Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

প্রকৃতি

এ সময়ে মুগ্ধ করা ফুল

Icon

চয়ন বিকাশ ভদ্র

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গ্রীষ্মের রুক্ষ খরতাপে সবার মন-প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, ঠিক তখনই আগমন ঘটে বর্ষার। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে ওঠে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ ছোঁয়ায়। রৌদ্রতপ্ত ধরণিতে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে এসেছে বর্ষা। বৃষ্টিস্নাত পৃথিবী হবে সুজলা, শ্যামলা। সবুজ সজীবতায় গাছপালা, বন-বনানী প্রাণ ফিরে পায়। অনেক ধরনের ফুল ফোটে এ বর্ষায়। বনে, বাগানে, টবে এ সময় ফোটে মনমুগ্ধকর সব ফুল। এমনি কয়েকটি বর্ষার ফুলের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

কদম

বর্ষার সঙ্গে কদমের সম্পর্ক নিবিড়। কদমের সঙ্গে রয়েছে রাধা ও কৃষ্ণের সম্পর্ক। বর্ণে, গন্ধে এ গাছটি বাঙালির খুব প্রিয়। বর্ষার বাতাসে ভেসে আসা কদমের গন্ধ মনকে আকুল করে তোলে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Neolamarckia cadamba, এটি Rubiaceae পরিবারের সদস্য। কাণ্ড সোজা, শাখা-প্রশাখা ছড়ানো। গাছ ১৮ মিটার উঁচু হয়। বাকল ধূসর। পাতা সরল, হৃৎপিণ্ড আকৃতির, লম্বাটে, বড় আকারের, ডিম্বাকার, চকচকে এবং উজ্জ্বল সবুজ। ফুল সাদাভ হলুদ। আদিনিবাস ভারত ও চীন। কদমের আরেক নাম নীপ। কদম বড় আকারের, বহু শাখাযুক্ত বৃক্ষ। ফুল ক্ষুদ্রাকার, সবুজাভ হলুদ, সুগন্ধী। এর ফল কাঠবিড়ালি ও বাদুরের প্রিয় খাদ্য। জুন থেকে আগস্টে ফুল ফোটে। আদি নিবাস দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া।

কামিনী

কামিনী ছোট আকারের চির সবুজ গুল্ম। কাণ্ড বেশি দীর্ঘ হয় না। পাতা লম্বা ও ডিম্বাকৃতির, গাঢ় সবুজ। ফুল গুচ্ছবদ্ধ হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Murraya paniculata, এটি Rutaceae পরিবারের উদ্ভিদ। ফুলের তোড়া বানাতে কামিনীর ডাল অতুলনীয়। পাতার রস আমাশয়ে উপকারী। আদি নিবাস মালয়েশিয়া ও চীন। কামিনীকে ছেঁটে দিলে ইচ্ছামতো বাড়তে পারে না। পাতা কদবেলের পাতার মতো ছোট ছোট এবং ঘন। গাছ ১০-১৫ ফুট উঁচু হয়। ফুল কমলা লেবুর ফুলের মতো দেখতে।

দোলনচাঁপা

দোলনচাঁপা বহু বর্ষজীবী বীরুৎজাতীয় উদ্ভিদ। কাণ্ড রাইজোমজাতীয়। রাইজোম থেকে ভৌম পুষ্পদণ্ড বের হয়। পাতা লম্বাটে, উপবৃত্তাকৃতির। পাতার বোঁটা কাণ্ডকে বেষ্টন করে রাখে। বর্ষাকালে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং প্রতিটি ভৌম পুষ্পদণ্ডের মাথায় থোকায় থোকায় সুগন্ধী পুষ্প মঞ্জরি বের হয়। বর্ষার শেষ দিকে গাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। দোলনচাঁপার বৈজ্ঞানিক নাম Hedzchium coronarium, এটি Zingiberaceae পরিবারের উদ্ভিদ। আদি নিবাস উত্তর ভারত। ফুল ফোটে সন্ধ্যাবেলায় এবং সকালে শুকিয়ে যায়। ভূনিম্নস্থ রাইজোম তুলে টুকরা করে কেটে চারা তৈরি করা যায়। গাছ পরিণত হলে ৩-৪ বছর পর পর তা নতুন করে লাগাতে হয়। গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়।

কেয়া

কেয়া গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। আরেক নাম কেতকী। এর বৈজ্ঞানিক নাম Pandanus tectorius, এটি Pandanaceae পরিবারের সদস্য। কাণ্ডের গা থেকে শাখা-প্রশাখা বের হয়। পাতা পাঁচ থেকে সাত ফুট লম্বা, দুই থেকে তিন ইঞ্চি চওড়া, পাতার কিনারা করাতের মতো খাঁজকাটা। দেখতে অনেকটা আনারসের পাতার মতো। কাণ্ড সাদা রঙের ও সুগন্ধযুক্ত। ফল সাত থেকে আট ইঞ্চি লম্বা। জীবাণুনাশক হিসাবে এর ভূমিকা রয়েছে। হৃৎপিণ্ড ও যকৃতের জন্য উপকারী। কেয়ার ফুল সুগন্ধি, ফুলে মধু নেই কিন্তু ভ্রমর আকৃষ্ট হয়। ফল দেখতে আনারসের মতো। স্ত্রী পুষ্পগুলো পুংপুষ্প-এর তুলনায় আকারে ছোট হলেও সুগন্ধ বেশি। পুরুষ কেয়াকে বলে সিতকেতকী আর স্ত্রী কেয়াকে বলে স্বর্ণকেতকী।

টগর

টগর বড় আকারের গুল্ম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Tabernaemontana divaricata, এটি Apocynaceae পরিবারের উদ্ভিদ। গাছ উচ্চতায় দুই মিটার পর্যন্ত হতে পারে। পাতা উপবৃত্তাকৃতির, চকচকে নীলাভ সবুজ, কিনারা ঢেউ খেলানো। ফুল গুচ্ছবদ্ধভাবে শাখার অগ্রভাগে উৎপন্ন হয়। ফুল সাদা রঙের। যুগ্ম জাতের টগরের আকর্ষণীয় গন্ধ রয়েছে। গাছ খুব ঝোপালো হয়। এ উদ্ভিদ বর্ষাকালে বেশি ফুল দেয়।

রজনীগন্ধা

রজনীগন্ধা বীরুৎজাতীয় উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Polianthes tuberosa, এটি Agavaceae পরিবারের উদ্ভিদ। কাণ্ড ভূনিম্নস্থ টিউবার। রাইজোম থেকে পুষ্পদণ্ড লম্বভাবে বের হয়। দণ্ডের চারদিকে স্পাইকজাতীয় মঞ্জরিতে সাদা ফুল উৎপন্ন হয়। রাতে চমৎকার গন্ধে চারদিক আমোদিত করে বলেই এর নাম রজনীগন্ধা। টিউবার থেকে একগুচ্ছ ঘাসের মতো পাতা বের হয়। গাছ মারা গেলেও মাটির নিচের কন্দ থেকে যায়। বৃষ্টি শুরু হলে সেখান থেকে আবার পাতা ও পুষ্পদণ্ড বের হয়। আদি নিবাস মেক্সিকো।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম