নেওয়া হলে অল্প ব্যথা বা সামান্য রক্তক্ষরণ হতে পারে, যার জন্য কয়েকদিন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

পরীক্ষায় কোনো ঝুঁকি আছে কি

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কলপোস্কপি পরীক্ষা করা হয় এবং পরীক্ষায় ব্যবহৃত সব ধরনের যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করা হয়। তাই এই পরীক্ষায় কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।

কলপোস্কপি পরীক্ষার পর করণীয়

কলপোস্কপি পরীক্ষার পর পরই বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যাওয়া যায়। বায়োপসি নেওয়া হলে দু-একদিন মাসিকের রাস্তায় ব্যথা, সামান্য রক্তস্রাব বা গাঢ় রঙের স্রাব যেতে পারে। এজন্য এক সপ্তাহের মতো স্বামী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হয়। চিকিৎসক কিছু ওষুধও দিতে পারেন।

কলপোস্কপি রিপোর্ট পেতে কত সময় লাগে

কলপোস্কপি পরীক্ষার রিপোর্ট সঙ্গে সঙ্গেই হাতে পাওয়া যায়। প্যাপ স্মেয়ার বা বায়োপসি পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।

কলপোস্কপি পরীক্ষার রিপোর্ট অস্বাভাবিক মানে কী

কলপোস্কপি পরীক্ষার রিপোর্ট অস্বাভাবিক মানে নিচের সমস্যাগুলোর যে কোনো একটি ধরা পড়েছে-

* জরায়ুমুখে প্রদাহ আছে।

* জরায়ুমুখে অস্বাভাবিক কোষ বা সেল পাওয়া গেছে। কোনো এক সময় এই কোষগুলো ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে, তাই আমরা এ অবস্থাকে ক্যান্সার-পূর্ববর্তী লক্ষণ বলে থাকি। যেগুলোকে রিপোর্টে CIN-I, CIN-II, CIN-III হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এগুলো ক্যান্সার নয়। এ কোষগুলো খুব সহজেই জরায়ুমুখ থেকে সরিয়ে ফেলে ক্যান্সার ঝুঁকি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকা যায়।

* খুব বিরল ক্ষেত্রে কলপোস্কপি পরীক্ষায় সরাসরি জরায়ুমুখ ক্যান্সার ধরা পড়তে পারে। তার মানে এই মহিলা সচেতনতার অভাবে কখনোই আগে জরায়ুমুখ পরীক্ষা করাননি।

কলপোস্কপি পরীক্ষার রিপোর্ট অস্বাভাবিক হলে করণীয়

কলপোস্কপি পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী চিকিৎসক যথাযথ পরামর্শ দিবেন। কলপোস্কপি পরীক্ষায় যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা যায় তা চিকিৎসা দিয়ে শতভাগ নিরাময় করা যায়।

কলপোস্কপি পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো মানে কী

কলপোস্কপি পরীক্ষার ভালো রিপোর্ট আপনার জরায়ুমুখের সুস্থতা নিশ্চিত করে। শুধু তাই নয়, ভালো রিপোর্ট মানে আপনার যোনিপথ ও যোনিমুখেও কোনো সমস্যা নেই।

কলপোস্কপি পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো হলে আবার কবে পরীক্ষা করতে হবে

একবার কলপোস্কপি পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো এলে আগামী তিন বছরের মধ্যে আপনার জরায়ুমুখে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা নেই। কাজেই তিন বছর পর আবার পরীক্ষা করার উপদেশ দেওয়া হয়।

অশিক্ষা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশের নারীরা জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। নারীরা সংকোচের কারণে রোগের লক্ষণগুলো বেশিরভাগ সময় লুকিয়ে রাখেন। নিয়মিত জরায়ুমুখ পরীক্ষা করে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় বা রোগের পূর্বলক্ষণ সনাক্ত করা গেলে সামান্য চিকিৎসা দিয়ে জরায়ুমুখ ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকা যায়।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম